বিশেষ ক্ষমতা আইন ফ্যাসিবাদী : গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৫৬

বিশেষ ক্ষমতা আইনকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। সংগঠনের বিবৃতিতে এই আইন ব্যবহারে ‘রাষ্ট্রীয় স্বৈরাচার ও নাগরিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন’ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
মডেল মেঘনা আলমের দ্রুত মুক্তি এবং ১৯৭৪ সালের এই বিতর্কিত আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৯ এপ্রিল (বুধবার) রাতে মেঘনা আলমের বাসায় পুলিশ পরিচয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিরা ঢুকে দরজা ভেঙে তাকে তুলে নিয়ে যায়। তাকে পুরো একদিন ‘নিখোঁজ’ রেখে ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আদালত বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেন।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আটক করার মুহূর্তে মেঘনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করে পুলিশের পরিচয় নিশ্চিত করতে এবং থানায় নিজে যেতে চাওয়ার কথা বললেও কোনো কিছুই আমলে নেওয়া হয়নি। বরং, ঘটনার পর তার লাইভ ভিডিও ডিলিট করা হয় এবং পুলিশ প্রথমে আটকের কথা অস্বীকার করে। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরদার হলে ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আটক স্বীকার করে বলা হয়, ‘জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার হুমকিস্বরূপ ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টার কারণে’ বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিশেষ ক্ষমতা আইন (১৯৭৪) একটি ফ্যাসিবাদী আইনের ধারা, যার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আগে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করেছেন। অথচ এই আইন ব্যবহার করেই সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতের অন্যায় আচরণ ও প্রতারণা ঢাকতে একজন নারীকে বাড়িতে হামলা করে তুলে নিয়ে তাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে বহু গুম ও স্বেচ্ছাচারী আটকের ভিত্তি তৈরি করে নাগরিকের মানবাধিকারকে নিষ্পেষিত করা হয়েছিল। জুলাইয়ে শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এরকম আইনের ব্যবহার পুনরায় ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো একটি ফ্যাসিবাদী আইনের অপব্যবহার করে একজন নাগরিককে এভাবে আটক করায় রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও মানবাধিকার উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সংগঠনটি আরও বলেছে, রাষ্ট্র যদি একজন কূটনীতিকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জের ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে নাগরিকের অধিকার হরণ করে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং কূটনৈতিক প্রশ্নে দ্ব্যর্থহীন নতজানুতা প্রকাশ পায়।
ডিআর/এমজে