Logo

আইন ও বিচার

ডিভোর্সের পর নতুন জীবন ভাঙনের মধ্যেও পুনর্জন্মের পথ

Icon

মাসুম আহাম্মেদ

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪১

ডিভোর্সের পর নতুন জীবন ভাঙনের মধ্যেও পুনর্জন্মের পথ

জীবনের প্রতিটি সম্পর্ক আমাদের ব্যক্তিগত যাত্রাকে কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করে। আর দাম্পত্য সেই যাত্রার অন্যতম গভীর অধ্যায়। তাই ডিভোর্স যদিও অনেক সময় মুক্তির মতো মনে হয় তার প্রভাব মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে গভীর হতে পারে। তবে এই বিচ্ছেদকে জীবনের শেষ হিসেবে দেখার কোনো কারণ নেই। বরং সেটি হতে পারে পুনর্জন্মের সম্ভাবনা, নিজেকে নতুনভাবে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ। আজকের এই সম্পাদকীয়তে আমরা আলোচনা করব, কীভাবে ডিভোর্সের পর নিজের জীবনকে নতুন করে গঠন করবেন।

নিজেকে পুনরায় চিনে নিন: মানসিক পুনর্গঠনের প্রথম ধাপ :

ডিভোর্সের পর অধিকাংশ মানুষই আবেগের ঝড়ে আক্রান্ত হন রাগ, হতাশা, শোক, ভয়, অনিশ্চয়তা সব মিলিয়ে যেন এক অস্থিরতার সময়। এই আবেগগুলোকে অস্বীকার করার চেষ্টা না করে বরং তাদের স্বাগত জানান। নিজেকে বলুন, “আমি মানুষ, তাই আমার অনুভূতি আছে।”

অনেকে মনে করেন শক্ত হতে মানসিক চাপ লুকিয়ে রাখতে হয়, কিন্তু বাস্তবে অনুভূতিকে চাপা দিলে সমস্যাগুলো আরও গভীর হয়। তাই প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের শরণাপন্ন হতে দ্বিধা করবেন না। পরিবার বা বন্ধুরাও মানসিক সমর্থনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। নিজের আত্মসম্মান পুনরুদ্ধারের কাজও এখান থেকেই শুরু। মনে রাখবেন, একটি সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার মানে আপনি ব্যর্থ নন। বরং এটি প্রমাণ যে আপনি নতুনভাবে বাঁচার সুযোগ পেয়েছেন।

সামাজিক সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করুন :

ডিভোর্সের পর একাকিত্বের অনুভূতি খুব স্বাভাবিক। এই সময়ে অনেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে চান, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তোলে।

পরিবার, বন্ধুবান্ধব কিংবা সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখুন। তাদের সাথে খোলামেলা কথা বলুন- কি কষ্ট হচ্ছে, কি চান, কোথায় সাহায্য লাগতে পারে।

সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকা সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কমিউনিটি গ্রুপ, কদ্বাব বা কোনো দক্ষতা শেখার কোর্সে যোগ দিতে পারেন। এতে নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হবে, দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হবে, এবং নিজের ভেতরের শক্তিকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারবেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- নতুন সম্পর্কে যাওয়া নিয়ে কোনোরকম তাড়াহুড়ো করবেন না। আবেগগতভাবে প্রস্তুত না হলে নতুন সম্পর্কও চাপে পরিণত হতে পারে।

ডিভোর্স শুধু আবেগিক নয়, আর্থিক দিক থেকেও ব্যাপক পরিবর্তন আনে। তাই বাস্তবসম্মত আর্থিক পরিকল্পনা করা সবচেয়ে জরুরি। প্রথমেই নিজের আয় ও ব্যয়ের সঠিক হিসাব তৈরি করুন। কোথায় ব্যয় কমানো যায়, কোথায় সঞ্চয় বাড়ানো যায়- তা নির্ধারণ করুন। জরুরি তহবিল গঠন করুন যাতে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা মোকাবিলা করা সহজ হয়। ক্যারিয়ারের দিক থেকেও নতুন ভাবনা আনা দরকার হতে পারে। হয়তো নতুন চাকরি খোঁজা, প্রশিক্ষণ নেওয়া, কিংবা নিজস্ব ছোট ব্যবসা শুরু করা আপনার জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে। পরিবর্তনকে ভয় না পেয়ে বরং সুযোগ হিসেবে নিন। 

