Logo

আইন ও বিচার

লিগাল নোটিশ

আইনগত ভিত্তি, প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২০

আইনগত ভিত্তি, প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা

লিগাল নোটিশ বা আইনগত নোটিশ হলো এমন একটি লিখিত নথি, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অন্য পক্ষকে একটি নির্দিষ্ট দাবি, অভিযোগ বা অধিকার সম্পর্কিত বিষয় পূর্বঘোষণা হিসেবে জানায়। 

এটি সাধারণত দেওয়ানি, বাণিজ্যিক, পারিবারিক ও শ্রম সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের আইনব্যবস্থায় লিগাল নোটিশ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাক-বিচারিক ধাপ হিসেবে বিবেচিত।

লিগাল নোটিশের আইনগত ভিত্তি :

বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে লিগাল নোটিশ পাঠানোর স্পষ্ট বিধান রয়েছে। 

উল্লেখযোগ্য আইনগুলো হলো: দেওয়ানি কার্যবিধি (Code of Civil Procedure, 1908) - ধারা ৮০, সরকার, সরকারি কর্মকর্তা বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার পূর্বে ধারা ৮০ অনুসারে অন্তত ২ মাস আগে লিগাল নোটিশ প্রদান বাধ্যতামূলক।

এর উদ্দেশ্য হলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত করা, আদালতের বাইরে সমস্যার সমাধানের সুযোগ সৃষ্টি করা

চুক্তি আইন (Contract Act, 1872) :

চুক্তি ভঙ্গ, বকেয়া পাওনা, সেবা প্রদান না করা বা প্রতারণাজনিত বিষয়ে মামলা করার আগে লিগাল নোটিশ পাঠানো একটি প্রচলিত আইনি রীতি। যদিও এই আইনে নির্দিষ্ট ধারা দিয়ে বাধ্যতামূলক করা হয়নি, আদালত প্রাক-নোটিশকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়।

দখল ও সম্পত্তি সংক্রান্ত আইন (Specific Relief Act, Transfer of Property Act) :

সম্পত্তির দখল, লিজ বাতিল, নোটিশ টু কুইট (Notice to Quit), ভাড়াটিয়া উচ্ছেদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিগাল নোটিশ প্রদান আইনি প্রক্রিয়া সহজ করে ও মামলার পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে।

শ্রম আইন (Bangladesh Labour Act, 2006) :  শ্রমিক ছাঁটাই, পাওনা আদায়, ক্ষতিপূরণ, বেআইনি বরখাস্ত ইত্যাদির ক্ষেত্রে লিগাল নোটিশের মাধ্যমে দাবি দাখিল করা প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি।

ব্যাংকিং ও বাণিজ্যিক আইন :

ঋণের টাকা আদায়, চেক প্রতারণা, বাণিজ্যিক চুক্তিভঙ্গ ইত্যাদিতে লিগাল নোটিশ একটি আনুষ্ঠানিক সতর্কীকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বিশেষ করে চেক ডিজঅনার মামলায় (Negotiable Instruments Act, 1881) ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ পাঠানো বাধ্যতামূলক।

লিগাল নোটিশ কেন গুরুত্বপূর্ণ? :

আদালতের বাইরে বিরোধ মীমাংসা সহজ হয়। অনেক সময় নোটিশ পাওয়ার পর অপর পক্ষ দাবি মেনে নেয় বা সমঝোতার উদ্যোগ নেয়। মামলা দায়েরের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। নোটিশের কপি আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। আইনগত অধিকার রক্ষার প্রাথমিক ধাপ। এক পক্ষ অপর পক্ষকে জানিয়ে দেয় যে অভিযোগটি গুরুতর এবং প্রয়োজন হলে মামলা হবে। আইনজীবীর মাধ্যমে সুসংহত দাবি উপস্থাপন। লিগাল নোটিশ সাধারণত অ্যাডভোকেটের লেটারহেডে পাঠানো হয়, যা দাবিকে আরও শক্তিশালী করে।

একটি লিগাল নোটিশে সাধারণত যা যা থাকে:

প্রেরকের নাম, ঠিকানা ও পরিচয়, প্রাপক বা বিবাদীর বিস্তারিত তথ্য, অভিযোগ বা দাবির স্পষ্ট বর্ণনা, আইন অনুযায়ী অধিকার ও দাবি উল্লেখ, নির্দিষ্ট সময়সীমা (সাধারণত ৭-৩০ দিন), আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সতর্কীকরণ, আইনজীবীর স্বাক্ষর। লিগাল নোটিশ বাংলাদেশের আইনব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বধাপ, যা বিচারব্যবস্থাকে চাপমুক্ত রাখতে এবং আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন আইন লিগাল নোটিশের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক। এজন্য কোনো ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক বিরোধ দেখা দিলে সঠিক আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নোটিশ প্রদান একটি বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ পদক্ষেপ। 

এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইনি প্রশ্ন ও উত্তর আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর