অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ ও গঠনকে বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এ বিষয়ে করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এদিন হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদের করা লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন আদালত। এর আগে বুধবার শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন বেঞ্চ।

আদালতে আপিলকারীর পক্ষে নিজেই শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। অন্যদিকে ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত হওয়া লেখক ফিরোজ আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। ইন্টারভেনার হিসেবে আরও শুনানি করেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান। আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং উপদেষ্টারা শপথ নেন।

এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত বছরের ডিসেম্বরে হাইকোর্টে রিট করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট বেঞ্চ চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি রিটটি খারিজ করে দেয়। পরে সেই আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন তিনি।

রিট খারিজের রায়ে হাইকোর্ট বলেছিল, রাষ্ট্রপতি এক ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেশমূলক মতামত গ্রহণ করেছেন। এটি আইনি দলিল দ্বারা সমর্থিত এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন। পাশাপাশি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানকে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করে আদালত আশা ব্যক্ত করে—এই ঘটনাকে জনগণ বহু বছর ধরে সংরক্ষণ করে রাখবে।

সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির কাছে জরুরি জনস্বার্থে আইনি প্রশ্ন উত্থাপিত হলে সুপ্রিম কোর্ট থেকে উপদেষ্টামূলক মতামত নেওয়ার বিধান রয়েছে। রাষ্ট্রপতির প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ মতামত দিতে পারে এবং সেই মতে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা নিতে পারেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়, ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ রেফারেন্স পাঠান।

গত বছরের ৮ আগস্ট আপিল বিভাগ মতামত দিয়ে জানায়— রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের নিয়োগ দিতে পারবেন এবং তাদের শপথ পড়াতে পারবেন।

এমএইচএস