‘আমাদের সময়’ পত্রিকার সম্পাদক হলেন আবু সাঈদ খান

ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১৭:১৯

আবু সাঈদ খান। ছবি : সংগৃহীত
প্রথিতযশা সাংবাদিক আবু সাঈদ খান নতুন ধারার দৈনিক আমাদের সময়-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত দৈনিক আমাদের সময় কার্যালয়ে এক আনন্দঘন পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বগ্রহণ করেন তিনি। এর মাধ্যমে আবু সাঈদ খান আমাদের সময়ের বিদায়ী সম্পাদক একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও লেখক আবুল মোমেনের স্থলাভিষিক্ত হন।
এ ছাড়া গতকাল দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক পদে যোগদান করেছেন দৈনিক সমকাল পত্রিকার সাবেক সহকারী সম্পাদক এহসান মাহমুদ। তিনি মাঈনুল আলমের স্থলাভিষিক্ত হন।
আমাদের সময়ের প্রকাশক ড. খোন্দকার শওকত হোসেন, বিদায়ী সম্পাদক আবুল মোমেনসহ প্রতিষ্ঠানটির সাংবাদিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় নতুন সম্পাদক আবু সাঈদ খানকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। অনুষ্ঠানে পিএইচপি ফ্যামিলির সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোস্তফা জামাল হোসেন ও ডিজিএম সৈয়দ এনামুল হক, ইউনিক গ্রুপের গ্রুপ প্রশাসন, নিরাপত্তা ও সুরক্ষা এবং সংকট ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক রাফিউল হাসাইন এবং মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক মো. আব্দুল মোতালেবসহ দৈনিক আমাদের সময়ের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দৈনিক আমাদের সময়ের সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেন আবুল মোমেন। তাকে আমাদের সময়ের পরিবারের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বিদায় জানানো হয়। অনুষ্ঠানে আমাদের সময়ের বিভিন্ন বিভাগের নেতৃস্থানীয় সাংবাদিকরা বক্তব্যে আবুল মোমেনের সঙ্গে তাদের কর্মকালীন অভিজ্ঞতার স্মৃতি রোমন্থন করেন এবং তার ভবিষ্যৎ সাফল্য ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেন।
সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করে আবু সাঈদ খান বলেন, পত্রিকা হলো একটা টিমওয়ার্ক। এককভাবে কোনো সম্পাদকের পক্ষে এগোনো সম্ভব নয়। টিম যদি দুর্বল হয় বা তাতে ঘাটতি থাকে তাহলে এগোনো যায় না। এ জন্য সবাইকে সক্রিয় হতে হবে। এখানে অনেকের দুঃখ থাকে, কষ্ট থাকে। এগুলো নিয়েই এগোতে হবে। আমরা এই দুঃখ-কষ্ট দূর করার চেষ্টা করব। আমাদের সময় সম্পর্কে আমি আগেও শুনেছি, এখানে ভালো একটা টিম আছে। এ সময় তিনি আমাদের সময়কে আরও সামনে এগিয়ে নিতে সবাইকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণের আহ্বান জানান।
বিদায়ী সম্পাদক আবুল মোমেন সম্পর্কে আবু সাঈদ খান বলেন, আবুল মোমেন প্রথিতযশা একজন সাংবাদিক। তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। উনার লেখা আমি পড়েছি, পড়ি। তিনি এখানে এখনও লিখবেন এবং আমাদের সময়ের মানোন্নয়নের জন্য আমাদের পরামর্শ দেবেন বলে আশা রাখি।
বিদায়ী সম্পাদক আবুল মোমেন বলেন, আমাদের সময়ে আসি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে। আমি জুনে বোধ হয় ছেড়েছি (প্রথম আলো), আর জুলাইয়ে এখানে (আমাদের সময়) যোগ দিয়েছি। তখন আমি ঠিক করেছিলাম, আমি যতদিন থাকব উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে থাকব। ডেইলি রীতি-নীতি যেটা নিউজপেপারের সেটার সঙ্গে থাকব না। সেভাবেই চলছিল। আমি চট্টগ্রাম থেকে খানিকটা ফোনে এবং লম্বা লম্বা অনেক প্রস্তাব লিখে, পরিকল্পনা দিয়ে চেষ্টা করতাম পত্রিকাটাকে একটা লাইনে আনার। আর যখন অফিসে আসতাম তখন তো সামনাসামনি মিটিং হতো। তো সেভাবে চলতে চলতে একটা পর্যায়ে এডিটর চেঞ্জ হচ্ছে, তখন আলী হোসেন সাহেব (পিএইচপি গ্রুপের পরিচালক) ফোন করে বললেন, ‘আপনাকে তো একটু দায়িত্ব নিতে হবে’। আমি বললাম, এসব ডেইলি ঝামেলার মধ্যে যেতে চাচ্ছিলাম না এই বয়সে। ‘না, কিছু দিনের জন্য হলেও নিতে হবে’। সেই কিছু দিন প্রায় দুই বছর হয়ে গেল।

আবুল মোমেন আরও বলেন, অনেক পত্রিকায় অনেক দল-উপদল তৈরি হয়, যেটা এখানে নেই। এখানে সবাই পত্রিকাটাকে ভালোবেসে একসঙ্গে থাকতে চায় এবং মান্যতা, গণ্যতাটা এখানে অনেক ভালো। নতুন সম্পাদক আবু সাঈদ খানের নেতৃত্বে আমাদের সময় এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিদায়ী সম্পাদক।
আমাদের সময়ে সম্পাদক পদে যোগদানের আগে আবু সাঈদ খান দৈনিক সমকাল প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে সহকারী সম্পাদক, উপসম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি দৈনিক মানবজমিনে সহকারী সম্পাদক ও দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধকালে আবু সাঈদ খান মুজিবনগর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘উত্তাল পদ্মা’ সম্পাদনা করেন। তার বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ফিরে দেখা একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুর, বিকল্প চিন্তা বিকল্প রাজনীতি, উপেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ উপেক্ষিত জনগণ, ভাষার লড়াই, স্লোগানে স্লোগানে রাজনীতি, জাপানদর্শন, প্রশ্নবিদ্ধ রাজনীতি ও সমকালীন সমাজ, বোবা পাহাড়ের কান্না ও অন্যান্য। তিনি নিজ গ্রামে ‘বিভাগদী রিজিয়া রশীদ প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এবং ‘বিভাগদী শহীদস্মৃতি মহাবিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সূত্র : আমাদের সময়