Logo

জাতীয়

নির্বাচন কমিশন

কার্যক্রম নেই মাঠে, নিবন্ধন চায় অনেক দল

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:০৩

কার্যক্রম নেই মাঠে, নিবন্ধন চায় অনেক দল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে সাড়া দিয়ে ৬৫টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। একইসঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’সহ ৪৬টি দল নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। ইসি এসব আবেদনে সাড়া দিয়ে নিবন্ধনের সময়সীমা দুই মাস বাড়িয়ে আগামী ২২ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করেছে। 

তবে নিবন্ধনের জন্য আবেদনকারী অনেক দলই রাজনৈতিক অঙ্গনে অপরিচিত এবং তাদের কোনো দৃশ্যমান রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই।

নিবন্ধন চাওয়া রাজনৈতিক দলের তালিকা
জাস্টিস পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জেনারেল পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ সংরক্ষণশীল দল (বিসিপি), জনতা কংগ্রেস দল, বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি (বাজাপা), বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদল, বাংলাদেশ জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ নাগরিক আন্দোলন পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ জনগণের দল (বাজদ), ফরোয়ার্ড পার্টি, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি, স্বাধীন জনতা পার্টি, আমজনতার দল, সংবিধানবিষয়ক জনস্বার্থ পার্টি সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), বাংলাদেশ গণঅভিযাত্রা দল, ন্যাশনাল লেবার পার্টি, জনতা মহাজোট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জনতার ঐক্য, জাতীয় জনতা পার্টি, সাধারণ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশ জনগণের পার্টি এবং আরও কিছু দল।

রাজনৈতিক অঙ্গনে নেই তৎপরতা
নিবন্ধনের আবেদনকারী অনেক দলেরই নেই সুসংগঠিত কাঠামো কিংবা বাস্তব কোনো রাজনৈতিক তৎপরতা। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধনের জন্য ইসির গণবিজ্ঞপ্তিতে অনেক দল সাড়া দেয়। আবেদন করলেই নিবন্ধন পাওয়া যায় না। নিবন্ধনের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছিল। যাচাই-বাছাইয়ের বিভিন্ন ধাপে ৯১টি দল বাদ পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মাত্র দুটি দল—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)-কে নিবন্ধন দেওয়া হয়, যা সে সময় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।’

নিবন্ধনের শর্তাবলি
‘রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন, ২০২০’ অনুযায়ী নিবন্ধনের জন্য তিনটি প্রধান শর্তের যেকোনো দুটি পূরণ করতে হয়। 

১. স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত যেকোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসনে জয়ী হওয়ার রেকর্ড থাকতে হবে।

২. যেকোনো একটি আসনে দলীয় প্রার্থী মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত পাঁচ শতাংশ পেতে হবে। 

৩. একটি কেন্দ্রীয় কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয়, ১০০টি উপজেলায় অফিস এবং প্রতিটিতে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটারের সদস্য তালিকা থাকতে হবে।

এছাড়াও দলীয় গঠনতন্ত্রে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনকে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে না রাখা, এবং নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারণে তৃণমূলের ভোটের ভিত্তিতে প্যানেল তৈরির সুস্পষ্ট বিধান রাখার কথাও আইনে উল্লেখ রয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মুসলেমউদ্দীন আহমেদ বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকদের রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার থাকলেও আমাদের দেশে অনেক দল কেবল নির্বাচন এলে দেখা যায়। এই দলগুলো পরবর্তীতে বড় দলের ছত্রছায়ায় চলে যায় এবং সুবিধা গ্রহণ করে। গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিত, নামসর্বস্ব দলগুলোকে নিবন্ধন না দেওয়া।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নিবন্ধনের জন্য নির্দিষ্ট আইন রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে অনেক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে এবং সময় বৃদ্ধির অনুরোধ জানিয়েছে। আমরা সকল দিক বিবেচনা করে ২২ জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছি। সময় শেষ হলে কয়েক ধাপে যাচাই-বাছাই করে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নেওয়া হবে। আইন অনুযায়ী যেসব দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হবে, কেবলমাত্র তারাই নিবন্ধন পাবে।

এসআইবি/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর