Logo

আইন ও বিচার

নিত্যপণ্য গুদামজাতকরণ

আইন, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

Icon

মাসুম আহম্মেদ

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১০

নিত্যপণ্য গুদামজাতকরণ

দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসমূহ যেমন- চাল, ডাল, আলু, তেল, ডিটারজেন্ট, সাবান ইত্যাদি -সুষ্ঠুভাবে গুদামজাত, সংরক্ষণ ও বাজারে স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিতকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যু। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে আইনি কাঠামো, বাজার নিয়ন্ত্রণ নীতি এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

বর্তমানে বাংলাদেশে সরাসরি ‘নিত্য পণ্য গুদামজাতকরণ আইন’ নামে কোনো পৃথক আইন নেই; তবে পুরনো Warehouses Ordinance, ১৯৫৯ অনুযায়ী, সরকার শস্য ও কৃষিজ উদ্ভিদের গুদামজাতকরণ ও সুরক্ষার জন্য নিয়ম করেছে। এই আইন অনুযায়ী- গুদাম পরিচালকদের লাইসেন্স নিতে হয়, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হয় এবং ক্ষতি বা চুরি, আগুন ইত্যাদি ঝুঁকির বিরুদ্ধে পণ্যের বীমা রাখতে হয়। এছাড়া গুদামের পণ্য আলাদা রাখা ও মালিকানার পরিচয় নিশ্চিত করাও বাধ্যতামূলক। 

নিত্যপণ্যের বাজারগত প্রেক্ষাপটে তেমন স্পষ্ট বিধান নেই। বর্তমান বাজারে নিত্যপণ্য ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫৬’ প্রযোজ্য হয়, যেটি পাকিস্তান আমলে প্রণীত হয়েছিল। এই আইনের আওতায় সরকার নিত্যপণ্য তালিকা নির্ধারণ করে, মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখতে পারে এবং সিন্ডিকেট, মজুদ বা অযাচিত কারসাজি ঠেকাতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

কিন্তু এই ৬০ বছরের পুরানো আইনের তালিকায় থাকা পণ্যের অধিকাংশই আজকের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় প্রাসঙ্গিক নয়; অনেক প্রয়োজনীয় পণ্য তালিকায় নেই, আর যেগুলো রয়েছে তার মধ্যে অনেকে এখন নিত্য ব্যবহার হয় না। ফলে মূল্য ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না। যেমন- চাল, ডিম, আলু বা সাবান ইত্যাদি বাজারে হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধির সময় আইনি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে অসুবিধা তৈরি হয়।

সরকার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনের সংস্কার ও নবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সংশোধনীতে বর্তমান সময়ের নিত্য ব্যবহৃত পণ্যের তালিকা হালনাগাদ করার পাশাপাশি সিন্ডিকেট ও বাজার জটিলতা প্রতিরোধে আরও শক্তিশালী বিধান রাখা হচ্ছে। এই নজরে চাল, ডাল, তেল, আলুসহ আরও অনেকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ রয়েছে এবং অবৈধ মজুতদারি ও অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা প্রস্তাবিত হচ্ছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন-২০২৪ খসড়া অনুযায়ী ১১টি নতুন পণ্যের ক্যাটাগরি যুক্ত করার পরিকল্পনা আছে এবং শাস্তিমূলক ধারার আওতায় তিন বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। 

গুদামজাতকরণের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বাজারে পণ্যের সহজলভ্যতা ও স্থিতিশীল মূল্য বজায় রাখা কঠিন। গুদামগুলোতে পণ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ না হলে নষ্ট, ক্ষতি বা চুরি হতে পারে যার ফলে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়। সরকারি নীতিমালায় আধুনিক গুদামজাতকরণ, শীতল সংরক্ষণ সুবিধা ও তথ্যভিত্তিক স্টক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জরুরি বলে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য রয়েছে। 

দেশের Special Powers Act, ১৯৭৪ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি অনুমোদিত সংরক্ষিত সীমার বেশি পণ্য মজুদ করলে তা অবৈধ স্টকপাইলিং বা হুর্ডিং হিসেবে গণ্য হয় এবং কঠোর শাস্তির আওতায় আসে- এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে আজীবন কারাদণ্ড বা দীর্ঘ মেয়াদি সাজা পর্যন্ত হতে পারে। যদিও প্রমাণিত শ্রেণিতে উপযুক্ত কার্যকর ব্যবহারের জন্য আদালত ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা থাকতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বার বার বলেছেন, বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করা ও অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

নিত্য পণ্য গুদামজাতকরণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে আইনি কাঠামো আছে, কিন্তু তা সময়োপযোগী করার প্রয়োজন ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। পুরনো আইনগুলোকে আধুনিক বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং গুদামজাত পণ্য সরবরাহে স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে দ্রুত সংশোধনী আনা গুরুত্বপূর্ণ। শৃঙ্খলা ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত মূল্য-তালিকা হালনাগাদ, গুদাম ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন এবং আইন প্রয়োগে সহমর্মিতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

বিকেপি/এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর