ডিএমপির সংবাদ সম্মেলন
রাজনীতি নয়, অতীত কর্মকাণ্ড ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে সোহাগ হত্যা

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৩:৫৬
-68775b38f38f6.jpg)
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, রাজনীতি নয়, বরং ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হন ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ (৩৯)।
রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘সোহাগ আগের সরকারের আমলে হাজী সেলিমের ভাতিজা পিল্লু কমিশনারের ছত্রছায়ায় পল্লী বিদ্যুতের চোরাই অ্যালুমিনিয়ামের তারের ব্যবসা করতেন। চোরাই তার বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে তারা বিক্রি করতেন, যেখানে অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি পাতিল কড়াই বিক্রি হয়। গত ১৭ বছর কিন্তু ভুক্তভোগী সোহাগ এই কাজ করে এসেছেন। ৫ আগস্টের পর সে ভোল পাল্টে এদিকে এসেছে।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তবে এর মধ্যে আরেকটা গ্রুপ এই ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে। তখন ব্যবসায়িক বিভেদ তৈরি হয়। তারা একই এলাকার ও পূর্ব পরিচিত। ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলা বা অন্য কোনো উদ্দেশে সোহাগ হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। পুলিশ তদন্তে এরকম কিছু পায়নি। এটা ছিল ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, আমরা এ ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত।
তিনি ঘটনায় পুলিশি কার্যক্রমের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, ঘটনা চলাকালেই ৯৯৯-এর মাধ্যমে চকবাজার থানার ওসি ঘটনার সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই চকবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন। চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সরওয়ার ঘটনার কয়েক মিনিট পরেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায়, অভিযুক্তরা ঘটনাস্থলে মব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তারা চাঁদাবাজদের জায়গা নাই স্লোগান দিতে থাকে।
এ অবস্থায় চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সারোয়ার ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন মাহবুব ও মহিনকে আটক করে। পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৯।
এদিকে সোহাগকে পাথর নিক্ষেপকারী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গেলেও সেসময় তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। তবে, পুলিশের বিশেষ টিমের সহায়তায় তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল (মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই) রাতে পটুয়াখালী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম রেজওয়ান উদ্দিন অভি। তিনি একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম।
মামলার এজাহার ঘিরে ছড়ানো বিভ্রান্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে সাজ্জাত আলী বলেন, প্রথমে থানায় আসেন নিহত সোহাগের স্ত্রী লাকী আক্তার। কিছুক্ষণ পর সোহাগের সৎ ভাই রনিও থানায় উপস্থিত হন। তারা দুজন ২৩ জনের নাম দিয়ে একটি খসড়া এজাহার তৈরি করেন। তবে পরে নিহতের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম থানায় এসে নিজে বাদী হয়ে এজাহার দিতে চান। তার অনুরোধে আগের খসড়া দেখানো হয়। তিনি পাঁচজনের নাম বাদ দিয়ে একজনের নাম যোগ করেন এবং ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে চূড়ান্ত এজাহার দাখিল করেন। এরপর কোতোয়ালি থানায় এজাহারভুক্ত মামলা রুজু হয়। মামলাটি কোতোয়ালি থানার ৭ নম্বর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, কোনো এজাহার মানেই চূড়ান্ত সত্য নয়, এটি একটি প্রাথমিক অভিযোগ। তদন্তে যেটা প্রমাণিত হবে, সেটিই আদালতে উপস্থাপন করবে পুলিশ।
- ডিআর/এটিআর/এনএমএম