Logo

জাতীয়

দুদকের জালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবরা

Icon

তরিকুল ইসলাম সুমন

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১০:০৭

দুদকের জালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবরা

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করা ছয় জন কর্মকর্তার তথ্য অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য অভিযোগ উঠায় অনুসন্ধান শুরু হয়েছে বলে দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব কর্মকর্তাদের অভিযোগ অনুসন্ধানে কাজ করছে পৃথক অনুসন্ধানকারী কমিটি।

তবে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে মোট আটজন কর্মকর্তা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করলেও আবদুল করিম ও শেখ সোবহান শিকদারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দুদকে আসেনি বলে জানা গেছে। 

দুদকে অভিযোগ আসা সাবেক মুখ্য সচিবরা হলেন, শেখ মো. ওয়াহিদ উজ জামান, আবুল কালাম আজাদ, কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী (কবি কামাল চৌধুরী), নজিবুর রহমান, ড. আহমদ কায়কাউস ও তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ওরফে রিপন মিয়া।

অভিযুক্তদের মধ্যে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময়কার হত্যা মামলার আসামি হিসেবে কারাগারে রয়েছেন কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ও আবুল কালাম আজাদ। 

দুদক সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার মুখ্য সচিবদের মধ্যে প্রথম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদ-উজ জামানের বিরুদ্ধে। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। অভিযোগ, জনতা ব্যাংকের অর্থ হোতা তিনি। তার সময়ে অ্যানন গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কেলেঙ্কারির অন্যতম টেক্স, ক্রিসেন্ট নিয়মবহির্ভূতভাবে

ঋণ বিতরণ এবং খেলাপির ক্ষেত্রে ক্ষতমার অপব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সালে তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। তবে অনুসন্ধানটি টানা প্রায় ছয় বছর ফাইলবন্দি রাখা হয়। ২০২১ সালে দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্রায় পৌনে ছয়শ অভিযোগের পরিসমাপ্তি টানেন। এর মধ্যে ছিল ইকবাল মাহমুদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ওয়াহিদ উজ জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগও। পরে জনতা ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় আবার তার নাম এলে দুদক পুনরায় অনুসন্ধান শুরু করে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তারা হলেন, তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, আহমদ কায়কাউস, নজিবুর রহমান ও কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।

দুদক সূত্রটি জানায়, শেখ হাসিনার সর্বশেষ মুখ্য সচিবের দায়িত্বে থাকা মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ওরফে রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে প্রকল্পে অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল অবৈধ অর্থ-সম্পদ অর্জন এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের একটি দল এর অনুসন্ধান করছে।

আহমদ কায়কাউসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিদ্যুৎ আমদানিতে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে অসম চুক্তির মাধ্যমে শুল্ক ও কর অব্যাহতি প্রদান করে রাষ্ট্রের সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি করেছেন। তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সচিব থাকা অবস্থায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে এসব চুক্তি করেছেন। অন্যদিকে সারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যুরাল নির্মাণ এবং মুজিব শতবর্ষ পালনের নামে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা অপচয় ও আত্মসাতের একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। এতে সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। 

এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও সাবেক মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে আরেক মুখ্য সচিব এবং জামালপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধেও।

দুদকের মহাসচিব ও সংস্থাটির মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন সাবেক এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তদন্ত বিষয়ে বলেন, দুর্নীতির অভিযোগগুলো এখন অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। দুদক সূত্র জানিয়েছে, এসব অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের ছয়টি পৃথক দল কাজ করছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পে অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছে দুদক। চাওয়া হয়েছে অভিযুক্তদের আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাব।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

দুর্নীতি দমন কমিশন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর