Logo

জাতীয়

বৈশাখের সংস্কৃতি পুনর্গঠনের কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:৪৯

বৈশাখের সংস্কৃতি পুনর্গঠনের কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

পহেলা বৈশাখের সংস্কৃতি পুনর্গঠনের দাবিতে জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির সামনে প্রতীকী প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজনের চেষ্টা করে ‘বাংলাদেশের জনগণ’ নামের একটি সংগঠন। তবে পুলিশের বাধায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই তা স্থগিত হয়ে যায়।

তারা এসময় শিল্পকলার এক নম্বর গেটের বিপরীত পাশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির মুখ্য সংগঠক মাসুদ জাকারিয়া।লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ঘোষণা করছি যে-পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী জেয়াফত' শীর্ষক সংস্কৃতি বিনির্মাণধর্মী প্রতীকী কর্মসূচির এন্তেজাম করা হয়েছে। এ দেশে মুসলমানদের চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি উদযাপনের লক্ষ্যে এই দিন আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে গরু জবেহ করব এবং গণ-জেয়াফত কর্মসূচিতে শামিল হবো। 

উল্লেখ্য, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের নামে প্রায় তিন দশক ধরে আমাদের সংস্কৃতিতে পৌরাণিক ও সাম্প্রদায়িক মোটিফ যুক্ত করে ভারতীয় সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করা হয়েছে, যা এখনো ধারাবাহিকভাবে চলছে। 

চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রযোজনায় 'আনন্দ শোভাযাত্রা' থেকে 'মঙ্গল শোভায-ত্রা' হয়ে ওঠার এই আয়োজন এখন হিন্দু ধর্মীয় প্রতীক (বাঘ দেবী দুর্গার বাহন, প্যাঁচা লক্ষ্মীর বাহন, ময়ূর ভারতের জাতীয় পাখি ও দেবতা কার্তিকের বাহন) আর মুসলমানের বিকৃত কেরিকেচারে পরিপূর্ণ। অথচ বাংলাদেশের জনজীবনে পহেলা বৈশাখের মূল প্রতিপাদ্য ছিল হালখাতা, গ্রামীণ মেলা, শিরনি বিতরণ, বৃষ্টির গান, মুর্শিদী-ভাটিয়ালী ইত্যাদি। আজকে সেগুলোর জায়গা দখল করেছে এক বিকৃত, কৃত্রিম, চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতি। এই প্রক্রিয়ায় দেশের মূলধারার মানুষকে বিদ্রুপের পাত্র বানানো হয়েছে এবং সেটাকেই 'জাতীয় সংস্কৃতি' হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে কিছু চিহ্নিত গোষ্ঠী ও মিডিয়া। যদিও 

অনেক অনেক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত পুনরায় 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' থেকে 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা' নামকরণ করেছে এ বছর, তবু এটা খুবই ক্ষণস্থায়ী সিদ্ধান্ত এবং পূর্বের ধারাবাহিকতায় মূর্তিচিহ্ন উপস্থাপনের মাধ্যমেই এটা পালন হবে, এরকমই এ পর্যন্ত সব ধরনের প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে। 

সাংস্কৃতিক আগ্রাসনেরই নামান্তর। বহুকাল ধরে বিকশিত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জীবনধারা ও রীতি- নীতিকে এটি কেবল উপেক্ষাই করেনি, রীতিমতো ঠাট্টা-বিদ্রুপ-লাঞ্ছনার পাত্রে পরিণত করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এ ধরনের একপাক্ষিক অনুষ্ঠান অনতিবিলম্বে বাতিল করা জরুরি। এতে একটি ন্যায়ভিত্তিক, ধর্মসচেতন ও গণসম্পৃক্ত নতুন জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব হবে। 'বৈশাখী জেয়াফত' সেই নব নির্মাণের প্রতীকী সূচনা, তথাকথিত 'মঙ্গল শোভাযাত্রা'র বিরুদ্ধে সচেতন প্রতিবাদ। 

আমাদের দাবি ও আহ্বান : 

'মঙ্গল শোভাযাত্রা' ও সংশ্লিষ্ট কর্মসূচির সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ বন্ধ করতে হবে। জাতীয় সংস্কৃতি ও দিবসগুলোর ক্ষেত্রে সকল ধর্ম, জাতি ও জনগোষ্ঠীর স্বাতন্ত্র্য, বিশ্বাস, ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নীতি প্রণয়ন ও অনুসরণ করতে হবে। 

বাংলাদেশের সহজাত জীবনধারা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে নতুন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক সংস্কৃতি বিনির্মাণের জন্য জাতীয় আলোচনার সূচনা করতে হবে। 

'বৈশাখী জেয়াফত' কেবলমাত্র একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি নয়, বরং এটি আমাদের সাংস্কৃতিক পুনর্গঠনের আহ্বান, নতুন পথচলার প্রতীক যা ঐতিহ্য, বিশ্বাস, ন্যায় এবংগণ-আকাঙ্ক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠবে।

আমরা দেশের সকল চিন্তাশীল নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীদের আহ্বান জানাই আপনারা এই আয়োজনে সংহতি প্রকাশ করুন, গণমুখী নতুন সংস্কৃতি বিনির্মাণে শরিক হোন। 

এসআইবি/এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর