মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত
ক্যাম্পাস থেকে সাংবাদিকদের বের করে দিল শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ১৪:১৭

ছবি : বাংলাদেশের খবর
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ‘মিডিয়া লাশের ভুল ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে’ এমন অভিযোগ তুলে ক্যাম্পাস থেকে সাংবাদিকদের বের করে দিয়েছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুর পৌনে ২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে
এর আগে, দুপুর পৌনে ১টা নাগাদ কলেজটির ৫ নম্বর ভবনের সামনে এসে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি সরকার মেনে নিয়েছে।
তবে, উপদেষ্টা দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি ঘটে। তারা উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান দেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে জুতা ও প্লাস্টিক বোতল নিক্ষেপ করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (দুপুর ২টা) কলেজ ভবনের ভেতরে প্রেস সচিব শফিকুর রহমান ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন।
তার আগে, সকাল ১০টা থেকে কলেজের গোল চত্বরে ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা ঘোষণা দেন, দুপুর সাড়ে বারোটার মধ্যে তাদের সঙ্গে যদি সরকারের প্রতিনিধি দল তাদের দাবি দাওয়ার বিষয় নিয়ে কথা বলতে না আসে, তাহলে তারা উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উত্তরায় কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি হচ্ছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে যে ২৭ জন নিহত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে, এটা সঠিক নয়। তার দাবি, এই সংখ্যা একশ প্লাস।
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা—
১.নিহতদের সঠিক নাম ও তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
২. আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
৩. শিক্ষকদের গায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত তোলা— এই জঘন্য ঘটনার জন্য জনসমক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমাচাইতে হবে।
৪. নিহত প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫. বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ ও পুরোনো প্লেনগুলো বাতিল করে আধুনিক প্লেন চালু করতে হবে।
৬. বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিবর্তন করে আরও মানবিক ও নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুর ১টার পর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে মুহূর্তেই বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনার পরপর উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। উত্তরাসহ আশপাশের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধারকাজ শুরু হয়। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সবশেষ, মঙ্গলবার দুপুরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিভিন্ন হাসপাতালে নিহতের সংখ্যা দুপুর পর্যন্ত ৩১ জন দাঁড়িয়েছে। আর আহতের সংখ্যা ১৬৫ জন।
এর মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮ জন, মৃত্যু নেই। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৪৬ জন, মৃত্যু ১০ জন। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন তিনজন, মৃত্যু একজন। ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ২৮ জন, মৃত্যু ১৬ জন। উত্তরা লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে চিকিৎসাধীন ১৩ জন, মৃত্যু দুজন। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬০ জন, মৃত্যু একজন। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন, মৃত্যু নেই।
এ ছাড়া শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন, মৃত্যু নেই। ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুজন, মৃত্যু একজন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তিনজন চিকিৎসাধীন এবং সেখানে কোনো মৃত্যু নেই।
- ডিআর/এটিআর/এএইচএস