সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা কথিত ছাত্র-জনতার হাতে হেনস্তা হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংগঠনটি বলছে, এ ধরনের ঘটনায় সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

সোমবার (২৩ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আসক জানিয়েছে, শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে অন্তত ৮৩ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এটি একটি সভ্য রাষ্ট্রে চরম নৈরাজ্যের ইঙ্গিত বহন করে।

এতে আরও বলা হয়, নির্বাচন ছাড়াই সরকার গঠনের অভিযোগে বিএনপি ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ একাধিক কমিশনারের বিরুদ্ধে মামলা করার ছয় ঘণ্টার মধ্যেই উত্তরা এলাকায় কে এম নূরুল হুদার বাসভবনে চড়াও হয় একদল ‘ছাত্র-জনতা’। তারা সাবেক এই সিইসির গায়ে ডিম ছুড়ে মারে। এরপর তাকে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা অবস্থায় ফ্ল্যাট থেকে টেনে নামিয়ে এনে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয়। পরে সেই জুতা দিয়েই তাকে মারধর করা হয়।

ঘটনার সময় উপস্থিত পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আসক। সংস্থাটি জানিয়েছে, পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। উল্টো হামলাকারীদের অনেকেই ফেসবুকে লাইভে গিয়ে নূরুল হুদাকে হেনস্তার দৃশ্য সম্প্রচার করে। সেই লাইভে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষে স্লোগান দিতে শোনা গেছে।

আসকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দলের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ এমন বক্তব্য ইতোমধ্যে বিএনপি ও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও অতীতে এ ধরনের ঘটনায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপের নজির নেই। বরং সরকারপ্রধানদের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা এসব সহিংস কর্মকাণ্ডে এক ধরনের পরোক্ষ সহযোগিতা বলেই মনে হচ্ছে। 

সংস্থাটি আরও বলেছে, সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা একজন নাগরিক এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাকে প্রকাশ্যে হামলা ও লাঞ্ছিত করা শুধু একজন ব্যক্তির নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের মর্যাদা, সংবিধান এবং আইনের শাসনের প্রতি সরাসরি আঘাত।

আসকের মতে, কেউ অপরাধ করে থাকলে তার বিচার একমাত্র আদালতের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। বিচারবহির্ভূতভাবে দণ্ড কার্যকর করা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এখতিয়ার নয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ ধরনের দুষ্কর্ম ঘটিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু রাখা হয়, তা ভবিষ্যতে আইনের শাসনের বদলে জনরোষনির্ভর ‘মব বিচার সংস্কৃতি’ প্রতিষ্ঠার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে সংস্থাটি দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে, যাতে নাগরিকের নিরাপত্তা ও দেশের সংবিধান রক্ষায় রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা প্রমাণিত হয়।

ডিআর/এমএইচএস