গণমাধ্যম সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার কিছুই করেনি : কামাল আহমেদ
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৩০
সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কামাল আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত
গণমাধ্যম সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার কার্যত কিছুই করেনি বলে অভিযোগ করেছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও দ্য ডেইলি স্টারের কনসাল্টিং এডিটর কামাল আহমেদ। কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ৯ মাস পার হলেও কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় তিনি হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে দেশের সম্প্রচার সাংবাদিকদের সংগঠন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) ষষ্ঠ সম্প্রচার সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কামাল আহমেদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের যেসব প্রস্তাব ছিল, তার একটি প্রস্তাবও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে— এমন কথা আমি বলতে পারছি না। এ জন্য আমি দুঃখিত। অন্তর্বর্তী সরকার যে কিছুই করেনি, সেটাই বাস্তবতা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তার উদ্দেশে কামাল আহমেদ বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তার ঘাড়ে দোষ চাপানো যাবে না। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে দায় চাপানো যায়, কারণ সরকার কিছুই করেনি।
কামাল আহমেদ জানান, গত ২২ মার্চ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়। সে সময় আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর একটি আলাদা তালিকা দিতে বলা হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, শুনেছি প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রতিবেদন নিয়ে ব্যস্ততা দেখালেও বাস্তবে সেটি বিভিন্ন দপ্তর ও অধিদপ্তরে মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে যে মতামত এসেছে, তার সারকথা হলো— এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যাবে না।
বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে একীভূত করে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গঠনের সুপারিশের কথাও তুলে ধরেন কামাল আহমেদ। তিনি বলেন, এ ধরনের মৌলিক সংস্কারের উদ্যোগ নিতেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপদেষ্টাদের নিয়ে দুবার কমিটি গঠন করা হয়েছে— একবার শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারকে আহ্বায়ক করে, আরেকবার পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। সিদ্ধান্ত একটাই— কিছু করা যাবে না।
এখন আর সময়ও নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, চাইলে সরকার অন্তত ২০টির মতো সুপারিশ একটি নির্দেশনা জারি করেই বাস্তবায়ন করতে পারত। সেটি না হওয়াই হতাশা ও ক্ষোভের কারণ।
সাংবাদিক শাহনাজ শারমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী সারা হোসেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিজেসির উপদেষ্টা খায়রুল আনোয়ার, যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিজেসির ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ, বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের দেশীয় প্রতিনিধি মো. আল মামুনসহ অন্যরা।

