Logo

আইন ও বিচার

বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ও আন্তর্জাতিক মান

অগ্রগতি ও করণীয়

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৬

বেসামরিক বিমান চলাচল আইন ও আন্তর্জাতিক মান

আইন আধুনিক হলেও বাস্তবায়নে ঘাটতি- ICAO মান অর্জনে প্রয়োজন স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ণে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল খাত দ্রুত বিকাশমান। 

নতুন বিমানবন্দর, আন্তর্জাতিক রুট সম্প্রসারণ এবং যাত্রী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ খাতের আইন ও প্রশাসনিক কাঠামো আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানো অত্যন্ত  জরুরি হয়ে উঠেছে। ২০১৭ সালে প্রণীত বেসামরিক বিমান চলাচল আইন এ খাতে আধুনিকায়নের ভিত্তি স্থাপন করলেও, বাস্তব মাঠপর্যায়ে বহু সীমাবদ্ধতা এখনো রয়ে গেছে, যা বৈশ্বিক মান নির্ধারণকারী সংস্থা ICAO-র নীতিমালার সঙ্গে তুলনা করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আইন ২০১৭: আধুনিক কাঠামোর সূচনা :

২০১৭ সালের আইনটি পুরনো অর্ডিন্যান্স ও অধ্যাদেশ বাতিল করে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সমন্বিত একটি নতুন কাঠামো তৈরি করে। বিমানের নিবন্ধন, এয়ারওয়ার্থিনেস সার্টিফিকেশন, যাত্রী সুরক্ষা, পাইলট লাইসেন্স, বিমানবন্দর নিরাপত্তা ও এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট- এসবের জন্য স্পষ্ট আইনি নির্দেশনা এতে যুক্ত হয়। CAAB-কে প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাতে পুরো খাতের তদারকি ও মাননিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা যায়।

ICAO-র মানদণ্ড: কী চায় আন্তর্জাতিক আকাশপথ 

আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO) নিরাপদ, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও অভিন্ন বৈশ্বিক বিমান নেটওয়ার্ক বজায় রাখতে প্রতিটি রাষ্ট্রকে কিছু বাধ্যতামূলক মান বজায় রাখতে বলে। এসবের মধ্যে স্বাধীন তদন্ত  কমিশন, দক্ষ জনবল, প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, অডিট ও নিরাপত্তা তদারকি- অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।

কোথায় সামঞ্জস্য রয়েছে :

বাংলাদেশের আইন ICAO-র মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে মিল রাখে। লাইসেন্সিং, যাত্রী সুরক্ষা, বিমান নিরাপত্তা, এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এসব ক্ষেত্র আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ছাড়া, টিকিট কারসাজি, অতিরিক্ত ভাড়া, প্রতারণা- এসব অপরাধ দমনে সরকার যে নতুন সংশোধনী প্রস্তাব করছে, তা আন্তর্জাতিক যাত্রী-সুরক্ষা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

মূল ঘাটতিগুলো হলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বাধীনতার অভাব, ICAO-র অন্যতম প্রধান নির্দেশনা- নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেন রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত থাকে। বাংলাদেশে ঈঅঅই মন্ত্রণালয়ের অধীন- ফলে দ্রুত প্রযুক্তিগত সিদ্ধান্ত  বা নিরাপত্তা নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধা তৈরি হয়।

স্বাধীন দুর্ঘটনা তদন্ত  কমিশনের অভাব: 

ICAO-র জন্য এটি একটি বাধ্যতামূলক শর্ত। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো পূর্ণ স্বাধীন, ঈঅঅই-র মুক্ত তদন্ত  কর্তৃপক্ষ কার্যকর হয়নি। এতে দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় ও সুপারিশ বাস্তবায়ন দুর্বল হয়।

মানবসম্পদ ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি :

এয়ার নাভিগেশন, নিরাপত্তা পরিদর্শন, এয়ার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় দক্ষ জনবল অত্যন্ত কম। বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক মানের সেফটি ইন্সপেকশন- এসব ক্ষেত্রে ঘাটতি বিদ্যমান।

প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন ধীরগতি : 

বিশ্বব্যাপী বিমান নিরাপত্তা এখন প্রযুক্তিনির্ভর-অটো-ট্র্যাকিং, বায়োমেট্রিক সিকিউরিটি, উন্নত নেভিগেশন এইডস। বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিমানবন্দর এখনো মানব-নির্ভর নিরাপত্তায় পরিচালিত, যা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় পিছিয়ে।

সংকট নয়, সুযোগ: সামনে এগোনোর পথ :

দেশের বিমান চলাচল খাতের সম্ভাবনা বিশাল। যাত্রী বৃদ্ধি, কার্গো সম্প্রসারণ, নতুন রুট, হাব সম্ভাবনা- সবকিছুই একটি উন্নত আইনি কাঠামো ও শক্তিশালী বাস্তবায়নের ওপর নির্ভরশীল। এখন প্রয়োজন ঈঅঅই এর স্বাধীনতা বাড়ানো, ICAO-র মান অনুযায়ী তদন্ত  কমিশন গঠন, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোতে বড় বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ মানের মানবসম্পদ তৈরি, নিয়মিত নিরাপত্তা অডিট ও তদারকি জোরদার করা।

আইন একা উন্নয়ন আনে না- আইন প্রয়োগের সততা, দক্ষতা ও স্বচ্ছতাই একটি দেশের বিমান চলাচল ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করে তোলে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকমানের বিমান চলাচল ব্যবস্থার পথে অনেকটাই এগিয়েছে। কিন্তু ICAO-র পূর্ণমান অর্জনের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি প্রশাসনিক স্বাধীনতা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ গঠন। বৈশ্বিক আকাশপথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং যাত্রীনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ধারাবাহিক বাস্তবায়ন।

বিকেপি/এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত আইনি প্রশ্ন ও উত্তর

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর