-687c5cd825cc8.jpg)
সুষম খাদ্য হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, মান নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণে বোর্ড প্রতিষ্ঠার অনিশ্চয়তা কাটছে। ২৩ সালের ২৫ অক্টোবর আইন পাস হলেও ছিল না কোনো অগ্রগতি। অবশেষে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই বোর্ড স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে এই বোর্ড।
সম্প্রতি বেসরকারি ডেইরি সেক্টর সংশ্লিষ্টদের আবেদন ও বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড স্থাপনের তাগিদ দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আকতার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও সম্প্রসারণের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে এই বোর্ড। কিন্তু দেশে আইন অনুমোদনের পরেও স্থাপন না করায় এই সেক্টরকে কাঙ্ক্ষিত অর্জন ও প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। এজন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সাধারণ খামারি ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (এলডিডিপি) প্রকল্পভুক্ত ছিল ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড স্থাপনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে এ বোর্ডের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ খামারিরা।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান বলেন, গত মাসে এক বৈঠকে এই ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড গঠন ও কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন উপদেষ্টা মহোদয়। তার নির্দেশনার পরেই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মূল অবকাঠামো আমাদের একটি প্রকল্প থেকে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষের পথে। তারপরও আমরা স্থায়ী অবকাঠামো ছাড়াই কাজ শুরু করব। এই বোর্ডের আইন হলেও নীতিমালা করার জন্য আমরা কাজ করছি। তিনি আশা করেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই বোর্ড তার পথ চলা শুরু করবে। স্থায়ী অবকাঠামো না হলেও অস্থায়ীভাবে হলেও দ্রুত কার্যক্রম শুরু হবে।
কৃষি পণ্য বিপনন প্রতিষ্ঠান এসিআই এগ্রিবিজনেসেসের প্রেসিডেন্ট ড. ফাহ আনসারী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন তথা ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড দেশের দুগ্ধ শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ অবদার রাখতে পারে। দেশে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও সম্প্রসারণের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে এই বোর্ড। বিশেষ করে দেশের খামারি, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ তৈরিতে সহায়ক হবে। একদিকে উৎপাদিত পণ্যের মাণ নিয়ন্ত্রণ ও অন্য দিকে ভোক্তাদের কাছে গুণগত মানের পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন হবে বলে তিনি মনে করেন।
ডেইরি অ্যান্ড ফ্যাটেনিং ফার্মার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ইকবাল হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও এই সেক্টরের স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে গত মাসে মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক করেছি। দ্রুত বোর্ড গঠন ও বোর্ডের সদস্যদের বিষয়ে আমাদের মতামত তুলে ধরেছি। সেই সভাতেই বোর্ডের কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আকতার। তারই প্রেক্ষিতে বোর্ডের অস্থায়ী ভিত্তিতে অফিস নেওয়াসহ নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে খামারিদের কথা বিবেচানা করে দ্রুত এই ডেইরি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর প্রায় সবগুলোতেই এ ধরনের বোর্ড রয়েছে। আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় আইনও রয়েছে। রয়েছে সব সুযোগ-সুবিধা। তারপরও হচ্ছে বিলম্ব।
ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড স্থাপনের বিষয়টি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এ জন্য আইনও পাস হয়েছে। বোর্ডের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সাভারে জমিও বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভবনের (সাততলা) জন্য ২০ কোটি টাকাও সংস্থান রয়েছে। প্রকল্প অর্থায়নে না হলেও ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড চালু করা প্রয়োজন। তা না হলে প্রকল্প শেষ হলে প্রকল্পভুক্ত অনেক কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
আইনে বোর্ডের কার্যাবলি সম্পর্কে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিকভাবে ডেইরি খামার স্থাপন, উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ খাদ্য হিসেবে দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ; দুগ্ধ উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, শীতলীকরণ এবং দুগ্ধজাত পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপনে তালিকাভুক্তি প্রদান; ডেইরি সংক্রান্ত বিষয়ে বৈজ্ঞানিক, কারিগরি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রদানের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান; ডেইরি স্বাস্থ্য, দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ বা অনুরূপ বিষয়ে প্রচারণা ও প্রণোদনা প্রদান; দুগ্ধ খামার বা দুগ্ধ শিল্পাঞ্চল সৃষ্টিতে উদ্যোগ গ্রহণ, দুধ উৎপাদনে উদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং সমবায় ভিত্তিতে খামার স্থাপনের উৎসাহ ও পরিবেশ সৃষ্টি; সমবায় পর্যায়ে দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ঋণ প্রদান ও আদায় এবং এতদ্বিষয়ে সমবায়ভিত্তিক উদ্যোগে সহায়তা প্রদান; দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার সৃষ্টি, অবকাঠামো তৈরি ও ব্যবস্থাপনা; নিরাপদ খাদ্য হিসাবে দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্যের শ্রেণিভিত্তিক মান নির্ধারণ, মান যাচাইয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা, পরিদর্শন এবং মান নিয়ন্ত্রণ বা নিশ্চিতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ; সরকার কর্তৃক স্বীকৃত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহিত চুক্তির মাধ্যমে দুধ উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকারী উদ্যোক্তাদের পুঁজি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ; দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ, গ্রন্থনা এবং সরকারের নিকট প্রতিবেদন আকারে প্রেরণ; দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন সংশ্লিষ্ট খামার ও শিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রকল্প প্রণয়ন, পরিচালনা ও বাস্তবায়ন; ডেইরি বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা, উৎসাহ, প্রণোদনা ও সহায়তা প্রদান; এবং সরকার কর্তৃক অর্পিত অন্য কোনো দায়িত্ব বা নির্দেশনা পালন।
তবে বাংলাদেশ ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড আইন, ২০২৩ এ বোর্ডের মূল কাজ হিসেবে বলা হয়েছে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবাদি পশু লালন-পালন, চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং মানসম্মত দুধ উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক পরামর্শ ও কারিগরি সহযোগিতা দেওয়া। এই বোর্ডের একটা পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। প্রধান নির্বাহী থাকবেন। নিজস্ব তহবিল থাকবে। বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। আর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য থাকবেন ১৯ জন।
- বিকেপি/এটিআর