Logo

জাতীয়

জুলাই যোদ্ধাদের আর্তনাদ : মুক্তির স্বপ্ন কাতরাচ্ছে হাসপাতালের বিছানায়

জয় খ্রীষ্টফার বিশ্বাস

জয় খ্রীষ্টফার বিশ্বাস

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ১৮:৪৫

জুলাই যোদ্ধাদের আর্তনাদ : মুক্তির স্বপ্ন কাতরাচ্ছে হাসপাতালের বিছানায়

ছবি : সংগৃহীত

২০২৪ সালের জুলাই মাসের স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনে যারা বুক পেতে রক্ত দিয়েছিলেন, আজ তারা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন। কারও চোখ নেই, কারও শরীর পঙ্গু, কেউ বিষপানে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। অথচ একবছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রীয় কোনো সহানুভূতি বা কার্যকর চিকিৎসা সহায়তা মেলেনি এসব যোদ্ধাদের।

আহত আন্দোলনকারী সোহানুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা না, খামাখা অপেক্ষা পাচ্ছি।’ 

তিনি জানান, আগে ৩৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করতেন, সন্তানকে দুধ-ডিম কিনে খাওয়াতে পারতেন। আজ সেই সামর্থ্য নেই।

চোখের জল মুছে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের একাংশ আমাদের চিকিৎসা নিয়ে তালবাহানা করছে। কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না দিয়ে শুধু একটা বিছানা দিয়ে দায় সারছে।’

আরেক আহত যোদ্ধা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই চোখ হারিয়েছে, আমি পা হারিয়েছি। অথচ উপদেষ্টারা একবারও খোঁজ নেয় না, দেখে না আমরা বেঁচে আছি না মরে গেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমরা জ্যান্ত লাশ হয়ে বেঁচে আছি। ক’দিন আগেই কয়েকজন ভাই বিষ খেয়েছে। চিকিৎসা নেই, খাবার নেই, আয়ের কোনো পথ নেই—এই হতাশা নিয়ে মানুষ আর কতদিন বাঁচে?’

রাকিবুল নামের আরেকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকার এক হাসপাতালে পড়ে আছেন, পরিবার তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে পারছে না।

আহত নাজমুল বলেন, ‘আমাদের অনেকের চোখ নেই, কিন্তু প্রতিদিন অপমান দেখে আরেকবার অন্ধ হয়ে যাই। হাসপাতালে এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে আমাদের নিয়ে যেন খেলা চলছে। আমরা কি ব্যবহার্য জিনিস?’

আহত সেলিম প্রশ্ন তোলেন, ‘এক সহযোদ্ধা আরেকজনের নামে মামলা করছে। এটা কি কাকতালীয়, নাকি এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক হাত আছে?’

জুলাই আন্দোলনের পর আহতদের সহায়তায় ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’ গঠন করা হলেও এখন তার কোনো হদিস নেই বলে অভিযোগ।

রাকিব নামের এক আহত যোদ্ধা বলেন, ‘ফাউন্ডেশনটা কোথায়? তারা কেন আমাদের চিকিৎসা নিয়ে কোনো জবাবদিহি করে না?’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু নীতিহীন লোক নিজেদের স্বার্থে আমাদের সংগ্রামকে বিকিয়ে দিচ্ছে।’

আহত যোদ্ধারা বারবার বলছেন, ‘আমরা চিকিৎসা চাই, ভাতা চাই, আর চাই একটি নিরপেক্ষ তদন্ত।’

তারা দাবি করেছেন, এখন পর্যন্ত—

  • কেউ উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
  • মানসিক চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের কোনো কর্মসূচি নেই।
  • কেউ ক্ষতিপূরণ পাননি।
  • মামলার কোনো স্বাধীন তদন্ত হয়নি।

এই যোদ্ধারা আমাদের ইতিহাসের জীবন্ত স্মারক। তাদের চোখ, পা, হাত আর রক্তের বিনিময়ে যে বিবেকের জন্ম হয়েছিল, আজ যদি সেই রাষ্ট্রই তাদের পাশে না দাঁড়ায়— ইতিহাস কি ক্ষমা করবে?

এক আহত যোদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা মরে গেলে শহীদ লেখা হতো। কিন্তু বেঁচে আছি বলেই জ্যান্ত লাশ হয়ে রয়েছি।’

এ দায় কার?

জেসি/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর