Logo

জাতীয়

সংবাদপত্রের কালো দিবস আজ

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১০:৫৫

সংবাদপত্রের কালো দিবস আজ

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর

সংবাদপত্রের কালো দিবস আজ। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালীন আওয়ামী বাকশাল সরকার সরকারি প্রচারপত্র হিসেবে চারটি পত্রিকা রেখে বাকি সব পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করে দেয়। এতে সাংবাদিকসহ কয়েক হাজার সংবাদকর্মী রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন।

শেখ মুজিব সরকারের ন্যক্কারজনক হস্তক্ষেপের ফলে রুদ্ধ হয়ে যায় গণমাধ্যম, রাজনৈতিক, গোষ্ঠীগত ও বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতা। সংবাদমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। সরকারের এমন নিবর্তনমূলক অধ্যাদেশ জারির দিনটিকে ১৯৭৬ সাল থেকে সাংবাদিক সমাজ সংবাদপত্রের কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। 

এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের উদ্যোগে  সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে (দ্বিতীয় তলায়) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ ছাড়া সাংবাদিক নেতারা ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।

জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিন বছর পর সংসদে আনা হয়েছিল সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী এই সংশোধনীর ফলে জাতির ঘাড়ে চেপে বসে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশালের জগদ্দল পাথর। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছর ১৬ জুন বিতর্কিত বাকশাল সরকার সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। সরকারি প্রচারপত্র হিসেবে চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রকাশ করা হয়। এতে সাংবাদিকসহ কয়েক হাজার সংবাদকর্মী বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনযাপনে বাধ্য হন। সংবাদমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক দিন এটি। এ জন্য সাংবাদিক সমাজ প্রতি বছর এ দিনটিকে ঘৃণা ও ধিক্কারের সাথে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ’৭৫ সালের নভেম্বরে সিপাহি-জনতার বিপ্লবে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সংবিধানে জনগণের কুক্ষিগত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করে বাকশাল সরকারের সব প্রকার অগণতান্ত্রিক কালো ধারা বাতিল এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

তবে আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে- তখনই সংবাদমাধ্যমকে টার্গেট করেছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথ অনুসরণ করে দলটি। বিগত ১৬ বছরে জনপ্রিয় অনেক সংবাদপত্র, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ানসহ অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে শত শত সংবাদকর্মীকে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দেয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের কালো থাবায় সংবাদমাধ্যম ছিল পুরোপুরি শৃঙ্খলিত। সরকারের রক্তচক্ষুর সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে। বস্তুনিষ্ঠ ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। অকল্পনীয় হুমকির মুখে পড়ে সাংবাদিকদের জীবন ও জীবিকা। সাগর-রুনিসহ অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। পিটিয়ে আহত করা হয়েছে অগণিত গণমাধ্যমকর্মীকে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ নানা কালাকানুন করে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের কারারুদ্ধ ও কণ্ঠরোধ করা হয়। অপরদিকে এক শ্রেণীর দলীয় সাংবাদিক সরকারের তোষামোদিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে সংবাদপত্র ও টেলিভিশন নিরপেক্ষতা হারায়। ফলে গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যায় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

গত বছরের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে এসেছে। তবে এখনো অনেক গণমাধ্যমে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা বহাল তবিয়তে থেকে অপতথ্য পরিবেশন করে জাতিকে বিভ্রান্ত করে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের চাপ না থাকায় অনেক গণমাধ্যম স্বপ্রণোদিত হয়ে তোষামোদিতে নেমেছে। এ ছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে ‘ভিউ ব্যবসার’ কারণেও ভুল তথ্য পরিবেশন করছে কোনো কোনো অনলাইন মাধ্যম। এ কারণে সংবাদপত্রের প্রতি জনমনে এখনো পুরোপুরি আস্থা ফেরেনি, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য এখনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

গণমাধ্যম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর