ইসলামি বিয়েতে উকিল বাপ: প্রয়োজন, প্রেক্ষাপট ও ভুল ধারণা
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩০
ইসলামী সমাজব্যবস্থায় বিবাহ কেবল একটি সামাজিক অনুষ্ঠান নয়; বরং এটি একটি ইবাদত, একটি দায়িত্ব এবং একটি চুক্তি। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতকে ঘিরে আমাদের সমাজে এমন কিছু আচার-অনুষ্ঠান দেখা যায়, যেগুলো ইসলামী আইনের মূল নীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও ভুল ধারণার কারণে বিতর্কের জন্ম দেয়।
তার মধ্যে অন্যতম হলো-বিয়েতে “উকিল বাপ” বা প্রতিনিধির উপস্থিতি। অনেকেই মনে করেন, উকিল বাপ একটি কেবলমাত্র আঞ্চলিক রীতি, যার সঙ্গে শরিয়তের কোনো সম্পর্ক নেই। আবার কেউ কেউ এটিকে বিয়ের একটি বাধ্যতামূলক অংশ মনে করেন। কিন্তু সত্য হলো- উকিল বাপের ধারণাটি ইসলামের ওয়ালি ও প্রতিনিধিত্বের নীতি থেকেই এসেছে; দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতিতে একে কেবল ভিন্ন নামে ডাকা হয়েছে।
ইসলামের মূলনীতি পরিষ্কার:
একজন নারীর নিকাহ বৈধ হতে হলে তার ওয়ালির সম্মতি ও উপস্থিতি অথবা তার নিয়োজিত প্রতিনিধির উপস্থিতি অপরিহার্য। কোরআনে অভিভাবকের দায়িত্বের কথা এসেছে, আর হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, ‘ওয়ালি ছাড়া কোনো নারীর নিকাহ বৈধ নয়।’ সেই ওয়ালিই তার অনুমোদিত কাউকে প্রতিনিধি করতে পারেন। এই প্রতিনিধিকেই আমাদের সমাজে ‘উকিল বাপ’ বলা হয়।
এক্ষেত্রে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয় তখনই, যখন কেউ মনে করেন যে ওয়ালি জীবিত থাকা সত্ত্বেও উকিল বাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিকাহের ক্ষমতা রাখেন। এটি ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। ওয়ালি যদি প্রতিনিধি না করেন, তবে তার অনুমতি ছাড়া অন্য যে কেউ নিকাহ পড়ালে সেটি শরীয়তসম্মত হবে না। আবার উকিল বাপের প্রধান দায়িত্ব হলো- ওয়ালির নির্দেশনা অনুযায়ী নিকাহের প্রস্তাব দেওয়া, মোহর নির্ধারণ নিশ্চিত করা এবং সাক্ষীর উপস্থিতিতে চুক্তিটি সম্পন্ন করা।
আসলে, সমাজ পরিবর্তনশীল হলেও ইসলামের মূলনীতি অপরিবর্তিত। তাই রীতিকে ইসলামের সঙ্গে বিরোধী মনে করার আগে তার শিকড় জানা জরুরি। উকিল বাপ রাখা কোনো নতুন উদ্ভাবন নয়; বরং প্রতিনিধিত্বের সেই প্রাচীন ইসলামী বিধি, যা বিয়েকে সহজ করতে এবং দূরত্ব, অসুস্থতা বা অন্যান্য বাস্তব কারণের বাধা দূর করতে সহায়তা করে। আমাদের উচিত- উকিল বাপকে একটি সাংস্কৃতিক পরিচয় মনে করলেও এর ইসলামী শেকড়কে স্বীকার করা এবং ভুল ধারণা দূর করা। ইসলামের বিধান সহজ, কিন্তু সমাজের ভুল ব্যাখ্যা অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তাই নিকাহের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে সঠিক জ্ঞান থাকা প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব।