ব্যক্তিগত বিকাশ: নিজেকে নতুন করে গড়ার সময় : 

ডিভোর্সের পরে যে শূন্যতা আসে, সেটি আসলে এক ধরনের ‘স্পেস’- যেখানে আপনি নতুনভাবে নিজেকে সাজাতে পারেন।

নিজের শখগুলোকে আবার ফিরে পেতে চেষ্টা করুন। জীবনযাপন যত চাপমুক্ত হবে, মনও তত স্থির হবে। তাই পড়াশোনা, গান, ভ্রমণ, বাগান করা- যা মনকে শান্তি দেয়, তা নিয়মিত করুন।

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা একে অপরের সহযাত্রী। তাই নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।

নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন- ছয় মাস পরে কোথায় থাকতে চান, তিন বছর পরে কেমন জীবন চান এগুলো লিখে ফেলুন। লক্ষ্য আপনাকে দিশা দেখাবে, আর দিশা আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

সন্তানের প্রতি দায়িত্ব ও কো-প্যারেন্টিং :

যদি সন্তান থাকে, ডিভোর্সের পর তাদের মানসিক অবস্থা সবচেয়ে বেশি নজরে রাখা দরকার। তারা বিভ্রান্ত, কষ্টে বা ভীত হতে পারে।

সবচেয়ে বড় বিষয় হলো সন্তানের সামনে কোনো সংঘাত তৈরি করবেন না। তারা যেন বুঝতে পারে, বাবা-মা আলাদা থাকলেও ভালোবাসাটা কমে যায়নি।

সন্তানের সময়সূচি, পড়াশোনা, স্বাস্থ্য ও আবেগিক চাহিদা নিয়ে বাবা-মা দুজনকে একসাথে পরিকল্পনা করতে হবে। প্রয়োজনে শিশুমনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। মনে রাখবেন, সন্তানের নিরাপত্তা ও সুস্থতা সর্বপ্রথম।

নতুন সম্পর্কে যাওয়ার আগে ভাবুন: ধৈর্যই সঠিক পথ :

ডিভোর্সের পর অনেকের মনে হয়, নতুন সম্পর্কই শূন্যতা পূরণ করবে। কিন্তু তাড়াহুড়ো করলে নতুন সমস্যাও তৈরি হতে পারে। নতুন সম্পর্কে যাওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন- আমি কি মানসিকভাবে প্রস্তুত?

নিজের চাহিদা ও সীমা কি বুঝেছি?

পুরনো ক্ষত কি এখনও রক্তক্ষরণ করছে?

যদি মনে হয় আপনি এখনও অন্তর্গতভাবে ভাঙা, তাহলে আরও সময় নিন। একটি সম্পর্ক শেষ হওয়া মানে অন্য সম্পর্ক শুরু করতেই হবে- এটা মোটেই বাধ্যতামূলক নয়।

জীবনের নতুন দর্শন গঠন করুন :

ডিভোর্স থেকে উঠে দাঁড়ানোর মূল চাবিকাঠি হলো নতুনভাবে ভাবতে শেখা। প্রতিদিন কৃতজ্ঞতার চর্চা করুন। জীবন আপনাকে যে শক্তি দিয়েছে, তা উপলব্ধি করুন।

নিজেকে পরিবর্তনের সুযোগ দিন। পুরনো বিশ্বাস, ভুল ধারণা, অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস- সবকিছু ঝেড়ে ফেলুন। নতুনভাবে এগিয়ে চলুন। আপনার জীবন আপনার নিয়ন্ত্রণেই। কে কী বললো তা ভেবে নিজের পথ থেকে সরে যাবেন না। মনে রাখুন, নতুন যাত্রা শুরু করতে কখনোই দেরি হয় না।

ডিভোর্স একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি, কিন্তু পুরো বইয়ের শেষ নয়। জীবন আবার শুরু করার অসংখ্য সুযোগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আপনার সামনে। একটু সাহস, একটু ধৈর্য আর একটু ভালোবাসা, বিশেষ করে নিজের প্রতি ভালোবাসা- এই তিনটিই আপনাকে নতুন জীবন গড়তে সাহায্য করবে।

যে সম্পর্ক চলে গেছে, তাকে বিদায় দিন। আর যে জীবন সামনে অপেক্ষা করছে, তাকে আলিঙ্গন করুন। আপনি পারেন, এগিয়ে চলুন নতুন ভোরের দিকে।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর