Logo

জাতীয়

নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালা চূড়ান্ত, যা থাকছে

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৫:৩৯

নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালা চূড়ান্ত, যা থাকছে

প্রতীকী ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা-২০২৫ ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যা চলতি সপ্তাহের যে কোন সময় প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।

রোববার (১৩ জুলাই)  নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৩ ও সকল পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করে নতুন নীতিমালা ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৫’ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৫’ এ যা রেখেছে ইসি-

নতুন নীতিমালার গুরুত্ব ও প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। অতীতে বেশকিছু নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের অভাব বা অনিয়ম দেখা গেছে, যা ভোটারদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। তাই, নির্বাচন কমিশন একটি সুসংগঠিত, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করেছে যা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রতিটি ধাপকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

পর্যবেক্ষক নির্বাচন ও যোগ্যতার শর্তাবলি
নতুন নীতিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, ভোটার ও নির্বাচনি প্রক্রিয়ার সুরক্ষায় যে কেউ পর্যবেক্ষক হতে পারবে না। পর্যবেক্ষক হওয়ার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকত্ব আবশ্যক, বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হবে এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ন্যূনতম এইচএসসি বা সমমানের সনদ থাকতে হবে। এছাড়াও, নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, রাজনৈতিক দল বা দলের অঙ্গসংগঠনের সাথে ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা রাখেন, তাদেরকে পর্যবেক্ষক হতে দেওয়া যাবে না। এর ফলে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা হ্রাস পাবে।

পর্যবেক্ষক নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র
নির্বাচন পর্যবেক্ষক হতে হলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনকৃত পর্যবেক্ষকদের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে মুদ্রিত ‘পর্যবেক্ষক পরিচয়পত্র’ প্রদান করা হবে, যা সবার কাছে দৃশ্যমান রাখতে হবে এবং অন্য কারো কাছে হস্তান্তরযোগ্য নয়। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের দফতর থেকে নিতে হবে।

এছাড়া, প্রতিটি নির্বাচনি এলাকা অনুযায়ী পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে তাদের পর্যবেক্ষকদের তালিকা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে হবে এবং সেই তালিকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও দেখাতে হবে, যাতে তাদের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষকের নিরপেক্ষতা নিয়ে অভিযোগ উঠলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

পর্যবেক্ষকদের মোতায়েন ও দায়িত্ব বণ্টন
পর্যবেক্ষক মোতায়েনের একক ইউনিট হবে উপজেলা, মেট্রোপলিটন থানা অথবা সংসদীয় নির্বাচনি এলাকা। একই এলাকার জন্য একাধিক সংস্থা আবেদন করলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে কে কোথায় মোতায়েন হবে। প্রতি সংস্থা সর্বোচ্চ পাঁচজন করে ভ্রাম্যমাণ পর্যবেক্ষক দল রাখতে পারবে, যারা ভোটকেন্দ্রে স্বল্প সময়ের জন্য অবস্থান করে ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করবে। ভোট গণনার সময় প্রতিটি ইউনিটে একজন করে পর্যবেক্ষক উপস্থিত থাকবেন, যারা ভোট গণনা ও ফলাফল একত্রীকরণের পুরো প্রক্রিয়া নজরে রাখবেন। ভোটগণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা গণনাকক্ষ ত্যাগ করতে পারবেন না।

পর্যবেক্ষকদের করণীয় ও আচরণবিধি
নির্বাচন চলাকালে পর্যবেক্ষকদের অবশ্যই ভোটারের গোপন ভোট প্রদানের অধিকার রক্ষা করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজ নির্বিঘ্ন করতে হবে। তাদের নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করা নিষিদ্ধ। পর্যবেক্ষকগণ ভোটের গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব, রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে আচরণ, নির্বাচন উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ, কোন উপহার গ্রহণ বা সুবিধা নেওয়া নিষিদ্ধ। মিডিয়ার সামনে নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার সম্ভাবনা থাকা মন্তব্য থেকে বিরত থাকতে হবে।

পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ, নৈতিকতা রক্ষা ও কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করার। কোনো পর্যবেক্ষক স্বার্থের সংঘাত বা অন্য অসংগত আচরণ করলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে অবহিত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

আন্তর্জাতিক ও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষক
বাংলাদেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনগুলোর নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। তবে বিদেশি কর্মকর্তা ও স্থানীয় কর্মচারীদের যথাক্রমে বিদেশি ও স্থানীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে আবেদন ও নিবন্ধন করতে হবে। বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা ও স্থানীয় পর্যবেক্ষক নীতিমালা আলাদা হলেও উভয়েরই নিয়মনীতির অধীন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

প্রতিবেদন সংক্রান্ত বিধান
ভোটগ্রহণের ৭ দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। এরপর ভোটগ্রহণ শেষে এক মাসের মধ্যে নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা ও পর্যবেক্ষণের সামগ্রিক প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করার সুপারিশ থাকে।

আইনি বাধ্যবাধকতা ও বিবিধ
কোনো বিতর্কের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি। কমিশনের অনুমতি ছাড়াই এই নীতিমালায় কোনো পরিবর্তন বা সংশোধন করা যাবে না। এছাড়া, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য এই নীতিমালার বেশিরভাগ শর্ত প্রযোজ্য নয়। কমিশন যেকোনো সময় নীতিমালায় সংযোজন বা পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। নতুন এই নীতিমালার মাধ্যমে পুরানো ২০২৩ সালের নীতিমালা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে এবং আগের নিবন্ধিত সব পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন অকার্যকর করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নির্বাচন কমিশন আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, এই নীতিমালা দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। নির্বাচনি পর্যবেক্ষণের নিয়মবিধি নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভোটারের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আরও মজবুত হবে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন দেশের নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক ও আশঙ্কা রয়েছে, এই নীতিমালা নির্বাচনের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ভোট পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক নিবন্ধন দিচ্ছে ইসি। সে সময় ১৩৮টি সংস্থা নিবন্ধন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে ১১৮টি সংস্থাকে নিবন্ধন দেয় ইসি। ২০২৩ সালে ৯৬টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দেশীয় সংস্থাগুলোকে নিবন্ধন নেওয়ার জন্য আহ্বান জানায় সংস্থাটি। এক্ষেত্রে নিবন্ধন পেয়ে সংস্থাগুলো পরবর্তী পাঁচ বছর স্থানীয় নির্বাচনও পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

  • এসআইবি/এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর