Logo

জাতীয়

আরাকান আর্মির সাথে ‘লড়াইয়ের প্রস্তুতির’ কথা বলছে রোহিঙ্গারা

Icon

বিবিসি বাংলা

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ২০:২৬

আরাকান আর্মির সাথে ‘লড়াইয়ের প্রস্তুতির’ কথা বলছে রোহিঙ্গারা

ছবি : সংগৃহীত

শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গা তরুণদের অনেকে ‘জিহাদ’ ও ‘যুদ্ধ’ করতে প্রস্তুত। নিজ দেশে ফেরার প্রশ্নে স্বাধীন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নও দেখছেন তারা।বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে গত এক-দেড় বছরের মধ্যে এমন চিন্তাভাবনা ও মানসিকতা তৈরি হয়েছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে তাদের অনেকের সাথে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে একজন রোহিঙ্গা যুবক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা এদিকে থাকব না। আমরা মিয়ানমারে চলে যাব। প্রয়োজনে যুদ্ধ করে হলেও ওইটা নিয়া আমরা স্বাধীন করে থাকব।’

নিজের চিন্তাভাবনা আরও স্পষ্ট করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করব। আরাকান আর্মির সাথে। আমরা স্বাধীন (স্বাধীনতা) চাই।’

উখিয়া ক্যাম্পে আরেকজন যুবক বলেন, ‘আমাদেরকে যুদ্ধ করে নিজ দেশে স্বাধীনতা অর্জন করতে বলতেছে আরকি। সবাই জিহাদ করার জন্য তৈয়ার। এটার জন্য সবাই একতালে আরসা, আরএসও- দুনো দল (দুই দলই) সবাই মিলে ভালো কাজ করতেছে।’

ক্যাম্পে সাধারণ রোহিঙ্গা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন রোহিঙ্গারা স্বীকার করেছেন যে, ক্যাম্পে অন্তত চারটি সংগঠন ‘সশস্ত্র বিদ্রোহ’, ‘জিহাদ’ বা ‘যুদ্ধের’ জন্য উদ্বুদ্ধ করার তৎপরতায় লিপ্ত আছে।

এসব বিষয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়মিত ঘরোয়া বৈঠক এবং আলাপ আলোচনা হয়।

গোষ্ঠীগুলো হলো আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), ইসলামিক মাহাজ এবং আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)।

কক্সবাজারে সরেজমিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে এবং রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ক্যাম্পে নিয়মিত এসব বিষয়ে বৈঠক ও আলোচনা হয়।

সাধারণ রোহিঙ্গারা বলছেন, এই সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময় মিটিং করে তাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছে এবং মিয়ানমারের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে একটা ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরিরও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

কুতুপালং ক্যাম্পে একজন রোহিঙ্গা বলেন, বৈঠকে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে লিপ্ত না হওয়ার বিষয় এবং নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। সবাইকে সচেতন করা হয়।

‘প্রতি জায়গায় জায়গায় মিটিং করে। মিটিংয়ে এটা বলে যে, আমাদের যে রাইট, যদি সঠিকভাবে পাই, নিরাপত্তার ভিতরে থাকতে পারি, আমরা মিয়ানমারে চলে যাব। মিটিংয়ের মাঝে বলে যে এটা আমাদের দেশ না। এখানে কোনো ঝগড়া চলবে না। সবাই একমতে থাকবে। কোনো চুরি, ডাকাতি, মানুষ খুন করাকরি অন্য কোনোকিছু এখানে চলবে না।’

আইসিজির প্রতিবেদন এবং উদ্বেগ
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করতে পারে–এমন আশঙ্কা করে সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ আইসিজি।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সক্রিয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব স্থগিত করেছে এবং নতুন করে সদস্য নিয়োগ বাড়িয়েছে।

সক্রিয় গোষ্ঠীগুলো ধর্মীয় ভাষা ব্যবহার করে শরণার্থীদের রাখাইনে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করছে বলেও উল্লেখ রয়েছে আইসিজির প্রতিবেদনে।

আইসিজির প্রতিবেদনের লেখক এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বিষয়ক সিনিয়র কনসালট্যান্ট টমাস কেইন বিবিসি বাংলাকে বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংগ্রামী চেতনা সৃষ্টির জন্য তৎপরতা চলছে গত এক দেড় বছরে।

‘সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকদের দ্বারা ক্যাম্পে যে বর্ণনাটি ছড়ানো হচ্ছে, তা হলো-আমাদের ফিরে গিয়ে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে এবং আমাদের মাতৃভূমি পুনরুদ্ধার করতে হবে।

‘ক্রাইসিস গ্রুপের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক বার্তা, কারণ এই বিদ্রোহ আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সফল হবে না-যে বাহিনী মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছে। কিন্তু এর ফলে বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, সাধারণ নাগরিক এবং উভয় পক্ষের যোদ্ধাদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। এর পরিণতি হবে সত্যিই ধ্বংসাত্মক’ বলেন টমাস কেইন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৈঠক এবং সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে আইসিজির প্রতিবেদনে।

ক্যাম্প ও ক্যাম্পের বাইরে কী ধরনের প্রশিক্ষণ হয়, সে প্রসঙ্গে টমাস কেইন বলেন, ‘ক্যাম্পে গোপনে কিছু করা প্রায় অসম্ভব। কিছু শারীরিক প্রস্তুতির মতো প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে হয়েছে—যেখানে অস্ত্র ব্যবহার হয়নি, বরং ব্যায়াম বা ড্রিলের মতো কার্যক্রম হয়েছে।’

‘তবে সম্প্রতি আমরা কিছু শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি, যারা বলেছেন তারা এমন লোকদের চেনেন যাদের সীমান্ত এলাকার ক্যাম্পের বাইরে প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছে। তাই আমরা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী যে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কিছু মাত্রার সশস্ত্র প্রশিক্ষণ চলছে। বিশেষ করে আরসা এর মতো গোষ্ঠীগুলোর সীমান্ত এলাকায় নিজেদের ক্যাম্প রয়েছে,’ বলেন তিনি।

তবে বাংলাদেশে ক্যাম্পের ভেতর কোথাও সশস্ত্র প্রশিক্ষণ হয় না বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাংলাদেশি এবং ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। একজন রোহিঙ্গা জানান, সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য অনেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্যাম্পের বাইরে সীমান্ত পাড়ি দেয়।

ওই রোহিঙ্গা বলেন, ‘এটা মায়ানমারে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়, এখানে কোনো প্রশিক্ষণ হয় না। বাংলাদেশে আমি আমার সামনে কোনোদিন দেখি নাই। কোনো প্রশিক্ষণ হয় না। ওরা মিয়ানমারে গিয়ে ওদিকে এক বছর থেকে, দুই বছর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছুটি নিয়ে আসে।’

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফজুড়ে ৩৩টি ক্যাম্পে ১৩ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ বয়সে তরুণ। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন তৎপরতার বিষয়টি স্থানীয় বাংলাদেশিদেরও নজরে এসেছে।

স্থানীয় বাংলাদেশিরা রোহিঙ্গাদের তৎপরতার খোঁজ খবর রাখেন বলে জানান বাংলাদেশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি নামে একটি সংগঠনের সভাপতি রবিউল হোছাইন।

প্রশিক্ষণ এবং বৈঠক প্রসঙ্গে রবিউল হোছাইন তার পর্যবেক্ষণ থেকে বলেন, ‘ক্যাম্পের মধ্যে বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে, আরসা, আরএসও, এরপরে এআরএ, আরও আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের অ্যাকটিভিটির মাধ্যমে জানতে পারছি, তারা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের কথা জানতে পেরেছি। বিশেষ করে কারাতে প্রশিক্ষণের কথা জানতে পেরেছি।’

মি. হোছাইন বলেন, আরসা-আরএসও'র হয়ে বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্নভাবে ৫০ বা ১০০ বা ২০০ জন বাংলাদেশ-মিয়ানমারে সীমান্ত পার হয়ে যুদ্ধ করতে মিয়ানামারে অনুপ্রবেশ করে বলে আমরা জেনেছি। অনেক সময় আমরা দেখেছি তারা ফিরে আসে। বাট এইভাবে বিচ্ছিন্নভাবে গেলে কখনোই যুদ্ধ বা রাখাইন রাজ্যে তারা তাদের অধিকার ফিরে পাবে না।

তারা নিয়মিত অ্যাওয়ারনেস সেশন করে যে তাদের আদি নিবাস আরাকান রাজ্য, তাদের সেখানে ফিরে যেতে হবে।

‘তাদের সেখানে ফিরে যাওয়ার জন্য যদি যুদ্ধের প্রয়োজন হয়, সে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য এই যে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো রয়েছে, তাদের নেতৃত্বে অ্যাওয়ারেনস সেশন তারা করে থাকে। এবং ক্যাম্পের বাহিরে বা ভেতরে তাদের ছোট ছোট গ্রুপে প্রশিক্ষণের ইনফরমেশন আমরা পেয়েছি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা সেটা দেখেছি’ বলেন রবিউল হোছাইন।

আইসিজির প্রতিবেদনটির লেখক টমাস কেইন বলছেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তৎপরতা সম্পর্কে আরাকান আর্মি অবগত রয়েছে এবং এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।

টমাস কেইন এ-ও জানান, ‘তাদের ক্যাম্প থেকে তথ্য পাওয়ার ভালো সোর্স রয়েছে, তাই তারা জানে ক্যাম্পে কী ঘটছে। কিন্তু তাদের ধারণা হলো, বাংলাদেশ-বিশেষ করে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো—রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন দিচ্ছে। এটি আরাকান আর্মি ও বাংলাদেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ বা ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে একটি বড় বাধা। এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরাকান আর্মির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।’

‘আর যখন এই গোষ্ঠীগুলো সক্রিয়ভাবে এবং তুলনামূলকভাবে প্রকাশ্যে সদস্য সংগ্রহ করতে পারছে, তখন বাংলাদেশ ও আরাকান আর্মির মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।’

সরেজমিনে শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে একটি বিষয় স্পষ্ট যে সাধারণ রোহিঙ্গারাও এখন আরাকান আর্মিকেই তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চায়– এমন ধারণাও পেয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টিকে উদ্বেগজনক হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

আইসিজির কনসালট্যান্ট টমাস কেইন বিবিসিকে বলেন, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সংঘাতে গেলে সফল হবে না। কিন্তু এর ফলে ব্যাপক ক্ষতি হবে।

‘এখনো উত্তর রাখাইন রাজ্যে এক থেকে দুই লাখ রোহিঙ্গা বেসামরিক মানুষ রয়েছেন-যদিও সঠিক সংখ্যা জানা নেই-এবং তারা এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মাঝখানে আটকে পড়বেন। আমরা তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি এবং তারা রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সমর্থক নন।

‘তারা বিদ্রোহ সমর্থন করেন না, কারণ তারা জানেন এর পরিণতি কী হবে। তারা মাঝখানে পড়ে যাবেন এবং সম্ভবত তাদের বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে হবে। ফলে, যদি উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘাত বেড়ে যায়, তাহলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে আরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় দিতে হতে পারে" মন্তব্য করেন টমাস কেইন।

বাংলাদেশের অবস্থান
কক্সবাজারের ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠীর অস্তিত্ব স্বীকার করে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলেও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উল্লেখ করছেন। এছাড়া বাংলাদেশের এজেন্সিগুলো ক্যাম্পে রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর তৎপরতায় সমর্থন দিচ্ছে না বলেও দাবি করা হচ্ছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিবিসিকে বলেন, রাখাইনের বেশিরভাগ এলাকা মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের দখলে থাকায় বাংলাদেশ সরকার এখন আরাকান আর্মির সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করেছে।

এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতা অস্বীকার করেন তিনি।

‘আরসা আরএসও এগুলোতো বাংলাদেশ সরকারের কোনও সংগঠন না। আর বাংলাদেশের ভূমিতেও এগুলো তৈরি হয়নি। এগুলো মিয়ানমারের অর্গানাইজেশন। মিয়ানমারে হয়েছে। এখন মিয়ানমারে তারা কী করবে না করবে এর দায় দায়িত্বতো আমরা নিতে পারি না। আমরা আমাদের টেরিটরিতে যেকোনও ধরনের ইলিগ্যাল আর্মস ডিলিং, ইলিগ্যাল আর্ম গ্রুপের অস্তিত্ব আমরা স্বীকার করি না। দ্যাট ইজ লাউড এন্ড ক্লিয়ার, আমাদের ভূমিকা।’

মিজানুর  রহমান বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘আপনি দেখুন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ কী করেছে। সো কলড মিলিট্যান্ট গ্রুপ বলা হয় আরসা তাদের প্রধানকে বাংলাদেশ গ্রেফতার করেছে, তাকে জেলখানায় পুরে রেখেছে। তারপর আরেকটি অর্গানাইজেশন যে আরএসও তার পলিটিক্যাল প্রধানকে বাংলাদেশ গ্রেফতার করে জেলখানায় পুরে রেখেছে। বাংলাদেশ যদি তাদেরকে উসকে দিত তাহলে বাংলাদেশের এই ভূমিকা থাকার কথা না।’

মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির বিরোধের ব্যাপারটি ঐতিহাসিক এবং সম্প্রতি এটি আরও প্রবল হয়েছে রাখাইনে যুদ্ধের বাস্তবতায়। রোহিঙ্গাদের প্রতিপক্ষ হচ্ছে রাখাইন। তাদের বিষয়ে 'ডিভাইড অ্যান্ড রুল' ব্যবস্থা করে নিয়েছে সরকারি বাহিনী বা রুলাররা। সেটাই বেড়েছে বিভিন্ন সময়।

‘যখন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় আরাকান আর্মি আক্রমণ শুরু করে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে, তখন রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ সরকারি বাহিনীর পক্ষে অস্ত্রধারণ করেছে। এটা তো সত্য ঘটনা এবং সে কারণে তাদের মধ্যে শত্রুতা আরও বেড়েছে। এর ফলে আরাকান আর্মিও যখন অকুপাই (দখল) করেছে তখন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। এর ফলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে ব্যাপক হারে, এই যে গত এক-দেড় বছরে এক লক্ষ ২০ হাজার আসল।’

উখিয়া টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের দুই হাজারের বেশি সদস্য। কক্সবাজারে অবস্থিত এপিবিএন এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দাবি করছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সশস্ত্র গ্রুপের তৎপরতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আছে বাংলাদেশ।

পিবিএন এর ডিআইজি প্রলয় সিসিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ক্যাম্পে নিরাপত্তার বিষয়টি সমন্বয় করেই কাজ করছে বিভিন্ন বাহিনী। ক্যাম্পের ভেতরে এই ধরনের অ্যাকটিভিটিজ (কর্মকাণ্ড) আমাদের চোখে পড়েনি।

‘আমরা সবাই আমরা চাই, সবাই একমত হয়েছি যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শুধু যেন হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকটিভিটিজটা যেন আমরা করতে পারি। এই ধরনের স্বশস্ত্র গ্রুপ তাদের একটিভিটিজ যেন কোনোভাবেই না করতে দেয়া হয়। এগুলো বরদাশত করা হবে না।’

এপিবিএন এর কর্মকর্তা প্রলয় সিসিন বলেন, ‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই স্বশস্ত্র গ্রুপ যেন কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে না পারে। আমরা ২৪/৭ (সার্বক্ষণিক) কাজ করছি। আমাদের পুরোপুরি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নিয়ন্ত্রণে আছে।’

‘ক্যাম্পে অস্ত্র উদ্ধার আমরা বিভিন্ন সময়ে করেছি এটা চলমান আছে। যারা অপরাধী তাদের কাছে অস্ত্র আছে। আমরা অ্যারেস্ট করছি। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে হ্যান্ডমেইড, অটোমেটিক বা এসএমজি টাইপেরও আছে। আমরা চেষ্টা করছি এ ব্যাপারে যারা তদন্ত করছে দেখছে কোথা থেকে কীভাবে এগুলো এসেছে’ বলেন প্রলয় সিসিন।

এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

রোহিঙ্গা শরণার্থী যুদ্ধ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর