Logo

জীবনানন্দ

রাজার পণ্ডিত

Icon

শাম্মী তুলতুল

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৫৭

রাজার পণ্ডিত

রঙিনপুর নামক এক দেশ ছিল। সেই দেশের রাজা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। প্রজাদের সকল কথা মন দিয়ে শুনতেন আর তা সমাধান করার চেষ্টা করতেন।

যার ফলে রাজ্যে সকল লোক শান্তিতে বসবাস করতেন। সবুজে ঘেরা খুব সুন্দর একটি দেশ এটি। উঁচু- উঁচু পাহাড় বেষ্টিত এর দুপাশ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা এই রাজার দেশ।

রাজা ভালো মানুষের সাথে সাথে বুদ্ধিমানও বটে। কিন্তু অনেক সময় নিজের বুদ্ধিও বিফলে যায়। তাই রাজ্যে কর্মরত আছেন এক রাজপণ্ডিত। রাজ পণ্ডিত বেশ জ্ঞানী অতি বুদ্ধিমান। রাজ্যের বিপদ মুহূর্তে তিনি কৌশলে বুদ্ধির জোরে সকল বিপদ মোকাবিলা করেন। কিন্তু যিনি ভালো কাজ করেন তার পেছনে মন্দ লোক লেগে থাকার অভাব নেই। সবাই চায় ভালো মানুষটিকে সব সময় বিপদে ফেলতে। রাজপণ্ডিতেরও তেমন দশা হলো। রাজপণ্ডিত দু’দিন ছুটি নিলেন তার নিজ কাজে। এই সুযোগ কাজে লাগালেন সেনাপতি।

দু’দিন গত হওয়ার পর রাজপণ্ডিতের খবর না পেয়ে রাজা উদ্বিগ্ন। মন্ত্রী মশাইকে বলেন, ‘কি এক অবস্থা দেখুনতো, ছুটি শেষ হলো এখনও পণ্ডিত মহাশয়ের কোনো খবর নেই। কোন অসুখ বিসুখ করেনি তো?’

‘জাহাপনা, কিসের আবার অসুখ আরাম বেশি পেলে শরীর বেশী সয়। ইদানীং তিনি তেমন একটা কাজেরও না, বয়স হচ্ছে এর চেয়ে বিদায় ভালো’ , কথাগুলো বললেন সেনাপতি। 

‘তা ঠিক বলেছেন! তবে এই মুহূর্তে নতুন পণ্ডিত কই পাই বলুন?’

‘এ আবার কষ্ট কিসের জাহাপনা, লোকের অভাব আছে নাকি? রাজপণ্ডিত হওয়ার জন্য কত মানুষ তাকিয়ে আছে।’

‘তবে তাই হোক আপনি একটা ব্যবস্থা করুন আমি অত চিন্তা মাথায় নিতে পারছি না।’

‘জো হুকুম জাহাঁপনা’।

সেনাপতি মনে মনে বেশ খুশী, পুরোনো পণ্ডিতকে তার একদম পছন্দ না। কারণ পুরোনো পণ্ডিত কথায় কথায় জ্ঞান দেয় আর চোর ধরতে ওস্তাদ। তাই সুযোগটা তিনি লুফে নিলেন। তিনি ব্যস্ত হয়ে গেলেন নতুন পণ্ডিতের সন্ধানে। কিন্তু... । কিন্তু হুট করে কি আর পণ্ডিত মেলে? তাও জ্ঞানী, মেধাবী।

সেনাপতি মহোদয় একটা বুদ্ধি বের করলেন কোনো রকম নকল কাউকে চালিয়ে দিয়ে নতুন সন্ধান করবেন। একজন সেপাইকে পণ্ডিত সাজিয়ে নিয়ে এলেন রাজার কাছে। রাজা তাঁকে দেখেই প্রণাম করলেন। রাজা বললেন, ‘উনাকে কোথায় পেলেন সেনাপতি তাও এত দ্রুত?”

‘জি! আসলে ইয়ে মানে!’ আমতা আমতা করে সেনাপতি বলেন, ‘উনি নতুন এসেছেন আমাদের রাজ্যে। মহাজ্ঞানী ধ্যান করা অবস্থায় উনাকে আমি আমাদের পাশের এক জঙ্গলে দেখেছি ভাবলাম ধ্যান ভাঙলেই কথা বলে নেবো। কথা বলেই বুঝলাম উনি একজন পণ্ডিত দেশে দেশে সবাইকে জ্ঞান দেন। আমি রাজপণ্ডিতের কথা বলতেই বিনা পারিশ্রমিকে রাজি হয়ে গেলেন।’

‘বেশ! বেশ! তোমার প্রশংসা না করে পারিনা। এই সময় পণ্ডিতকে কত দরকার এই কথা বুঝলে আমাদের পুরোনো পণ্ডিত অত দেরি করতো না। রাজা মুদ্রার থলে ছুড়ে দিয়ে বলেন এই নাও সেনাপতি, তোমার পুরস্কার।’ 

‘জী! জনাব আপনার জুড়ি নেই।’

কিন্তু মিথ্যে কথা যে বেশিদিন টেকে না এই কথা কি আর ভেবেছেন সেনাপতি? কিছুদিন পর রাজসভায় এক শিশুর আগমন হল সাত কি আট  বয়স এমনি হবে। সবাই তার দিকে তাকিয়ে রইল। কে এই শিশু এখানেই বা  কি করে এলো? 

রাজা তাকে দেখে বললেন, ‘শিশু, কে তুমি এই রাজ দরবারে?

‘জী, আমি শুভ।’

‘কি চাও তুমি?’

‘আমার মা পাঠিয়েছেন আপনার কাছে।’

‘কি জন্যে আমার কাছে পাঠিয়েছেন তোমার মা?’

‘জাহাঁপনা, আপনার রাজ্যে অনেক মশা আমাদের বড়ই কষ্ট হয়। সে আর্জি নিয়ে এলাম। মা আমার মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’

রাজা বিস্মিত হলেন শিশুটির কথা শুনে। তখন এই ব্যাপারে একে একে সবার কাছে সমাধান চেয়ে শেষে পণ্ডিতের নিকট সমাধান চাওয়া হলে পণ্ডিত বার বার মুখ লুকান। এই অবস্থায় মন্ত্রী খুব বিরক্ত হন, ‘কি হলো নতুন পণ্ডিত কিছু তো বলুন?’ 

রাজা আবার বললেন, ‘জঙ্গলে এত মশার উপদ্রব বেড়ে গেলো কখন টেরও পেলাম না। কি বিচ্ছিরি ব্যাপার স্যাপার আমার প্রজারা কত কষ্টে আছেন। কি করা যায় বলুন তো পণ্ডিত?’

‘উত্তর দিন চুপ করে আছেন কেন?’ মন্ত্রী রাগান্বিত হয়ে বললেন।  

জী আজ্ঞে, আসলে আমি বলছিলাম হঠাৎ করে পণ্ডিত দাড়ি- গোঁফ খুলে ফেলে রাজার পায়ে এসে লুটিয়ে পড়েন, জা- জা –জাহাপনা। 

রাজা, ‘সেকি! কি করছেন?’

নকল পণ্ডিত, ‘আমাকে ক্ষমা করুন। বলুন ক্ষমা করবেন কিনা, নয়তো পা ছাড়বনা’। 

‘আহা কি হয়েছে বলবেন তো?’

‘আমি কোনো পণ্ডিত নই আমাকে মিথ্যে সাজিয়ে আনা হয়েছে।’

‘কি! কে করেছে এই কাজ? কার এত বড় সাহস?’

‘ওই যে সেনাপতি সাহেব। জাহাপনা, আমি দুঃখী মানুষ।  পুরনো পণ্ডিতের ভাত নষ্ট করতে সেনাপতি এই কাজ করেছেন।’

রাজা এবার ভেজায় গরম, ‘কি বললে? এই কে আছিস তোরা যা সেনাপতিকে ধরে নিয়ে আয়।’

সেনাপতি শুনে ধীর পায়ে হেঁটে দেয় ভোঁ দৌড়। কিন্তু অন্যায় করলে শাস্তি যে পেতেই হয়, সেনাপতিরও তাই হলো। এদিকে শিশুটি খিলখিল করে হাসতে লাগলো। 

তাই দেখে রাজা বলেন, ‘কে তুমি বাছা, তুমি হাসছ কেন?’। 

‘জাহাপনা, আগের পণ্ডিত আমার নানা হন।’

‘কি বল?’ 

‘জী, আমার মা সত্য বের করে আনতে এমন কাজ করেছেন।’

রাজা এতটুকু একটা শিশুর কাছে লজ্জা পেলেন। 

মনে মনে খুব অনুতপ্ত হলেন। তিনি পুরোনো পণ্ডিতকে সসম্মানে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করলেন।

এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

গল্প

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর