
প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশ সীমান্তে সম্প্রতি বেড়েছে ভারত থেকে কথিত ‘বাংলাদেশি’দের পুশ-ব্যাক বা জোর করে ফেরত পাঠানোর ঘটনা। অথচ, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি—এটি পুরোপুরি একটি আইনবহির্ভূত প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে যে ঘটনা ‘পুশ-ব্যাক’, তা আসলে এক ধরনের পুশ-ইন, যার কোনো আন্তর্জাতিক বা দ্বিপাক্ষিক স্বীকৃতি নেই।
বিবিসি বাংলার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ভারতের গুজরাট ও রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলোতে আটক ব্যক্তিদের একাংশকে কোনো রকম আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই সীমান্তে নিয়ে এসে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ অভিমুখে।
বিবিসি বলছে, সম্প্রতি সীমান্ত দিয়ে যাদের পুশ-ব্যাক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিরাও ছিলেন, যাদের গুজরাট থেকে আনা হয়েছিল। আবার রাজস্থান থেকে যারা ধরা পড়েছেন, তাদের মধ্যে ১৪৮ জনের প্রথম দলটিকে বিশেষ বিমানে চাপিয়ে বুধবার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ত্রিপুরার আগরতলায়।
বৃহস্পতিবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তে যে পুশ-ব্যাকের চেষ্টা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ রাজস্থানে ধরা পড়া কথিত বাংলাদেশি কি না, তা নিশ্চিত করা যায় নি।
গুজরাট ও রাজস্থান দুই রাজ্যেরই পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশের যেসব নাগরিকের পরিচয় তারা নিশ্চিত করতে পেরেছেন, তাদের সকলকেই ফেরত পাঠানো হবে। ওড়িশাসহ অন্য কয়েকটি রাজ্যেও বাংলাদেশের এমন নাগরিকদের ধরা হচ্ছে, যারা পুলিশের কথায় ‘অনুপ্রবেশকারী’।
আইন অনুযায়ী পুলিশ কাউকে ধরলে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নিয়ম আছে। এই নিয়ম বিদেশিদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য।
ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’-এর প্রধান কিরীটী রায়ের বক্তব্য অনুযায়ী, একজন বিদেশিকে চিহ্নিত করার পর তার বিরুদ্ধে 'ফরেনার্স অ্যাক্ট'-এর ১৪ নম্বর ধারায় মামলা করা, আদালতে তোলা এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হলে সাজা শেষে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কথা। কিন্তু বাস্তবে এসব কিছুই মানা হচ্ছে না।
ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, একজন বিদেশিও দেশের ভেতরে অবস্থানকালে আইনগত অধিকার পাবেন। অথচ, এই পুশ-ব্যাক প্রক্রিয়ায় কোনো আদালত, কোনো মামলা, কিছুই নেই— বলেন কিরীটী রায়।
পরিযায়ী শ্রমিকদের সহায়তাকারী সংগঠন ‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’-এর অভিযোগ, গুজরাট ও রাজস্থানে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র একজনের ক্ষেত্রেই আদালতে তোলা হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। বাকিদের সরাসরি ‘জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে’ পাঠিয়ে পরে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বিএসএফ বা রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না এলেও কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, আইনি প্রক্রিয়ায় এগোলে সময় লাগে অনেক। মামলা, জেল, তারপর কূটনৈতিক যাচাই—এই জটিলতা এড়াতেই শত শত আটক ব্যক্তিকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে পুশ-ব্যাক করা হচ্ছে।
এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘যারা বাংলাদেশি, তাদেরই ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এতে সমস্যা কোথায়?’
উল্লেখ্য, সাধারণ পুশ-ব্যাকের কোনো আইনি ভিত্তি নেই ভারতে। একমাত্র নারী ও শিশু পাচারের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই বিএসএফ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে ফেরত পাঠায়, যা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত।
- এটিআর