গোপন তালাক : আইনের চোখে অবৈধ, সমাজে বিভ্রান্তি
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৩
দেশে বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত আইনি কাঠামো স্পষ্ট- তালাক বৈধ হতে হলে অপরপক্ষকে নোটিশ প্রদান বাধ্যতামূলক। তবুও বাস্তবে এমন অসংখ্য ঘটনা দেখা যায় যেখানে স্বামী বা স্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে তালাকের নোটিশ গোপন রাখেন, কিংবা অপরপক্ষকে না জানিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের চেষ্টা করেন। ব্যক্তিগত মান-ইজ্জত, পারিবারিক চাপ কিংবা সম্পর্কের তিক্ততাকে অজুহাত করে এই শর্টকাট পথ বেছে নেওয়া কেবল আইনের লঙ্ঘনই নয়, বরং সামাজিক অস্থিরতারও জন্ম দেয়।
মুসলিম পরিবার আইন, ১৯৬১-এর ধারা ৭ অনুযায়ী তালাক কার্যকর করতে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার মাধ্যমে লিখিত নোটিশ পাঠানো বাধ্যতামূলক। সেই নোটিশ অপরপক্ষের কাছেও পৌঁছাতে হবে, এবং এরপর ৯০ দিনের ওয়েটিং পিরিয়ড সম্পন্ন হলে তালাক বৈধ হয়।
এই তিনটি ধাপের একটিও বাদ পড়লে তালাক আইনের চোখে বাতিল বলে গণ্য হয়। সুতরাং ‘গোপনে তালাক’ বা ‘নিরবে তালাক’- এ ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।
নোটিশ গোপন রেখে তালাক দেওয়ার চেষ্টা কেবল আইনগত জটিলতাই তৈরি করে না; এতে প্রতারণা, দ্বিতীয় বিবাহের অপরাধ, সম্পত্তি বণ্টনের সংঘাত এবং সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে বহু সমস্যা দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা- এতে ভেঙে যায় বিশ্বাসের ভিত্তি, যা বিবাহ নামের সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মূল স্তম্ভ।
সমাজ হিসেবে আমাদের বোঝা জরুরি-আইন কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়; বরং সুরক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত।
তালাক কোনো দিনই আনন্দের বিষয় নয়, কিন্তু এটি যদি হতে হয়, তবে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সম্মানজনক উপায়েই হওয়া উচিত। সম্পর্কের ইতি টানার ক্ষেত্রেও সততা ও স্বচ্ছতা অপরিহার্য।
গোপন তালাকের প্রবণতা কমাতে প্রশাসন, আইনজীবী ও কাজি অফিসকে আরও সচেতন ভূমিকা নিতে হবে। পাশাপাশি জনগণের আইনি সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
মনে রাখতে হবে- আইনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া সহজ মনে হলেও, এর পরিণতি কখনোই সহজ নয়।
শেষ কথা, তালাকের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গোপনীয়তার আবরণে নয়, বরং আইনের আলোকেই হওয়া উচিত।
বিকেপি/এমবি

