-684e386d8d98b.jpg)
বর্ষার আগমনে উচ্ছ্বসিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন- ‘বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ় এলো’... অথবা ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, আসে বৃষ্টির সুবাস বাতাস বেয়ে। এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি, পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি…।’ অন্যদিকে এটি মহাকবি কালিদাসের স্মৃতি দিবস। প্রাচীন ভারতের সংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি কালিদাস রচিত সাতটি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে মেঘদূত খণ্ডকাব্যটি সেই সময়ে অসামান্য কাব্যগুণে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে মেঘমাশ্লিষ্টসানুং বপ্রক্রীড়াপরিণত গজপ্রেক্ষণীয়ং দদর্শ।’ যার অর্থ- আষাঢ় মাসের প্রথম দিনে (অভিশপ্ত যক্ষ প্রিয়তমা বিরহে) রামগিরি পর্বতের গাত্রে ক্রীড়ারত প্রমত্ত হস্তীর ন্যায় রমণীয় মেঘখণ্ডকে অবলোকন করিতেছিলেন।
বাংলা পঞ্জিকামতে আজ পয়লা আষাঢ়। ১৪৩২ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসের প্রথম দিন। আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। এটি বর্ষা মৌসুমের অন্তর্ভুক্ত দুই মাসের প্রথম মাস। নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। বর্ষায় গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। নদীতে উপচে পড়া জল, আকাশে থাকে মেঘের ঘনঘটা। গ্রীষ্মের দাবদাহে বাংলার প্রাণ-প্রকৃতি যখন পোড়ে, প্রশান্তির ফল্গুধারা হয়ে তখন নামে বর্ষার ঝুম বৃষ্টি। বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরও কত ফুলের সুবাস। লেবুপাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। উপচে পড়া পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য।
নগরজীবনে বর্ষণমুখর সন্ধ্যা অনেকের জন্য নানা ব্যঞ্জনে রসনাবিলাসের উপলক্ষ হয়ে আসে। অন্যদিকে শ্রমজীবী ছাপোষা মানুষের জন্য তা যাতনার। তবু বর্ষা বাঙালির জাতীয় জীবনে নতুনের আবাহন। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে আনে জীবনেরই বারতা। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাংলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই। সারা বছরের খাদ্য-শস্য-বীজের উন্মেষ তো ঘটবে বর্ষার ফেলে যাওয়া অফুরন্ত সম্ভাবনার পলিমাটি থেকে।
ডিআর/বিএইচ