দেশে চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ জুলাই ২০২৫, ১৫:৫৩

ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল জাতিসংঘের মানবাধিকার মিশন। তিন বছরের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ইউএনএইচআরসি) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউএনএইচসিআর জানায়, তিন বছর মেয়াদি একটি পূর্ণাঙ্গ মিশন চালুর জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার ফলকার টুর্ক এবং পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এ সমঝোতা চুক্তিতে সই করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের অগাস্টের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। মানবাধিকার বিষয়ক সংস্কার এগিয়ে নিতে মানবাধিকার কার্যালয় বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করছে এবং গণবিক্ষোভে রক্তক্ষয়ী নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যানুসন্ধান করেছে।
ফলকার টুর্ক বলেন, বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের এই সময়ে মানবাধিকারের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি যে ‘অন্যতম ভিত্তি’ হিসেবে রয়েছে, সেই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠাচ্ছে এই সমঝোতা স্মারক। এছাড়া, এটি সরকার, নাগরিক সমাজ ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে সরাসরি কাজ করার সুযোগ দেবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন এ মিশন বাংলাদেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেবে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবে।
এদিকে জাতিসংঘের সঙ্গে এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশ এখন সেই ১৬টি দেশের অন্তর্ভুক্ত হলো, যেখানে আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির মানবাধিকার কাউন্সিল পূর্ণাঙ্গ ম্যান্ডেট নিয়ে সরাসরি কান্ট্রি অফিস পরিচালনা করে। বিশ্বের যেসব দেশে এ ধরনের অফিস রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে- বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন, ও সিরিয়া।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এসব অফিসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সরাসরি কাজ করে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, সুরক্ষা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
এর আগে ঢাকায় তিন বছরের জন্য এই মিশন স্থাপনের জন্য গত ১০ জুলাই সমঝোতা স্মারকের খসড়া অনুমোদন করে উপদেষ্টা পরিষদ।
সরকারের এই উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে ‘গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা’ প্রকাশ করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সে সময় ঘোষণা দেয়, তারা দেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় খুলতে দেবে না।
এ সংগঠনের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী গত ৫ জুলাই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘মানবাধিকারের’ নামে ইসলামি শরিয়াহ, পারিবারিক আইন ও ধর্মীয় মূল্যবোধে ‘হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা’ করেছে।
তিনি বলেন, এসব হস্তক্ষেপ একদিকে যেমন জাতীয় সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত, অন্যদিকে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিরও পরিপন্থি। তাই বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় খুলতে দেওয়া হবে না।
ডিআর/এএ