Logo

জাতীয়

থামছে না ‘মব ভায়োলেন্স’, বাড়ছে উদ্বেগ

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৯

থামছে না ‘মব ভায়োলেন্স’, বাড়ছে উদ্বেগ

ঢাকার মহাখালীর একটি হোটেলে দুই নারীর ওপর হামলার সিসিটিভি ফুটেজ। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে একের পর এক ‘মব ভায়োলেন্স’ বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলার ঘটনায় জনমনে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৪১টি ঘটনায় অন্তত ৮৩ জন নিহত হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের দশ মাসে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৪-এ। খবর বিবিস ‘র। 

এ ধরনের ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, গোষ্ঠীগত বিরোধ ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার ইন্ধনের বিষয়টি সামনে আনছেন বিশ্লেষকেরা। বিশেষ করে রাজধানী থেকে শুরু করে মফস্বলে পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে মব গঠনের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র বিরুদ্ধে।

‘জনরোষ’ না ‘দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা’?
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মব ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা ও ন্যারেটিভ দেখা যাচ্ছে। এনসিপি ও তাদের ছাত্র মিত্ররা অনেক ঘটনার পেছনে ‘জনরোষ’ বা দীর্ঘদিনের দমন-নিপীড়নের প্রতিক্রিয়া বলে দাবি করছে। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব একে ‘প্রেসার’ বলে অভিহিত করেছেন, যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

অন্যদিকে, সরকার বলছে—মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

চট্টগ্রামের পটিয়ায় মবের চাপে ওসি বদলি
মব ভায়োলেন্সের সাম্প্রতিক একটি আলোচিত ঘটনার কেন্দ্র ছিল চট্টগ্রামের পটিয়া থানা। অভিযোগ উঠেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা থানায় হানা দেয় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। পরে ওসিকে বদলি করতে বাধ্য হয় সরকার। মানবাধিকারকর্মীদের মতে, এটি ছিল ‘বিস্ময়কর ও অশনি সঙ্কেত’।

বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ
সম্প্রতি ঢাকার মহাখালীতে যুবদলের নেতাকর্মীদের হামলা ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় দলটি অভিযুক্ত হলেও সেই নেতা পরে বহিষ্কৃত হন। এছাড়া, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে ‘মব’-এর হাতে লাঞ্ছনার ঘটনার সঙ্গেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, দলের পক্ষ থেকে মব ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। বরং শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

জামায়াতের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘটনায় ছাত্রশিবিরের মব গঠনের অভিযোগ রয়েছে, যদিও দলটি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

‘সরকার না চাইলে মব হয় না’
কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সরকার না চাইলে মবের ঘটনা ঘটতে পারে না।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র হতে পারে।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটনের ভাষ্য, ‘একটি শক্তি ধারাবাহিকভাবে মব তৈরি করে দেশের পরিবেশ অস্থির করে তুলছে।’

জনগণের আস্থাহীনতা, সরকারের নিরবতা
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রিজিম পরিবর্তনের পর পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরেনি, আর অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের অবস্থান নিরব। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারির বুলডোজার মিছিলের সময় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনায় সরকারের প্রতিক্রিয়াহীনতা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

তবে মব থামানো জরুরি—সব পক্ষ একমত
মব নিয়ে ব্যাখ্যা ও অবস্থান যত ভিন্নই হোক না কেন, সব রাজনৈতিক দল এবং বিশ্লেষকেরা একমত—এ ধরনের বিশৃঙ্খলা যদি এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে দেশে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে।

বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, ‘প্রতিহিংসা থেকে মব ভায়োলেন্সের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটছে। পক্ষবিশেষ যখন এসবের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করায়, তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’

মব ভায়োলেন্স এখন শুধুই জনরোষ নয়—এটা রাজনৈতিক দখল, প্রতিশোধ আর আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতার মিশ্রণ। এই পরিস্থিতি যদি চলতেই থাকে, তাহলে নির্বাচন-পরবর্তী বাংলাদেশ আরও ভয়াবহ সংকটের দিকে এগোবে—এমনই আশঙ্কা করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষণমহল।

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

মব

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর