
বুধবার (১১ জুন) লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে বক্তব্য প্রদান করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচনের পর গঠিত পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার কোনো আগ্রহ তার নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাদের কাজ হলো সফল ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, যা নির্বাচন দ্বারা সম্পন্ন হবে।
বুধবার (১১ জুন) লন্ডনের চ্যাথাম হাউজে রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে বক্তব্য প্রদানের পর এক প্রশ্ন-উত্তর পর্বে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনোভাবেই না, একেবারেই না। আমি মনে করি, আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্য সেটা করতে আগ্রহী হবেন না’।
একজন সাংবাদিক জানতে চান, অধ্যাপক ইউনূস কি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত পরবর্তী সরকারের অংশ হতে আগ্রহী বা সে ধরনের অবস্থানে রয়েছেন কি-না। উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস সাফ জানিয়ে দেন, তাদের দায়িত্ব হলো- যে রূপান্তর চলছে সেটা ঠিকমতো শেষ করা এবং যখন তারা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন, তখন জনগণ যেন সন্তুষ্ট থাকে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে নির্বাচনটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।’
এর আগে লন্ডনের প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রামের পরিচালক বেন ব্ল্যান্ড এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. চিয়েটিজ বাজপাইয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ড. ইউনূস।
তার আগে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জনাথন পাওয়েলের সঙ্গে বৈঠক করেন। লন্ডনের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়।
এর আগে চার দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার (১০ জুন) যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্র জানায়, তাঁর এই সফরে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাজ্যের সমর্থনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এর পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টিতে প্রাধান্য দেবে বাংলাদেশ। ১৪ জুন প্রধান উপদেষ্টার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
দেশে ফেরার আগে শুক্রবার (১৩ জুন) ড. ইউনূস লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক করবেন। এখন দেশের রাজনীতি-সচেতন সবার দৃষ্টি লন্ডনের এই বৈঠকের দিকে। বৈঠকে ভোটের দিনক্ষণ, সংস্কার, জুলাই সনদসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে কী বোঝাপড়া হয়, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে।
এই বৈঠককে ‘মেজর পলিটিক্যাল ইভেন্ট’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সাক্ষাৎ হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে, নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, এই সাক্ষাৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান তারেক রহমান। এরপর আর দেশে ফেরেননি। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একের পর এক মামলায় তিনি খালাস পেতে শুরু করেন। সবশেষ গত ২৮ মে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় স্ত্রী জুবাইদা রহমানের সঙ্গে তারেক রহমান খালাস পান। এর আগে গত ৬ মে জুবাইদা রহমান দেশে ফিরলেও তারেক রহমান এখনও লন্ডনেই রয়েছেন।
বিএনপি দাবি করে আসছে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। তবে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘এই ব্যাপারে আমরা দলগত কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা আশা করছি, সরকার বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনা করবে।’
এমআই