Logo

গণমাধ্যম

পুরোনো প্রক্রিয়ায় নতুন দুটি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:১৯

পুরোনো প্রক্রিয়ায় নতুন দুটি টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স

দেশে নতুন দুটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের (টিভি) অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। চ্যানেল দুটির নাম ‘নেক্সট টিভি’ ও ‘লাইভ টিভি’।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার যে প্রক্রিয়ায় টেলিভিশনের লাইসেন্স দিত, সেই একই প্রক্রিয়ায় নতুন দুটি টিভির অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

নেক্সট টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান তুহিন। তিনি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। এনসিপি গঠিত হওয়ার পর তিনি দলটির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হন।

লাইভ টিভির লাইসেন্স পেয়েছেন আরিফুর রহমান নামের আরেকজন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বছর ছয়েক আগে পড়াশোনা শেষ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি একটি ইংরেজি দৈনিকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ছিলেন। তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ছিলেন। তবে এনসিপিতে যোগ দেননি।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, টিভি চ্যানেল প্রতিষ্ঠা ও চালানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা আরিফুর রহমান তুহিন ও আরিফুর রহমানের আছে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে। কী বিবেচনায় তাদের লাইসেন্স দেওয়া হলো, সে বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছিল। তবে উত্তর পাওয়া যায়নি।

অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন টিভির অনুমোদন আগের প্রথা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। আর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ২৮টি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দেওয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সরকার-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদেরা এসব চ্যানেলের লাইসেন্স পেয়েছেন। এসব চ্যানেলের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল।

বর্তমানে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সংখ্যা ৫০। এর মধ্যে ৩৬টি পূর্ণ সম্প্রচারে আছে। ১৪টি সম্প্রচারের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদিত আইপি টিভির (ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন) সংখ্যা ১৫। টিভি চ্যানেল অনুমোদন পেতে আরও কিছু আবেদন জমা আছে।

নেক্সট টিভির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে গত ২৪ জুন। এটি ‘৩৬ মিডিয়া লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনসিপি নেতা আরিফুর রহমান তুহিন। অফিসের ঠিকানা পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার করাতিটোলা লেন।

জানতে চাইলে আরিফুর রহমান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এ টিভি চ্যানেলের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন বগুড়ার বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম হাফিজুর রহমানের ছেলে এ কে এম গোলাম হাসনাইন। তিনি সৌদি আরব প্রবাসী ও সৌদি আরব (পূর্বাঞ্চল) বিএনপির সভাপতি।

গোলাম হাসনাইন বলেন, তিনি ৩৬ মিডিয়া লিমিটেডের অন্যতম পরিচালক। সেখানে তার বিনিয়োগ রয়েছে।

সরকারি সূত্রমতে ‘লাইভ টিভি’ অনুমোদন পেয়েছে গত ১৪ জুলাই। এর মালিকানায় থাকা আরিফুর রহমানের প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মিনার্ভা মিডিয়া লিমিটেড’। ঠিকানা ১৪৩ নম্বর সড়ক, গুলশান-১।

জানতে চাইলে আরিফুর রহমান বলেন, কাগজপত্র-সংক্রান্ত আরও কিছু কাজ বাকি। আশা করেছেন, আগামী বছর সম্প্রচারে যেতে পারবেন। কীভাবে বিনিয়োগের অর্থের সংস্থান হচ্ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার সঙ্গে বিনিয়োগকারী রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ টিভির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকছেন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের শীর্ষ পর্যায়ের পদে দায়িত্ব পালন করা একজন সাংবাদিক। তিনিই মূলত নতুন টিভি গোছানোর কাজটি করছেন।

দুই টিভি চ্যানেলের বাইরে একটি ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশনের (আইপি টিভি) অনুমোদনও দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অনুমোদন পাওয়া আইপি টিভির নাম ‘চেঞ্জ টিভি প্রেস’। এর প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক আমিরুল মোমেনীন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘এই সরকার আসার পর আমাদের আশা ছিল, প্রত্যাশা ছিল নিয়মনীতির মধ্যে সব সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু দেখছি একের পর এক সিদ্ধান্ত সেই আগের নিয়মেই হচ্ছে। টেলিভিশন অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাই। এ মুহূর্তে দুটি টিভির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, আরও হয়তো দেওয়া হবে, তা কোন নীতিতে? এখন তো নীতিই নেই, নীতি তো প্রণয়নই করা হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো বিতর্ক হবে না এমন সিদ্ধান্তই নেবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ মুহূর্তে বিদ্যমান টিভিগুলোর অধিকাংশের অবস্থাই কাহিল। অনেক টিভিতে ঠিকমতো বেতন হচ্ছে না। কোনো কোনো টিভিতে কর্মী ছাঁটাইও হচ্ছে। বিজ্ঞাপনের বাজারও ছোট হয়ে আসছে। নতুন টিভি অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব চিন্তা করা হয়েছে কি না, তা অজানা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা এই সরকারের কাছ থেকে আশা করেছিলাম ভালো কিছু হবে। কিন্তু সেটা তো হলো না। সেই আগের নিয়মে মুখ দেখে বিবেচনা করা হচ্ছে, পরিবর্তনটা তাহলে কোথায়?’

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

গণমাধ্যম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর