Logo

জাতীয়

বিবিসির অনুসন্ধান : ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে অন্তত ৫২ জনের প্রাণহানি

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩১

বিবিসির অনুসন্ধান : ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে অন্তত ৫২ জনের প্রাণহানি

পাঁচই অগাস্ট দুপুরে ধারণ করা যাত্রাবাড়ী এলাকার ড্রোন ভিডিও থেকে নেওয়া। ছবি : বিবিসি

গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে অন্তত ৫২ জন আন্দোলনকারী নিহত হন বলে বিবিসি আই প্রকাশিত সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। ঐদিনই দীর্ঘ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন।

বিবিসি জানায়, শত শত ভিডিও, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ও ঘটনাস্থলে সরেজমিন পরিদর্শনের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছে, এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ পুলিশি সহিংসতা।

আন্দোলনকারীদের ওপর অতর্কিত গুলিবর্ষণের একটি ভিডিও বিবিসির হাতে আসে, যেটি ধারণ করেছিলেন নিহত আন্দোলনকারী মিরাজ হোসেন। তার মোবাইলে ধরা পড়ে যাত্রাবাড়ী থানার সামনের মুহূর্তগুলো, যেখানে সেনা সদস্যদের হঠাৎ সরে যাওয়ার পরপরই পুলিশ গুলি চালায়।

চৌঠা নাকি পাঁচই আগস্ট? 
অনেক আগে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওকে পাঁচই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য হিসেবে প্রচার করা হচ্ছিল। তবে বিবিসি নিশ্চিত করেছে, সেটি ছিল একদিন আগের, অর্থাৎ চৌঠা আগস্টের। তারা ভিডিও বিশ্লেষণ করে যানবাহনের অবস্থান, গুলির শব্দ ও ধোঁয়ার মিলের ভিত্তিতে এই বিভ্রান্তি নিরসন করেছে।

মৃত্যুর মিছিলে ৫২ জন সাধারণ মানুষ
বিবিসির অনুসন্ধান অনুযায়ী, যাত্রাবাড়ীতে ৫ আগস্ট অন্তত ৫২ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন। এদের অধিকাংশই ছিলেন বিক্ষোভকারীর পরিচয়ে রাস্তায় নামা তরুণ-তরুণী। এছাড়া আন্দোলনরতদের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয়জন পুলিশ সদস্যও নিহত হন।

বিকেল ২টা ৪৩ মিনিটে গুলিবর্ষণ শুরু হয়ে চলে প্রায় আধা ঘণ্টা। বিবিসির হাতে থাকা ড্রোন ফুটেজে দেখা যায়, মহাসড়কে পড়ে থাকা লাশ, আহতদের রিকশা ও ভ্যানে করে সরিয়ে নেওয়ার দৃশ্য এবং আশ্রয়ের জন্য সেনা ব্যারাকের দিকে ছুটে যাওয়া মানুষের বিভীষিকাময় মুহূর্ত।

বিচারের মুখে পুলিশ কর্মকর্তারা
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসানসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। পুলিশ বাহিনী বলেছে, অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে তদন্ত চলছে।

ফাঁস হওয়া কথোপকথনে শেখ হাসিনার ‘প্রাণঘাতী নির্দেশ’
এ ঘটনার পেছনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশ থাকার ইঙ্গিত মিলেছে একটি ফাঁস হওয়া অডিওতে। বিবিসি এবং অডিও ফরেনসিক সংস্থা Earshot নিশ্চিত করেছে, ওই রেকর্ডিংয়ে হাসিনার কণ্ঠেই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের’ নির্দেশ দেওয়া হয়।

ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বলেছেন, ‘এই অডিও রেকর্ডিং তার (শেখ হাসিনার) বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিবিসির প্রতিবেদনে ব্যবহৃত অডিওর সত্যতা নিশ্চিত না করা হলেও বিষয়টিকে ‘বেআইনি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত’ বলে উল্লেখ করা হয়।

দেশ ছাড়েন হাসিনা, চলছে আন্তর্জাতিক তদন্ত
ঘটনার পরপরই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। তার সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) এসব ঘটনার তদন্ত করছে। ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৩ জন বর্তমানে আটক রয়েছেন।

আন্দোলনে সেনা সদস্যদের ভূমিকা সম্পর্কেও তদন্ত চলছে, তবে এখনো সেনাবাহিনী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য দেয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর