Logo

জাতীয়

আরপিও সংশোধন : এমপি হওয়া কঠিন হচ্ছে

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৭

আরপিও সংশোধন : এমপি হওয়া কঠিন হচ্ছে

প্রতীকী ছবি (এআই দিয়ে তৈরি)

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার আনতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশোধনী চূড়ান্ত হলে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করা ও বিজয়ী হওয়া— উভয় ক্ষেত্রেই প্রার্থীদের জন্য শর্ত কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সংশোধনীর প্রস্তাবনায় প্রার্থীদের হলফনামায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এতে দ্বৈত নাগরিকত্ব, ফৌজদারি মামলার তথ্য, প্রার্থীর নির্ভরশীলদের পেশা, দেশ ও বিদেশে আয়-সম্পদের বিবরণ, আয়করের রিটার্নসহ বিভিন্ন আর্থিক তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হবে। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য না দেওয়ার অঙ্গীকার যুক্ত করা হচ্ছে। একইসাথে, প্রার্থীদের হলফনামা ম্যাজিস্ট্রেট বা নোটারি পাবলিকের স্বাক্ষর ও সিলসহ দাখিল করতে হবে। মনোনয়নপত্র ই-মেইলের মাধ্যমেও জমা দেওয়ার সুযোগ থাকছে সংশোধনীতে।

নতুন শর্ত অনুযায়ী, প্রার্থীকে তার নাম, অভিভাবকদের পরিচয়, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশের নাম এবং নাগরিকত্ব ত্যাগ সংক্রান্ত তথ্য স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলে মামলার নম্বর, আদালতের নাম, মামলার বর্তমান অবস্থা, জামিননামা ও জেল কর্তৃপক্ষের সত্যায়িত কপি দাখিল করতে হবে। প্রার্থীর বর্তমান ও পূর্বের পেশার পাশাপাশি স্বামী-স্ত্রী এবং নির্ভরশীলদের পেশার বিস্তারিত বিবরণও হলফনামায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

প্রার্থীর আয় ও সম্পদের ক্ষেত্রে কৃষি, বাড়িভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার, স্থাবর সম্পত্তিসহ দেশ ও বিদেশে সকল উৎসের তথ্য দিতে হবে। যদি কোনো ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তবে ব্যাংকের নাম, ঋণের পরিমাণ, খেলাপি হলে তা এবং পুনঃতফসিল সংক্রান্ত তথ্য হলফনামায় স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। একই সঙ্গে সর্বশেষ পাঁচ বছরের আয়কর রিটার্ন, টিআইএন নম্বর এবং পরিবারের সদস্যদের করসংক্রান্ত তথ্য দাখিল বাধ্যতামূলক হচ্ছে।

সংশোধনীতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার ৪৫ দিন আগেই প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কমিশনের অধীনস্থ হবেন। যদি সরকারি কর্মকর্তারা নির্বাচনি কাজে কমিশনের নির্দেশনা না মানেন, তাহলে ইসি তাদের বিরুদ্ধে গোপনীয় অনুবেদনসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বন্ধে এবার আলাদা বিধান রাখা হয়েছে। কোনো আসনে যদি একমাত্র প্রার্থী থাকেন, তবে তাকে ‘না’ ভোটের মুখোমুখি হতে হবে। সে ভোটে যদি 'না' ভোট বেশি পড়ে, তবে ওই আসনে পুনরায় তফসিল দিয়ে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একক প্রার্থিতার মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার সুযোগ এবার আর রাখা হচ্ছে না।

একজন প্রার্থী এখন থেকে সর্বোচ্চ দুইটি আসনে নির্বাচন করতে পারবেন। এর বেশি আসনে প্রার্থী হলে তার সব মনোনয়নপত্রই বাতিল হবে। বর্তমানে একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এ ছাড়া নির্বাচনি জোট গঠিত হলেও প্রতিটি দলকে নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে— এমন বিধানও সংশোধনীতে যোগ করা হয়েছে।

ভোট অনিয়ম হলে আগে শুধুমাত্র কেন্দ্র বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে ছিল। এবার পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। দুই বা ততোধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে আগে লটারির মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হতো। সংশোধনীর মাধ্যমে সেই নিয়ম বাতিল করে পুনঃভোটের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সমান ভোটের ক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার বিষয়টি লিখিতভাবে কমিশনকে জানাবেন, এরপর কমিশন পুনরায় ভোট গ্রহণের নির্দেশ দেবে।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আরপিও সংশোধনের বিষয়টি এখনও আলোচনাধীন। অনেকগুলো প্রস্তাব এসেছে। সবকিছু চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।’

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর