Logo

জাতীয়

ফ্যাক্টচেক

তিন মাসে ৮৩৭ ভুল তথ্য শনাক্ত রিউমর স্ক্যানারের

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২০:০৮

তিন মাসে ৮৩৭ ভুল তথ্য শনাক্ত রিউমর স্ক্যানারের

ছবি : সংগৃহীত

২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশে ৮৩৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসে এ সংখ্যা ছিল ৬৫৪টি। চলতি বছর ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যু এবং জাতীয় ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষিতে ভুল তথ্যের হার বেড়েছে। ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায়ও ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ভুল তথ্যের পরিমাণ প্রায় ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে একক ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে, যার মধ্যে ৮০ শতাংশ তথ্য ছিল তার পক্ষে। ধর্ষণ সংক্রান্ত ইস্যুতে ইন্টারনেটে নিয়মিত আলোচনা চলেছে এবং এই ইস্যুতেই সর্বাধিক ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। দলীয়ভাবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার হয়েছে।

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে ভুয়া তথ্যের আতুড়ঘর হয়ে উঠেছে ফেসবুক। মেটার মালিকানাধীন এই প্ল্যাটফর্মে প্রথম তিন মাসে ৭৪৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে আটটিরও বেশি ভুয়া তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়েছে। এরপর মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে ১৬২টি, ইউটিউবে ১২৪টি এবং টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে ৬৭টি করে ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে। শুধু সামাজিক মাধ্যম নয়, দেশের গণমাধ্যমেও ৪২টি ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে। পাশাপাশি ভারতীয় গণমাধ্যমেও অন্তত ২০টি ঘটনা ভুলভাবে উপস্থাপন করে বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।

রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণ বলছে, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে শনাক্ত হওয়া ভুল তথ্যের মধ্যে পুরোপুরি মিথ্যা ঘটনাসমূহের সংখ্যা ছিল ৫০৭টি। বিভ্রান্তিকর রেটিং দেওয়া হয়েছে ২২৬টি এবং বিকৃত রেটিং দেওয়া হয়েছে ১০২টি তথ্যের ক্ষেত্রে। হাস্যরসাত্মক পোস্টকেও বাস্তব দাবির প্রেক্ষিতে দু’টি ক্ষেত্রে যাচাই করতে হয়েছে। এই সময়ে তথ্য যাচাই করা হয়েছে ৩৩৩টি, ছবি যাচাই করা হয়েছে ১৬৩টি এবং ভিডিও যাচাই করা হয়েছে ৩৪১টি।

রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত থাকায় রাজনৈতিক বিষয়ক ভুল তথ্যের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ছিল। ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ৩৪৬টি রাজনৈতিক ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে, যা মোট ভুল তথ্যের প্রায় ৪১ শতাংশ। জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে ছড়ানো ভুল তথ্যের হার ছিল প্রায় ২৯ শতাংশ। ধর্মীয় বিষয়ে ভুল তথ্যের হার আগের তুলনায় কিছুটা কমলেও এখনো ৯ শতাংশের মতো রয়েছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় ধর্মীয় ভুয়া তথ্যের হার ৩৮ শতাংশ কমলেও, রাজনৈতিক ও জাতীয় ইস্যুতে ভুল তথ্যের হার যথাক্রমে ৪৭ ও ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দলীয় ভিত্তিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি ভুয়া তথ্যের শিকার হয়েছে, যেখানে তিন মাসে তাদের বিরুদ্ধে ৮১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে শেখ হাসিনাকে ঘিরে, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই তাকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকেও ২৮টি ভুল তথ্যসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও নেতাকর্মীদের ঘিরে ১১৫টি ভুল তথ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নেতিবাচক প্রচারণা সহ্য করতে হয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপিকে ঘিরে আটটি এবং দলটির নেতাকর্মীদের ঘিরে ৪৬টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে ছড়ানো ভুয়া তথ্যের ৭৮ শতাংশই ছিল নেতিবাচক, আর তারেক রহমানকে ঘিরে ছয়টি ভুল তথ্য ছড়ালেও এর বেশিরভাগই ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’কে নিয়ে প্রথম প্রান্তিকে দুটি এবং দলটির নেতাদের ঘিরে ২০টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে জন্ম নেওয়া ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংগঠনকেও ২০টি ভুল তথ্যের মাধ্যমে টার্গেট করা হয়েছে, আর সংগঠনটির নেতাদের নিয়ে ছড়ানো হয়েছে ৩০টি ভুল তথ্য। হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলমকে নিয়ে ১০টি করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে খান তালাত মাহমুদ রাফি ও নুসরাত তাবাসসুমকে নিয়ে তিনটি করে এবং হাসিব আল ইসলাম, তিলোত্তমা ইতি, উমামা ফাতেমা ও আব্দুল হান্নান মাসুদকে নিয়ে একটি করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও ভুল তথ্যের ধারাবাহিক প্রচারের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। তিন মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে ৪৪টি এবং ড. ইউনূসকে ঘিরে ৫১টি ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যার ৯০ শতাংশেরও বেশি নেতিবাচক উপস্থাপন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে মোট ১৭৯টি এবং ড. ইউনূসকে নিয়ে ১৬১টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের নয়জন উপদেষ্টা এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলমকেও নিয়ে তিন মাসে ৩৪টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোও ভুয়া তথ্যের নিয়মিত শিকার হয়েছে। প্রথম তিন মাসে এসব বাহিনীকে নিয়ে মোট ৬০টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ঘিরে সর্বাধিক ৪২টি ভুয়া তথ্য প্রচার হয়েছে, যেখানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে লক্ষ্য করে ১১টি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি এবং বিমান বাহিনীকেও একাধিক ভুয়া তথ্যের মাধ্যমে টার্গেট করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ধর্ম, বিনোদন এবং ক্রীড়া অঙ্গনে ভুল তথ্যের হার কিছুটা কমেছে। ধর্মীয় বিষয়ে ৭২টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রমজান ও ঈদুল ফিতরকে ঘিরে যথাক্রমে ১৮ ও ছয়টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে ২৮টি ভুল তথ্যের মধ্যে তামিম ইকবাল ছিলেন সবচেয়ে বেশি শিকার (ছয়টি), আর নাজমুল হোসেন শান্ত চারটি ভুয়া তথ্যের শিকার হন। বিনোদন জগতে ২৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে, যেখানে শাকিব খান ও ইলিয়াস কাঞ্চন সবচেয়ে বেশি টার্গেট হয়েছেন (দুইটি করে)।

ডিআর/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর