ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ
হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে যেসব বিরূপ প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১৩:৪০
-6859050548885.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের জেরে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক বাণিজ্যপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্বের তেল রপ্তানির অন্যতম প্রধান এই রুট প্রতিদিন বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহের প্রায় ২০-৩০ শতাংশের পথ। ফলে এই প্রণালী বন্ধ হলে এর আন্তর্জাতিক প্রভাব হবে ব্যাপক—বাংলাদেশও এর বাইরে নয়।
জ্বালানি সংকটের শঙ্কা
হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে বিকল্প ও দীর্ঘ পথে জাহাজ চলাচল করতে হবে, এতে করে আমদানির সময় ও খরচ বহুগুণে বাড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম হু-হু করে বাড়বে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের আমদানি করা ডিজেল, অকটেন, ফার্নেস অয়েলসহ অন্যান্য জ্বালানির দামে। এতে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বড় অংশ এখনও জ্বালানিনির্ভর। সরবরাহ বিঘ্নিত হলে বাড়বে লোডশেডিং। তেলের দাম বাড়লে পরিবহন খরচ বাড়বে, যার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
বাণিজ্যেও পড়বে প্রভাব
বাংলাদেশ রপ্তানি খাতে (বিশেষ করে তৈরি পোশাক) কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের একটি বড় অংশ আমদানি করে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য এশীয় দেশ থেকে। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে জাহাজ চলাচলে ব্যাঘাত ঘটবে, বাড়বে পরিবহন সময় ও খরচ। এতে বৈদেশিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতাও হ্রাস পেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তুতির ঘাটতি
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক (বিকল্প: আরিফ হোসেন খান) বাংলাদেশের খবরকে বলেন, “এ নিয়ে আমাদের তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে তেলের বাজারে চাপ তৈরি হবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। বিকল্প হিসেবে কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর দিকেই নজর দেব আমরা।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে জ্বালানি তেল আমদানি করে, যার বেশিরভাগই আসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত থেকে। যুদ্ধ যদি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তবে সেটি আমাদের জন্য আরও বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।”
আগাম প্রস্তুতির আহ্বান
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে সেটি একটি বৈশ্বিক সংকটে রূপ নেবে এবং বাংলাদেশ এর প্রভাব থেকে বাদ যাবে না। আগাম কৌশল হিসেবে জ্বালানি নিরাপত্তা নীতিমালার আধুনিকায়ন, কৌশলগত মজুদ ও বিকল্প আমদানি রুট প্রস্তুত রাখার উপর এখন থেকেই গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এএইচএস/এএ