Logo

আইন ও বিচার

খুন ও হত্যা চেষ্টা শাস্তির পার্থক্য কোথায়?

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫১

খুন ও হত্যা চেষ্টা শাস্তির পার্থক্য কোথায়?

সমাজে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অপরাধপ্রবণতার প্রেক্ষাপটে খুন এবং খুনের চেষ্টার মতো গুরুতর অপরাধগুলো নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। বিশেষত, এই দুই অপরাধের শাস্তি কি একই হওয়া উচিত, নাকি বর্তমান আইন যথাযথভাবে দণ্ড নির্ধারণ করেছে- এ নিয়ে বিতর্ক প্রায়ই সামনে আসে। বাস্তবে, বাংলাদেশে প্রচলিত দণ্ডবিধি খুন এবং খুনের চেষ্টাকে একই ধরনের অপরাধ মনে করলেও তাদের শাস্তি এক নয়, এবং আইন এ দুটিকে ভিন্নভাবে বিবেচনা করে থাকে।

খুনের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি ৩০২ ধারা ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করার অপরাধকে সর্বোচ্চ জঘন্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তাই এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড- যা মানবজীবনের গুরুত্ব ও অপরাধের নির্মমতাকে প্রতিফলিত করে। খুনের শাস্তি কঠোর হওয়ার মূল উদ্দেশ্যই হলো সমাজে হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধে সর্বোচ্চ বার্তা পৌঁছে দেওয়া।

অন্যদিকে, খুনের চেষ্টা বা দণ্ডবিধি ৩০৭ ধারায় উল্লিখিত অপরাধটি হত্যার অভিপ্রায় থাকলেও ফলাফল অর্থাৎ মৃত্যু ঘটে না। ফলে আইন এটিকে পৃথক মাত্রার অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে। এ ক্ষেত্রে শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড, আর গুরুতর ক্ষতি হলে আজীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। যদিও উদ্দেশ্য একই, ফলাফলের ব্যাপক পার্থক্যের কারণেই শাস্তির মাত্রায় এই ভিন্নতা স্পষ্ট।

এটি সত্য যে সমাজে অপরাধ প্রতিরোধে কঠোর শাস্তি একটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তবুও আইনের মূলনীতি অনুযায়ী শাস্তি অপরাধের মাত্রা, উদ্দেশ্য ও ফলাফলের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হওয়া উচিত। সেই বিবেচনায় খুন ও খুনের চেষ্টার শাস্তি আলাদা হওয়া যুক্তিযুক্ত ও সঙ্গতিপূর্ণ।

আজকের সমাজে ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি ও অপরাধ দমনে কার্যকর বিচারব্যবস্থা অপরিহার্য। তাই আইনের এই সূ² পার্থক্যগুলো সম্পর্কে জনগণের সচেতন হওয়া জরুরি। অপরাধ প্রতিরোধ শুধু কঠোর শাস্তির ওপর নির্ভর করে না; এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিক শিক্ষা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দক্ষতা।

অতএব, খুন ও খুনের চেষ্টার শাস্তির পার্থক্য শুধু আইনি বিষয় নয়; এটি আমাদের সমাজব্যবস্থার মানবিকতা, ন্যায়বোধ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার প্রতিফলন। আইন তার নিজস্ব যুক্তি ও কাঠামোর মধ্য দিয়ে সঠিক বার্তা দিতে চায়- জীবন পবিত্র, এবং তাকে বিনষ্ট করার চেষ্টা কোনো অবস্থাতেই বরদাস্ত করা যায় না।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর