Logo

জাতীয়

বরেণ্য ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী হামিদুজ্জামান খান আর নেই

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১৪:৪৯

বরেণ্য ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী হামিদুজ্জামান খান আর নেই

চিত্রশিল্পী হামিদুজ্জামান খান। ছবি : সংগৃহীত

দেশের খ্যাতিমান ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৫ জুলাই থেকে তিনি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। শেষ তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় আজ সকালে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

বরেণ্য এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের শিল্পাঙ্গনে।

অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খানের মরদেহ রোববার বেলা আড়াইটায় শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নেওয়া হয়েছে তাঁর দীর্ঘ কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাদ আসর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দাফনের স্থান এখনো নির্ধারণ হয়নি। প্রবাসে অবস্থানরত দুই পুত্রের সঙ্গে আলোচনা করে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হামিদুজ্জামান খান। ১৯৬৭ সালে তিনি তৎকালীন বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৭০ সালে একই প্রতিষ্ঠানে ভাস্কর্য বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ২০১২ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের আধুনিক ভাস্কর্য চর্চায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, হামিদুজ্জামান খান ছিলেন তাঁদের অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যে তাঁর অবদান অনন্য। ১৯৭২ সালে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে মিলে নির্মাণ করেন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’।

তাঁর উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে— আশুগঞ্জ সার কারখানায় ‘জাগ্রত বাংলা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’, ঢাকা সেনানিবাসে ‘বিজয় কেতন’, মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে ‘ইউনিটি’, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ‘ফ্রিডম’, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’, সরকারি কর্মকমিশন ভবনে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’ এবং মাদারীপুরে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’।

শুধু ভাস্কর্যই নয়, জলরঙেও ছিল তাঁর মুন্সিয়ানা। নিসর্গ, মানব মুখাবয়ব ও বিমূর্ত রচনায় তিনি নিজস্ব ঘরানা তৈরি করেছিলেন। ধাতু, কাঠ, সিরামিকসহ নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। ধাতব মাধ্যমে তৈরি তাঁর পাখির ভাস্কর্যগুলো বিশেষভাবে প্রশংসিত— যেমনটি দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে অবস্থিত ‘শান্তির পায়রা’ ভাস্কর্যে।

জীবদ্দশায় দেশ-বিদেশে তাঁর একক ও যৌথ মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

২০০৬ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ অর্জন করেন তিনি। ছিলেন বাংলা একাডেমির ফেলো এবং পেয়েছেন দেশ-বিদেশের বহু সম্মাননা ও পুরস্কার।

অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান ছিলেন ভাস্কর আইভি জামানের স্বামী। তিনি রেখে গেছেন দুই পুত্র ও অগণিত গুণমুগ্ধ।

তাঁর মৃত্যু দেশের শিল্প-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর