বিগত শতকের মাঝের কাল, ভাঙন-নির্মাণের সময়; পৃথিবীজুড়ে শবের স্তূপ। মানুষের প্রতি মানুষের সন্দেহ আর অবিশ্বাস গোটা দুনিয়াকে গ্রাস করছে। তাই অস্থির সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক মিত্র বদলাচ্ছে দ্রুত। যুদ্ধ-পরবর্তী কালে ইংরেজের ভারত ছাড়ার পরিকল্পনা, হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্কের ফাটল এবং দুই সম্প্রদায়ের আলাদা বসবাসের মনন তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মরমি এক সাধক তুষ্টচরণের আবির্ভাব ১৯৪০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বও তৎকালীন ফরিদপুর জেলার, বর্তমান মাদারীপুর জেলার বাহাদুরপুরে জন্ম। পিতা পর্বতচন্দ্র বাগচী, মা সরলা দেবী। গ্রামের পাঠশালায় প্রথম পাঠ। শৈশবের গুরুমশাই বুঝেছিল তুষ্টচরণ প্রখর মেধার অধিকারী। বাগচী পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা বিশেষ ছিল না। তবে বংশগত ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ছিল এই বংশকে ঘিরে। তুষ্টচরণ যতটা ছিলেন বিষয়-ভাবনার মানুষ, তার থেকে শত গুণে ভাবজগতে তার বিচরণ। তার ফলে সৃষ্টি হয়েছে সংগীতের বিশাল সম্ভার।
আত্মিক অনুভূতি ও অতীন্দ্রিয় চেতনা বস্তুত মানুষের বোধেরই প্রকাশ। এই উপলব্ধিতে নিহিত শক্তি আত্মা। জাগতিক তুচ্ছতা, ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতা দূর করার ফলে বিপুলতায় উত্তরণ সম্ভব। সাধনালব্ধ জ্ঞানের সাহায্যে জাগতিক স্তর থেকে আধ্যাত্মিক স্তরে উন্নীত হওয়ার আকাক্সক্ষাই অতীন্দ্রিয় সাধনার মূল লক্ষ্য। মনের অন্দরে ভাবজগতের বিকাশ হলেই আত্মার সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়; সে সম্পর্ক সৃজনের। এই পথেই মানুষ সাধারণ থেকে অসাধারণে উন্নীত হয়; দিব্য আত্ম-চেতনায় আচ্ছন্ন মন অপার্থিব বোধে জাগ্রত হয়— এ অবস্থার নাম জীয়ন মৃত্যু অথবা মরে জ্যান্ত থাকা।
দেহের অভ্যন্তরে আত্মারূপী যে ঈশ্বরের আবির্ভাব, তা ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ভেঙে ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রচারিত হলে কেন্দ্রবিন্দুতে সেই একজনেরই অবস্থান। তাকে ধরা যায় না। অথচ জীবনভর চলে তার অনুসন্ধান। এই অন্বেষণই অতীন্দ্রিয়বাদের কল্পভূমি। বাক্ শক্তির ক্রিয়াপরতায় আত্মার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেহের মৃত্যু হলেও আত্মার মৃত্যু নেই— সে অবিনশ্বর ও অবয়বহীন। দেহের মধ্যে মনের নিত্য আশা-যাওয়া। মন মুক্ত, সর্বত্রই তার বিরাজ। এই মনের সন্ধান করাই সাধকের মূল লক্ষ্য— তুষ্টচরণ আজীবন এই সাধনায় লিপ্ত। সংগীত সাধনার এক বিশেষ অনুভূতির মধ্য দিয়ে তিনি আলোকময় অবস্থিতি আত্মীয়করণ করেছেন, নিজস্ব অনুভূতি সঞ্চারে কল্পনার বিস্তার ঘটিয়েছেন আপনার মনে। তার ইপ্সিত ইচ্ছা মনের মধ্যে যেভাবে উদয় ঘটিয়েছেন তা ভাষায়-অনুভূতিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে এক নীরব সাধকের অন্তর্লোকে।
মরমি সাধকেরা কখনও কখনও নিজেকে স্রষ্টারূপে কল্পনা করেন, কখনও বা নিজের সৃষ্টির মধ্যে আত্মলীন হয়ে যান; তখন স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে ভেদ থাকে না। উপনিষদের ‘সো-হম’— আমিই সে; রবীন্দ্রচেতনায় আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর তোমার প্রেম হ’ত সে মিছে— এর পরম সত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যাকুল। এই ঐশ্বর্য সাধনাকে অবলম্বন করেই তুষ্টচরণের যাপন। পরমাত্মারূপী ঈশ্বরকে তিনি প্রেমিকরূপে গ্রহণ করেছেন। গোপন সাধনার মর্মবাণী রূপকধর্ম ও প্রহেলিকার মাধ্যমে বিধৃত তার সংগীত-সাধনমার্গ। এখানে শাস্ত্রবাণীর চেয়ে মানবজীবনই শ্রেষ্ঠ সম্পদরূপে বিবেচিত।
তুষ্টচরণের সংগীত বৈচিত্র্যময়। গানের আঙ্গিক, বিষয়বস্তুর ভিন্নতা সহজে লক্ষণীয়। তাঁর সংগীত সম্ভারের মধ্য থেকে অপ্রকাশিত কিছু গানে বিচ্ছেদ ভাবনা এ প্রবন্ধের মূল আলোচ্য বিষয়।
বিরহের অনলে পুড়ে খাক কবির অন্তর। এই অন্তর্জ্বালার মধ্যেই কবির প্রশান্তি যার বিরহে কবি কাতর, তিনি রক্তমাংসের মানবী, নাকি জৈবিক সত্তাকে অধ্যাত্ম চেতনায় তার বিরাজ— তা বুঝে ওঠা দুঃসাধ্য। প্রতিটি সংগীতের মধ্যে আলো-আঁধারীর খেলা চলে নিরন্তর। মনে হয় এই বুঝি নাগালের মধ্যে, অথচ দুহাতে জাপটে ধরতে গেলে হাত ফসকে পালিয়ে যায় নিমেষে। তাঁর বিরহের গানকে মনে হয় জীবনের জ্বালামুখ থেকে গড়িয়ে পড়া গরম লাভা— একান্তভাবেই মানবের ক্লান্ত হিয়ার করুণ মিনতি—
‘এতো ভাল বাসতাম বন্ধুরে
সে গেল ছাড়িয়া।
কত কাল আর রাখবো বলো
এ পরাণ বান্ধিয়া।’
অপেক্ষার গুরুভার কবির প্রেমসত্তার বুক টনটন করে উঠছে। চাতক যেমন মেঘ জলের অপেক্ষায় থাকে, তেমনি কবিও অপেক্ষায় অস্থির হয়ে উঠেছেন হাজার না বলা কথা মনের মধ্যেও গুমরে গুমরে কাঁদছে। ‘কইবার ছিল অনেক কথা/না বলা এই প্রাণের ব্যথা...’। প্রেমাস্পদকে বলার জন্য যে কথারা ভীড় করে থাকে, তার সবটাই কি প্রকাশ করা সম্ভব? গানের শেষ দিকে কবি তার কাক্সিক্ষত ভালোবাসার সত্তাকে পাখির রূপকে বর্ণনা করেছেন—
‘সাধ কইর্যা বানাইলাম বাসা
ওরে সর্বনাশা ভালোবাসা
পোড়াইয়া করল খাসা
ওরে খাঁটি সোনার নাই তামাশা
দেখল ভুবন ঘুরিয়া।’
ভালবাসার বিশুদ্ধ কুঠির নির্মাণ করেছেন কবি, সেই ভালবাসা বিরহের আগুনে পুড়ে পুড়ে বিশুদ্ধ হয়েছে, যেমন করে স্যাকরা কষ্টিপাথরে ঘঁষে পরীক্ষা করে নেন সোনার বিশুদ্ধতা, তাপে গলিয়ে খাদ আলাদা করে নেন, তেমনি বিরহ সত্তা দিয়ে প্রেম সত্তাকে বিশুদ্ধ করে তোলেন।
দুঃখের নদী অতিক্রম করে শত ঝঞ্ঝা পেরিয়ে যদি তার প্রেমাস্পদকে কবি না পান, তাহলে তার থেকে দুর্ভাগ্যের আর কী হাতে পারে! মনপাখি যদি ফাঁকি দিয়ে উড়াল দেয় তাহলে পৃথিবীর সব সম্পদই তুচ্ছ, বেঁচে থাক নিরর্থক—
‘দুঃখের নদী পার হইয়া
তার দেখা না পাইয়া
কেমন করে রই।’
এ গানে যেন মতুয়া গায়ক সাধক কবিয়াল তারক সরকারের বিরহ তাপিত প্রাণের নির্যাস শাশ্বত একটি গানের সাথে সহজতুল্য— ‘আমার মন নিল যে জন, হরে পাই কোথায় তারে’— এই অনুসন্ধান সর্বকালে প্রেমিক মনে চলে নিরবধি। কবি তারক গোসাঁই যখন বলেন—
‘তোরা গৃহে যেতে বলিস সই,
কী ধন লয়ে গৃহে রই
আমার সাধনের ধন কই,
বুকে ধানটা দিলে হয় পোড়া খই
সই রে তোরা দেখনা আমার বুক ধরে ...’
তখন তার সঙ্গে কবি তুষ্টচরণের এই পঙ্ক্তি এক বিন্দুতে মিলে যায়— ‘তার দেখা না পাইয়া/কেমন করে রই।’
কবি তুষ্টচরণ ভবপারের আশায় বসে জীবননদীর তীরে। জীবনের সঞ্চিত কর্মফলই এ নদী পারের পারানি। এই অন্তিম মুহূর্তে দাঁড়িয়ে জমা-খরচের খাতা খুলে দেখেছেন সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই, যা পাটনির খেয়ার ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করা যায়; অর্থাৎ তিনি কপর্দক শূন্য। এই নিঃস্ব দশায় ও কবি ভেঙে পড়েন না; বরং প্রার্থিত পরমাত্মার সঙ্গে মিলেমিশে এক হতে চান। এই আশা মনের মধ্যে দানা বাঁধলেও তিনি সচেতনভাবেই জানেন পরম সত্তাকে কোনোভাবেই ধরা যায় না। আসন্ন মিলনে তাই বিচ্ছেদের সুর বেজে ওঠে—
‘বুকের মধ্যে অনেক আশা
সুখের দিনে দুঃখের দশা
রাখো ভিখারি সাজাইয়া’
এ গান যেন চণ্ডীদাসের কণ্ঠের সেই মিলন কালে আসন্ন দুঃখর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়— ‘দুহু কোরে দুহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া।’ গানের উপান্তে কবি লিখেছেন এক দিব্য-চেতন কথা; যে চৈতন্য আত্মার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক সৃজনে সাধনার পথে অতীন্দ্রিয় উপলব্ধি ঘটায়—
জ্যোতির আশা গতিহারা
সতী যেমন পতিহারা
রেখেছ আমায় জ্যান্ত মরা
দুরাশা ভুলিয়া।
এই গানের অনুরণন খুঁজে পাই লালন সাঁইজীর গানে— ‘জ্যান্তে মরার সেই প্রেমসাধনা, সে কি পারবি তোরা।’ এ এক কঠিন প্রেমের সাধনা যেখানে কামনা-বাসনা থেকে সরিয়ে নিয়ে অহৈতুকী প্রেমের কাছে নিজেকে সমর্পণ করত হয়। তবেই শরীর-মন পবিত্র।
‘আমি তোর তালাসে কান বা দেশে’ শিরোনামের গানে কবি দেশে দেশে চারণ করে ফিরছেন মনের মানুষের সন্ধানে। কিন্তু কোথায় পাবেন সেই মনের মানুষকে যে হরণ করেছে তার শরীর-মনকে, নিশি-দিন যার জন্য নয়ন ঝরছে অবিরত—
আমি তোর তালাসে
কোনবা দেশে
ঘুরি একা একা (বন্ধু)
পাব কি তোর দেখা।’
যার জন্য বিশ্বচরাচর আকুল, তিনি সহজলভ্য নন। তাকে খুঁজে পাওয়া দুরাশার সামিল, তা কবি জানেন। পাশাপাশি এ-ও জানেন যাঁকে তিনি খুঁজছেন সে আসলে অন্তরাত্মারই স্বরূপ। তাই তাঁকে বাইরে অনুসন্ধান করে বিশেষ সুবিধে হবে না। সে কারণে কল্পলোকে, মনোজগতে খুঁজে চলেছেন অন্তরাত্মাকে শুদ্ধ করে অশ্রুপ্লাবনে নিষ্কাম প্রেমের স্বরূপ জাগ্রত করতে চাইছেন গানের মধ্য দিয়ে—
‘এবার স্বপন ঘরে খুঁজব তোরে
মন পবনে বিমান ঘুরে
হৃদয়-কূলে নয়ন জলে
রইবে প্রেমের খেলা।’
কবির এ প্রেম পূজায় পরিণত, যা সমর্পণের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে।
নৈমিত্তিক জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে কবির দিশেহারা অবস্থা, এই পর্যায়ে প্রাণের দেবতার কাছে পার্থিব বস্তু প্রার্থনার দিকে পা বাড়াননি তিনি, চেয়েছেন শুধু অপার্থিব ভালবাসা—
‘তুমি বলে দাও গো প্রাণের সাঁই
আমি ভালবাসা কোথায় পাই’
এই ক্লেদাক্ত পৃথিবীতে সেই ভালোবাসার মধ্যেও রয়েছে অন্তহীন প্রবঞ্চনা; যাকে কবি খাদমিশ্রিত গহনা সোনার সঙ্গে তুলনা করেছেন—
‘চাইলে সোনার হার গড়াতে
খাদ তো কিছু হয় মেশাতে
ভালবাসা থাকলে তাতে
দোষের কিছু নাই।’
কবির মনে হয়েছে প্রেমের ধুলো নিলে সব কিছু পরিশুদ্ধ হয়। সংসারের আবর্তে জীবনকে তিনি নিখাদ ও শুদ্ধ করতে তৎপর হয়েছেন।
‘বসিয়া দুজনে যদিও ভুবনে’ শিরোনামের গানে ব্রজধামের আলোকে গোপন প্রেমের মিলন-ক্ষেত্র রচনা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। প্রেম যে নিভৃতের অনুভব, ঐকান্তিক মিলনের মধ্য দিয়ে তা পূর্ণতা পাবে, আলোচ্য গানে তা পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে—
‘দুঃখ যদি থাকে মনে
ঝরিয়া নয়নে
মিশিও বাদল সনে
যাবে মনে মনে।’
জলের মত প্রেমও তরল এবং নরম, যা চরাচরময় বিস্তৃত। দুঃখের অশ্রুভরা যে বেদনা তা চারিত হয় এক মন থেকে অন্য মনে, লোক থেকে লোকান্তরে। কবির চাওয়া এই প্রেম যেন ফিরে ফিরে আসে রথ হয়ে, জয় হয়, বিজয় নিশান উড়িয়ে। ব্যক্তির অন্তরের ব্যথাকে এখানে সর্বজনীন করে তোলাই লক্ষ্য।
বিরহের কবি তুষ্টচরণ। তার বিরহের গানগুলো অন্তরের উৎসারণ। বর্ষার বারিধারা কবির অন্তরকে সিক্ত করে; দুচোখ অশ্রু সজল হয়ে ওঠে। প্রিয়ার স্মৃতিতে হৃদয় ভরে বন্যা নামে। ব্যথার কাজলে তিনি লেখেন—
‘তোমারে পড়িছে মনে
হেন শুভ ক্ষণে
বাদলে কাঁদন আনে
কীসের সন্ধানে।’
কবির হৃদয় হাজার কথার সম্ভারে ভরা। সে কথা শুধু বাদল দিনেই বলা যায়। সেই অস্ফুট কথা শুনতে কান পাততে হয় নির্জনে। এই গুহ্য প্রেমগাথা যেন একান্তে সংরক্ষিত থাকে—
‘শুনি কথা কানে কানে
রাখিও যতনে
আপনি আপন কীসে
নিরালা নির্জনে।’
এ গানে প্রিয়ার শতস্ফূর্ত আবেশ অনায়াসলব্ধ। গানের মধ্যে কবি বলেছেন ‘এ বাদল বরিষণে/টানে কেবা টানে’— বর্ষার বারিধারা কবির হৃদয় টেনে নিয়ে যায়; কেন কার নির্দেশিত এই টান তো কবির অনুভবের বাইরে।
তুষ্টচরণের গানের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য
১. লৌকিক এবং আধ্যাত্মিক প্রেমের সংমিশ্রণে গানগুলো পাঠক-শ্রোতাকে গভীরভাবে আবিষ্ট করে রাখে;
২. গানগুলো মূলত একক কণ্ঠের, কোনও দোসর নেই;
৩. সুনির্দিষ্ট তাল বর্জিত গানগুলো;
৪. সমগ্র বিরহী আত্মার অন্তর্লীন অনুভবের সাংগীতিক বহিঃপ্রকাশ;
৫. সরল ভাষায় গানগুলো প্রকাশিত, কখনও কখনও রূপক-প্রতীকের আশ্রয়ে বিধৃত;
৬. ক্ষণিক মিলনের স্মৃতি বিরহকে ঘনীভূত করে তোলে;
৭. জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষের সংগীত;
৮. এ গান যেন মানব-মানবীর দেউলিয়া দহনের নির্যাস।
সংগীতগুলো বিষণ্নতার, দুঃখের; নাই, নাই, হাহাকারের, দূর-দূরান্তের। আমি আর সে— এ দুইয়ের মধ্যে শূন্যতা আছে বলেই বিচ্ছেদের হাহাকার ধ্বনিত। প্রেম এক মায়ামৃগ, তার ঠিকানা দরদি মানুষের মন। সেখানে মিলন যতটা সত্য, তার থেকেও বিচ্ছেদ অধিক সত্য। না পাওয়ার তীব্র বেদনা গানগুলোর পরতে পারতে ছড়ানো, নিঃসঙ্গতা এখানে ফুপিয়ে ফুপিয়ে ওঠে। তার সত্তা স্বরূপে সে স্বতন্ত্র। বিচ্ছেদরিক্ত যন্ত্রণার অনুরণন সংগোপনে মনের মধ্যে দাবদহন সৃষ্টি করে তুষের আগুনের মত ধিক ধিক করে জ্বলতে থাকে; এ জ্বালা বিষম জ্বালা। সবমিলিয়ে বলা যায় তুষ্টচরণের বিরহসংগীত অমরত্বের দাবি রাখে।
সহায়ক তথ্যপঞ্জি
১. নীলরতন মুখোপাধ্যায় (সম্পা.), চণ্ডীদাসের পদাবলী, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, কলকাতা, ১৩২১ বঙ্গাব্দ;
২. হীরামন পোদ্দার, ‘বিজয় সরকারের বিচ্ছেদী গান : কান্নার স্থাপত্য’, করিমগঞ্জ মহাবিদ্যালয়, বাংলা বিভাগ, ঠড়ষ-ওও, ওংংঁব-ওঠ, এপ্রিল, ২০১৪
৩. তারকচন্দ্র সরকার, শ্রীশ্রী মহাসংকীর্ত্তন, মতুয়া সাহিত্যমন্দির, ওড়াকান্দী, বাংলাদেশ, ১৪১৮ বঙ্গাব্দ, ২৫ নং গান
৪. শঙ্করীপ্রসাদ বসু, চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতি, বুকল্যান্ড, কলকাতা, ১৩৬৭ বঙ্গাব্দ
৫. বিরাট বৈরাগ্য, দেড়শত বছরের মতুয়া পদগীতি সাহিত্য, তৃতীয় খণ্ড (সংগীত সাধক তুষ্টচরণ বাগচী, বাংলাদেশ), মতুয়া গবেষণা পরিষদ, ১ম প্রকাশ, কলকাতা, ২০২৩
৬. তুষ্টচরণ বাগচীর অপ্রকাশিত গান, ড. তপন বাগচীর (পরিচালক বাংলা একাডেমি বাংলাদেশ) সৌজন্যে প্রাপ্ত।
এমএইচএস

