চলতি মাসেই আসছে দুই স্তরের পদোন্নতি, ভাগ্য খুলছে তিন শতাধিক কর্মকর্তার

তরিকুল ইসলাম সুমন
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫, ১১:৪০
-687b2fe411464.jpg)
প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ফের দুই স্তরের পদোন্নতির তোড়জোড় চলছে। প্রথমে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি এবং পরে যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির দ্বার খুলছে। এরই মধ্যে পদোন্নতিযোগ্য সাত শতাধিক কর্মকর্তার চাকরিজীবনের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ শুরু করেছে সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।
ইতোমধ্যে পদোন্নতির জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের সভাপতিত্বে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে এসএসবি। বৈঠকে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথি, প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতিসহ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। আরও দু’একবার বৈঠকের পর পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই এ দুটি পদে পদোন্নতির দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, জুন ও জুলাই মাসের বেশ কয়েকটি এসএসবির বৈঠক হয়েছে। এ মাসের শেষে আরও একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেই হয়তো চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়াও ত্রয়োদশ নির্বাচনকেন্দ্রিক জেলা প্রশাসক এবং এসপিদেরও বদলির বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। তবে পদোন্নতির ধারাবাহিকতা অনুযায়ী প্রথমে উপসচিব পদে পদোন্নতি হবে। এরপর অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের ২১২ পদে কর্মকর্তা আছেন ৩৭০ জন। যুগ্ম সচিবের ৫০২টি পদে রয়েছেন ১ হাজার ৩৪ জন। সুপারনিউমারারি পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদসংখ্যা ১ হাজার ৪২০। বিপরীতে কর্মরত আছেন ১ হাজার ৪০২ জন। অর্থাৎ প্রতিটি স্তরেই নির্দিষ্ট পদের চেয়ে উল্লেখ করার মতো কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন। ফলে পদ খালি না থাকায় পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আগের পদেই কাজ করে যেতে হবে।
পদোন্নতির বিধিমালা অনুযায়ী, সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পাঁচ বছর চাকরিসহ অন্তত ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলেই উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা। সে অনুযায়ী বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন ২০২২ সালের ৩ জুন। এরপর প্রায় তিন বছর হতে চলছে, কিন্তু তাদের পদোন্নতি হয়নি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২০১২ সালের ৩ জুন সরকারি চাকরিতে যোগ দেন বিসিএস ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। সেই হিসাবে তাদের উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয় ২০২২ সালের ৩ জুন। নানা কারণে এর দুই বছর পর ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি উপসচিব পদে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়ে পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার অভ্যত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গঠিত হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবসহ এসএসবিতে বড় পরিবর্তন আসে। নানা কারণেই আর ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির দরজা খোলেনি। এই ব্যাচে ২৭৭ জন কর্মকর্তা ২০১২ সালে যোগদান করেন। লেফট আউটসহ প্রশাসন ক্যাডারের ৩১৯ জন কর্মকর্তা পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন।
এ ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের ২২৩ কর্মকর্তা ডিএস পুলে যোগ দিতে আবেদন করেছেন। এসব কর্মকর্তার প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা-দুর্নীতির বিষয়সহ ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে চাকরিজীবনের যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত এবং পরিবারের সদস্যসহ নিকটাত্মীয়দের সম্পর্কেও খোঁজ নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিতে নিয়মিত হিসেবে ২০তম ব্যাচকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এবারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রশাসন ক্যাডারের ২৪৪ কর্মকর্তার পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডার থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হবে। সব মিলে পদোন্নতির জন্য প্রায় ৩০০ কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে এই ব্যাচের ৪৩ জন কর্মকর্তা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে বিভিন্ন জেলার ডিসির দায়িত্ব পালন করায় তাদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ১৯৯৯ সালে শেষ হয়। ২০১৯ সালে যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও তাদের পদোন্নতি হয়েছে ২০২১ সালে। যুগ্ম সচিব হিসেবে দুই বছর চাকরি করলেই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয়। সেই হিসাবে ২০২৩ সালে এই ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার যোগ্য।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আগামী নির্বাচনের আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে রদবদল করা হবে। এলোমেলোভাবে (র্যান্ডমলি) এই রদবদল করা হবে। ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রথম নির্দেশনা ছিল আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক যত প্রস্তুতি নির্বাচন ঘিরে, সব প্রস্তুতি নিতে বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে। এই ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
- বিকেপি/এটিআর