Logo

আইন ও বিচার

হত্যা চেষ্টা মামলা

অপরাধীর শাস্তি এবং জামিন আইনের আলোকে বিশ্লেষণ

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১১

অপরাধীর শাস্তি এবং জামিন আইনের আলোকে বিশ্লেষণ

মানবজীবনের নিরাপত্তা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দায়িত্বের অন্যতম। সে কারণেই হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ শুধু সংঘটিত হলে নয়, তার চেষ্টাকেও বাংলাদেশে কঠোরভাবে দণ্ডনীয় করা হয়েছে। একই সঙ্গে, যিনি নিজ হাতে হত্যার চেষ্টা করেন এবং যিনি পরোক্ষভাবে এতে প্ররোচনা বা সহায়তা দেন- উভয়কেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে শাস্তি ও জামিনের প্রশ্নে আইনে রয়েছে কিছু সূত্র পার্থক্য, যা জনস্বার্থে পরিষ্কারভাবে বোঝা জরুরি।

হত্যা চেষ্টা: দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারা :

বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০৭ ধারা অনুযায়ী, যদি কেউ এমন কোনো কাজ করে যা দ্বারা মৃত্যু ঘটলে তা হত্যা হতো, এবং সেই কাজটি হত্যার উদ্দেশ্য বা জ্ঞানের সঙ্গে করা হয়, তবে তা হত্যা চেষ্টা হিসেবে গণ্য হবে।

শাস্তির বিধান : 

সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এর সঙ্গে জরিমানাও হতে পারে। যদি সেই চেষ্টার ফলে ভুক্তভোগী গুরুতর জখম হন, তাহলে আদালত সাধারণত কঠোর শাস্তির দিকেই অগ্রসর হয়।

প্ররোচনাকারীর দায় : 

দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা- হত্যা চেষ্টা মামলায় অনেক সময় দেখা যায়, কেউ সরাসরি অস্ত্র হাতে না নিলেও অন্যকে উসকানি, পরিকল্পনা বা সহায়তার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনে ভূমিকা রাখে। এ ধরনের ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা (প্ররোচনার শাস্তি)।

এই ধারা অনুযায়ী যদি কোনো অপরাধ প্ররোচনার ফলেই সংঘটিত হয় এবং সেই অপরাধের জন্য পৃথকভাবে প্ররোচনার শাস্তি নির্ধারিত না থাকে, তবে প্ররোচনাকারী মূল অপরাধীর সমপরিমাণ শাস্তি পেতে পারেন। অর্থাৎ, হত্যা চেষ্টার ক্ষেত্রে প্ররোচনাকারীর শাস্তিও হতে পারে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন এবং জরিমানা।

আইনের দৃষ্টিতে, প্ররোচনাকারী ‘কম দোষী’- এই ধারণা সব সময় প্রযোজ্য নয়; অপরাধ সংঘটনে তার ভূমিকা যদি কার্যকর ও প্রত্যক্ষ হয়, তবে শাস্তিও সমান হতে পারে।

জামিনের বিধান : অধিকার না কি বিবেচনার বিষয়? :

হত্যা চেষ্টা মামলা একটি অ-জামিনযোগ্য (Non-bailable) অপরাধ। অর্থাৎ, আসামির জামিন পাওয়া তার অধিকার নয়; এটি সম্পূর্ণভাবে আদালতের বিবেচনাধীন। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী জামিন বিবেচনার সময় আদালত যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়, তা হলো অপরাধের গুরুত্ব ও প্রকৃতি, আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা, আসামি পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা, সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট বা সাক্ষী প্রভাবিত করার আশঙ্কা, ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা। 

প্ররোচনাকারীর ক্ষেত্রে, যদি প্রাথমিকভাবে দেখা যায় যে তার ভূমিকা তুলনামূলকভাবে গৌণ বা পরোক্ষ, তাহলে কিছু ক্ষেত্রে আদালত সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিতে পারেন। তবে এটি কোনো সাধারণ নিয়ম নয়।

বিচারিক ভারসাম্য ও অপব্যবহারের আশঙ্কা :

বাস্তবে দেখা যায়, ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক বিরোধে অনেক সময় ৩০৭ ধারার মামলা একটি চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই আদালতের দায়িত্ব শুধু অপরাধ দমন নয়, বরং যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি এই কঠোর আইনের শিকার না হন, তা নিশ্চিত করাও। একই সঙ্গে, প্রকৃত অপরাধী বা প্ররোচনাকারী যেন আইনের ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে যেতে না পারে- সেই ভারসাম্য রক্ষা করাই ন্যায়বিচারের মূল চ্যালেঞ্জ।

হত্যা চেষ্টা ও এর প্ররোচনা- উভয়ই বাংলাদেশের আইনে গুরুতর অপরাধ। প্রত্যক্ষ অপরাধী ও প্ররোচনাকারী উভয়ের ক্ষেত্রেই কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইন মূলত একটি বার্তাই দিতে চায়- মানবজীবনের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র বা আক্রমণ রাষ্ট্র সহ্য করবে না। তবে এই কঠোরতার সঙ্গে সঙ্গে আইনের ন্যায়সঙ্গত ও সংবেদনশীল প্রয়োগই পারে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা অটুট রাখতে।

বিকেপি/এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইনি প্রশ্ন ও উত্তর আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর