Logo

জাতীয়

বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন

শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি বাতিল

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৫, ০৮:১৫

শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার ‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতি বাতিল

বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অধ্যাদেশ আকারে এ সংশোধিত আইন জারি করা হয়। 

নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ চার শতাধিক এমএনএ ও এমপিএকে আর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবে না। তাদের পরিচয় এখন থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এতদিন তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন।

সংশোধিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শুধুমাত্র তাঁরা গণ্য হবেন, যাঁরা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন, প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং সরাসরি অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি ভারতীয় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নিবন্ধিত এবং সেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও এই সংজ্ঞার আওতায় আসবেন।

সংশোধিত আইনে বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ ও এমপিএদের। তাঁরা আগে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃত হলেও, এখন থেকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। এ তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানসহ প্রায় ৪০০ জনের বেশি প্রবাসী সরকারসংশ্লিষ্ট নেতার নাম রয়েছে।

‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’দের পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে

১. মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বিদেশে অবস্থান করে পেশাগত বা কূটনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রাখা বাংলাদেশিরা।

২. মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী, দূত, চিকিৎসক, নার্স ও সহকারী কর্মী।

৩. প্রবাসী সরকারের এমএনএ ও এমপিএ যারা পরে গণপরিষদের সদস্য হয়েছিলেন।

৪. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশের ভেতরে–বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকরা।

৫. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

নতুন সংজ্ঞায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, হানাদার ও দখলদার বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত সকল নারী—যাঁদের 'বীরাঙ্গনা' বলা হয়—তাঁরা এখন থেকে সরাসরি ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃত হবেন। একইভাবে ফিল্ড হাসপাতালসমূহে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক, নার্স এবং চিকিৎসা সহকারীরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।

অধ্যাদেশে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো—যেখানে পূর্ববর্তী আইনে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেখানে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের অর্থও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করে বলা হয়েছে, ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দেশীয় সহযোগীদের বিরুদ্ধে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত যুদ্ধই হচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধ’।

অধ্যাদেশটি জারি করার আগে গত ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে আইনটি শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর আইন মন্ত্রণালয় বিষয়টি পর্যালোচনা করে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠায় এবং ৪ জুন রাতে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

এর আগে ২০২২ সালে প্রণীত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে প্রবাসী সরকারসংশ্লিষ্ট এমএনএ, এমপিএসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচ শ্রেণিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। নতুন আইন সে স্বীকৃতি বাতিল করেছে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী জানান, ‘খসড়াটি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের মতামতের ভিত্তিতেই আইনের এই সংস্কার করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত পর্যালোচনার পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে অধ্যাদেশটি জারি করা হয়েছে।’

ডিআর/এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর