
প্রতীকী ছবি/ সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গঠিন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তরুণদের অংশগ্রহণে গুরুত্ব দিচ্ছে। এগিয়ে আসছেন তরুণরা। নির্বাচন কমিশন (ইসি)ও এ ধারা অব্যাহত রেখে তরুণ জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। তাই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হালনাগাদ নতুন ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ভোটার তালিকা আইন এবং ভোটার তালিকা বিধিমালা নিয়ে কাজ করছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, তরুণদের ভোট গণনার বাইরে রেখে নির্বাচন আয়োজন রাজনৈতিকভাবেও চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। কারণ এই শ্রেণির ভোটারের একটি বড় অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় এবং তারা রাজনৈতিক প্রচারণায় বড় ভূমিকা রাখে। এ প্রেক্ষাপটে ইসি ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালায় সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে বছরের যে কোনো সময় খসড়া ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের ক্ষমতা কমিশন হাতে পায়।
সংশোধনী অনুমোদিত হলে নতুন ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পথ সুগম হবে। আইন সংশোধন হলে প্রতিবছর ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি বছরের যে কোনো সময়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পাবে সংস্থাটি। তফসিল ঘোষণার আগেও যারা ১৮ বছর পূর্ণ করবেন, তারা যেন ভোট দিতে পারে। এজন্য ভোটার নিবন্ধন আইনে সংশোধন হচ্ছে। এতে ভোটার হওয়ার শেষ সময় ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ।
এ প্রসঙ্গে ইসি সূত্র জানায়, ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী ইতোমধ্যে একটি নির্দেশনা জারি করেছেন। যেটি সব আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচি ২০২৫ উপলক্ষে ভোটারযোগ্য নাগরিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ, সুপারভাইজার কর্তৃক যাচাই কার্যক্রম ও মাঠ পর্যায়ে নিবন্ধন কার্যক্রম গত ১১ এপ্রিল এবং প্রুফ রিডিংসহ ডেটা আপলোড কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ভোটারযোগ্য ব্যক্তির সরবরাহ করা তথ্য সঠিকভাবে সন্নিবেশিত না হয়ে থাকলে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকার সম্ভাবনা থাকবে। ফলে, ব্যক্তির সরবরাহ করা তথ্য সঠিকভাবে সন্নিবেশ করে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলত্রুটি এড়ানোর লক্ষ্যে পুনরায় প্রুফ রিডিং/সংশোধন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
ভোটার তালিকার আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতি অনুযায়ী পুনরায় প্রুফ রিডিং/সংশোধন কার্যক্রম আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে। নির্ধারিত সময়েই নির্বাচনের তফসিল জানানো হবে। সরকারের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হচ্ছে বিষয়টা এমন নয়। আবার এমনও নয় যে একদমই হচ্ছে না। নির্বাচনের তফসিলও নির্ধারিত সময়ে ঘোষণা করা হবে। আমরা যেটিকে কর্মপরিকল্পনা বলছি, অনেকেই সেটিকে রোডম্যাপ বলে থাকেন। এটি তৈরির কাজ আসলে আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই শুরু হয়েছে। এতে নির্ধারণ করা হয়েছে কোন কাজ কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে।
ইসি সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে ভোটার রয়েছে ১২ কোটি ৩৭ লাখের বেশি। এর মধ্যে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সের ভোটারদের তরুণ ধরা হয়েছে যাদের সংখ্যা ৩ কোটি ৫ লাখ। এর সঙ্গে আরও চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষে যুক্ত হবে আরও প্রায় ৫৯ লাখের বেশি। এতে মোট তরুণ ভোটার সংখ্যা দাঁড়াবে ৪ কোটির কাছাকাছি যা মোট ভোটারের ৩০ শতাংশ এবং একযোগে ২১ লাখের বেশি মৃত ভোটার শনাক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচনের আগে সময়মতো তালিকা হালনাগাদ করা না হলে একদিকে যেমন নতুন ভোটার বঞ্চিত হবেন, অন্যদিকে মৃত ভোটারদের নাম থেকে গিয়ে আইনি জটিলতার আশঙ্কা থাকবে।
ইসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে তৈরি হতে পারে নতুন আইনি জটিলতা। কারণ, বর্তমান আইনের বিধান অনুযায়ী, হালনাগাদে যুক্ত হওয়া নতুন ভোটারদের খসড়া তালিকা প্রকাশের তারিখ ২ জানুয়ারি, আর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের সময় নির্ধারিত ২ মার্চ। ফলে এই সময়ের আগে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে অনেক নতুন ভোটারই ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। একইসঙ্গে মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে, যা নির্বাচনকে ঘিরে প্রশ্ন তুলতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, নির্বাচন কমিশনের আইন সংস্কার সংক্রান্ত কমিটি ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা আইন সংশোধনের প্রস্তাব তৈরি করেছে, যা কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনী পাস হলে, কমিশনের নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বয়স ১৮ বছর হওয়া নাগরিকরাও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে ভোট দিতে পারবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমরা চাচ্ছি যেন তফসিল ঘোষণার আগেও যারা ১৮ বছর পূর্ণ করবেন, তারা যেন ভোট দিতে পারে। এজন্য ভোটার নিবন্ধন আইনে সংশোধন আনার কাজ চলছে। এতে ভোটার হওয়ার শেষ সময় ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ। জুলাই-আগস্টে তরুণরা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জন্য এক নতুন ইতিহাস গড়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন তারা। একইসঙ্গে আন্দোলনে নেমে যারা মারা গেছেন ও আহত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই তরুণ। সুতরাং আগামীতে বাংলাদেশে ফের যেন কোনো ফ্যাসিস্ট সরকারের উত্থান না ঘটে, সেজন্য তরুণদের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে সংস্কার ও রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।
এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পরিশুদ্ধ ভোটার তালিকা অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ ঘরে ঘরে গিয়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছে। আমরা সন্তুষ্ট, আমাদের টার্গেট ছিল ৬১ লাখ ৮৮ হাজার নতুন ভোটার নিবন্ধিত হবে। দেখা যাচ্ছে ৪৩ লাখের উপরে বাদ পড়া ভোটার নিবন্ধিত হয়েছে। নতুন হয়েছে ১৯ লাখ ৬৬ হাজার। মোট ৬৩ লাখ ভোটার নিবন্ধিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তফসিল ঘোষণার আগেও অনেকের বয়স ১৮ হবে। তারাও ভোট দিতে চায়, এবার এই তরুণরা নতুন ভোটার হবে। নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ হবে তাদের যেন আমরা ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে পারি এবং তারা যেন ভোট দিতে পারে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের ভূমিকা তুলে ধরে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই-আগস্টে তরুণরা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের জন্য এক নতুন ইতিহাস গড়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন তারা। একইসঙ্গে আন্দোলনে নেমে যারা মারা গেছেন ও আহত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই তরুণ। সুতরাং আগামীতে বাংলাদেশে ফের যেন কোনো ফ্যাসিস্ট সরকারের উত্থান না ঘটে, সেজন্য তরুণদের ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে সংস্কার ও রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তনে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।