রাজধানীর অলিগলি ফুটপাতে খোলা খাবারের হিড়িক, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৪
রাজধানী ঢাকা আজ এক অদ্ভুত বৈপরীত্যের নগরী। একদিকে আধুনিকতা ও উন্নয়নের গল্প, অন্যদিকে অলিগলি, ফুটপাত ও ব্যস্ত সড়কের পাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলা খাবার- বিশেষ করে তথাকথিত ‘হোমমেড’ কেক, পিঠা ও নানা বেকারি পণ্যের অবাধ বিক্রি। ধুলোবালি, যানবাহনের ধোঁয়া, মশা-মাছির অবাধ বিচরণ আর নোংরা পরিবেশের মধ্যেই এসব খাবার বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে।
রাস্তার চারপাশে জমে থাকা ধুলোবালি ও জীবাণু সহজেই এসব খোলা খাবারে মিশছে। নেই কোনো স্বাস্থ্যসম্মত মোড়ক, নেই খাদ্য সংরক্ষণের ন্যূনতম ব্যবস্থা। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো- এসব দেখার যেন কেউ নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব জনস্বাস্থ্যকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, জনগণের জন্য উৎপাদিত, সংরক্ষিত ও বিক্রিত প্রতিটি খাদ্যপণ্য অবশ্যই নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্মত হতে হবে। এই আইনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য প্রস্তুত ও বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত। একইভাবে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯- এ ভেজাল, ক্ষতিকর বা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য বিক্রয়কে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে। ভোক্তার নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার অধিকার আইন দ্বারা সুরক্ষিত।
কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ফুটপাতের এসব খোলা খাবার বিক্রির ক্ষেত্রে নেই কোনো লাইসেন্স, নেই বিএসটিআই বা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অনুমোদন। অনেক সময় ‘হোমমেড’ শব্দটি ব্যবহার করে ভোক্তাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করা হলেও বাস্তবে এর কোনো যাচাই-বাছাই নেই। ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও তরুণরা নীরবে স্বাস্থ্যঝুঁকির শিকার হচ্ছে।
এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সমন্বিত ও নিয়মিত অভিযান জরুরি। একই সঙ্গে, লাইসেন্সবিহীন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য বিক্রি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
অন্যদিকে, ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে। সাময়িক আকর্ষণ বা কম দামের লোভে নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্যের সঙ্গে আপস করা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
জনস্বাস্থ্য রক্ষা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। আইন যখন আছে, তখন তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি। নইলে ঢাকার ফুটপাতের এই খোলা খাবারের হিড়িক একদিন নীরব জনস্বাস্থ্য সংকটে রূপ নেবে-যার দায় এড়ানোর সুযোগ কারও থাকবে না।
বিকেপি/এনএ

