ভুল চিকিৎসায় সুস্থ দাঁত তুলে ফেলা : ডেন্টিস্টের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা
ডা. মমতাজ বেগম
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩২
চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার এবং চিকিৎসকের পেশাগত দায়িত্বের সঙ্গে জড়িত বিষয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কখনো কখনো অবহেলা বা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রোগী মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন। সম্প্রতি এমন অভিযোগও শোনা যায়, যেখানে নষ্ট দাঁতের পরিবর্তে ভুলবশত সুস্থ দাঁত তুলে ফেলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা চিকিৎসা অবহেলার (Medical Negligence) আওতাভুক্ত কিনা এবং এতে ভুক্তভোগী কী ধরনের আইনি প্রতিকার পেতে পারেন।
ভুল চিকিৎসা ও আইনি সংজ্ঞা :
আইনগতভাবে চিকিৎসা অবহেলা বলতে বোঝায় চিকিৎসক তাঁর পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা ও সতর্কতার মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে এবং এর ফলে রোগীর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি হলে। সুস্থ দাঁত তুলে ফেলা স্পষ্টতই একটি গুরুতর পেশাগত ত্রুটি, যদি তা রোগীর সম্মতি বা যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ঘটে।
দেশে এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে একাধিক আইনি পথ খোলা রয়েছে-
ফৌজদারি আইন :
দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর আওতায় অবহেলার কারণে ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করা যেতে পারে। যদি প্রমাণিত হয় যে চিকিৎসকের অবহেলা গুরুতর এবং অযত্নমূলক, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
দেওয়ানি মামলা (ক্ষতিপূরণ) :
ভুক্তভোগী দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারেন। এতে চিকিৎসা ব্যয়, ভবিষ্যৎ চিকিৎসার খরচ এবং মানসিক ক্ষতির জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করা যায়।
ভোক্তা অধিকার আইন :
চিকিৎসা সেবাকে সেবা হিসেবে গণ্য করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা যায়। প্রমাণিত হলে চিকিৎসক বা ক্লিনিককে জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (BMDC):
ডেন্টিস্টের পেশাগত অসদাচরণ প্রমাণিত হলে BMDC তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। এর মধ্যে সতর্কবার্তা, সাময়িকভাবে নিবন্ধন স্থগিত বা চূড়ান্তভাবে বাতিল করার মতো ব্যবস্থাও রয়েছে।
সম্মতি ও নথিপত্রের গুরুত্ব :
আইন অনুযায়ী, কোনো দাঁত তোলার আগে রোগীর সুস্পষ্ট সম্মতি (Informed Consent) নেওয়া বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি এক্স-রে, চিকিৎসা নোট ও প্রেসক্রিপশন সংরক্ষণ করা চিকিৎসকের দায়িত্ব। এসব নথি না থাকলে অবহেলার অভিযোগ আরও জোরালো হয়।
ভুক্তভোগীর করণীয় :
ভুল চিকিৎসার শিকার হলে ভুক্তভোগীর উচিত চিকিৎসা সংক্রান্ত সব কাগজপত্র সংরক্ষণ করা। প্রয়োজনে অন্য বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া। আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে যথাযথ আইনি পথে এগোনো। সুস্থ দাঁত তুলে ফেলা কোনো সাধারণ ভুল নয়; এটি রোগীর জীবনে দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই চিকিৎসা পেশায় জবাবদিহি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও রোগীর সচেতনতা একসঙ্গে থাকলেই এ ধরনের অবহেলা কমানো সম্ভব।
বিকেপি/এনএ

