Logo

জাতীয়

ঘোষণা হয়নি রোডম্যাপ

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত

মো. বাবুল আক্তার

মো. বাবুল আক্তার

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৩২

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত

রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন-পরবর্তী, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক চর্চা শুরু হয়। যদিও সরকার এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়ও ঘোষণা করেছেন।

এরই মাঝে আগে স্থানীয় সরকার নাকি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তা নিয়েও দলগুলোর মধ্যে দেখা যায় নানা মত। বিশেষ করে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিপরীতমুখী অবস্থান প্রকাশ্যে আসে। এদিকে আওয়ামী রাজনীতির মাঠে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী এবং জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং আরও কয়েকটি দলের নেতারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে নির্বাচনের কথা বলছেন।

তবে রাজনীতির মাঠে এনসিপি এখনো শক্ত অবস্থানে না থাকলেও জামায়াত ও বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হলেও অভ্যন্তরীণভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের প্রধান বড় এ দল দুটি। বিএনপি বলছে, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সব পর্যায়ের ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা।  আর জামায়াতের দাবি, হাসিনা আমলে অলিখিত রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞার পর এবার সংসদীয় এলাকাগুলোয় জনসংযোগ বাড়াতে মনোযোগ তাদের।

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, দলগুলোর নির্বাচনের প্রস্তুতি হতে হবে পলিসিনির্ভর। সঙ্গে নির্বাচন ঘিরে সন্ত্রাস ও কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে সতর্ক থাকারও আহ্বান। 

অন্যদিকে, নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়তে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন এই কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। কমিশন আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। তবে এই সময়টা কবে চূড়ান্ত হবে, তা আপনারা উনার মুখ থেকেই শুনবেন।

এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকারপ্রধান যেখানে একটি টাইমফ্রেম ঘোষণা করেছেন। হয় আগামী ডিসেম্বর, নাহয় ২০২৬ সালের শুরুর দিকে। আমরা ডিসেম্বরকে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছি। সুতরাং, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরেই আমাদের চিন্তাভাবনা এখন পর্যন্ত। ইসির এই প্রস্তুতির মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার কারণে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি চলতি বছর জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি ভোটমুখী প্রস্তুতিও শুরু করেছে। জনসংযোগ বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করছে দেশের প্রধান এ রাজনৈতিক দলটি। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে দলটির শীর্ষ নেতা জানান, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল— সব পর্যায়ের নেতারা ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমাদের নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সাতদিন সময় প্রয়োজন। আমাদের প্রার্থীরা তো দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। প্রায় সবাই আগেও কয়েকটা নির্বাচন করেছেন। নির্বাচন আমাদের জন্য নতুন কোনো কিছুই নয়। যারা নতুন রাজনৈতিক দল করেছে তাদের হয়তো নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রস্তুতি দরকার, সময় দরকার। বিএনপির জন্য এটি প্রযোজ্য নয়।

দেশের আরেক বড় রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল বলছেন, আওয়ামী লীগ আমলে সারা দেশে দলীয় কার্যালয় বন্ধসহ অলিখিত রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞায় ছিল তাদের দল। জুলাই বিপ্লবের পর নির্বাচনি এলাকাগুলোতে কর্মিসভ্য থেকে শুরু করে সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে জনসংযোগ বাড়িয়ে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

জামায়াত সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের অত্যাচার, হামলা, মামলা আমাদের কারাজীবন, রিমান্ড আমাদের পাঁচজনকে একত্রিত হতে দেয়নি। ফলে আমরা দীর্ঘদিন থেকে মানুষের কাছে যাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিলাম। নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থী যারা তাদের যেতে বলেছি। তারা সেখানে যাচ্ছেন, গণসংযোগ করছেন, মিটিং করছেন, সমাবেশ করছেন, কর্মী সম্মেলন করছেন।

যে সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সেসময় বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের মতো পরিচয়বাদী রাজনীতি বাদ দিয়ে দলগুলোর নির্বাচনের প্রস্তুতি হতে হবে জনমুখী। এর সঙ্গে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও কালো টাকার ব্যবহার বন্ধের পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থে দলগুলোকে কথাবার্তায়ও সতর্ক থাকার আহ্বান তাদের।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, নেতাদের কথাবার্তায় একটু সতর্ক হতে হবে। যাতে তারা গোটা জাতির কাছে একটা উল্টা ম্যাসেজ না দেন। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, সহিংসতা, কালো টাকার ব্যবহার আমরা এত কিছুর পরে ওই কোনো কিছুই দেখতে চাই না। একটা সুন্দর নির্বাচন চাই।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শাফী মো. মোস্তফা বলেন, পলিটিক্যাল রাইভালরি থাকবে। সেখানে যেন ডিহিউমানাইজেশন না আসে। সেখানে যেন আইডেন্টিটি পলিটিকস কাজ না করে।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই ভোটের প্রতি নাগরিকদের আস্থা ফিরবে বলে মনে করছে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল।

এটিআর/


Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর