Logo

জাতীয়

পরিকল্পিত অস্থিরতায় নির্বাচন পেছানোর টার্গেট!

চাঁদাবাজি, খুন ও ছিনতাইয়ে বাড়ছে উদ্বেগ

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৫, ২১:৫৩

পরিকল্পিত অস্থিরতায় নির্বাচন পেছানোর টার্গেট!

প্রতীকী ছবি (এআই দিয়ে তৈরি)

সারাদেশজুড়ে চাঁদাবাজি, খুন ও ছিনতাইয়ের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই গত ছয় মাসে খুন হয়েছে অন্তত ১২১ জন। গেলো এক মাসেই চাঁদাবাজির অভিযোগে মহানগর এলাকায় দায়ের হয়েছে ৫৯টি মামলা। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা স্বাভাবিক নয়; বরং দেশে পরিকল্পিত অস্থিরতা তৈরির মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতেই সক্রিয় হয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

সম্প্রতি গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা দাবি করে পাঁচ যুবক। দ্বিতীয় কিস্তি তুলতে এসে ধরা পড়ে তারা। ধৃতদের একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা বলে জানা গেছে। তদন্তে উঠে আসে, তারা একাধিকবার চাঁদা আদায় করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও দাবির পরিকল্পনা ছিল।

পুলিশ বলছে, রাজনৈতিক পরিচয় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাজধানীতে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজির এক নতুন সংস্কৃতি। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজরা দল বা আন্দোলনের পরিচয়ে ভয় দেখায়, কিন্তু পুলিশ তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে হারিয়ে যাওয়া সরকারি অস্ত্র। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯৮টি সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র লুট বা হারিয়ে গেছে। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ১ হাজার ২৩৮টি, এখনও বেহাত রয়েছে ৬৬০টি অস্ত্র। ধারণা করা হচ্ছে, এই অস্ত্রগুলোই বিভিন্ন খুন, ছিনতাই ও চাঁদাবাজিতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

রাজধানীতে গত ৬ মাসে যে ১২১টি খুনের ঘটনা ঘটেছে, তার অনেকগুলোতেই গুলি চালানোর কথা জানা গেছে। প্রশ্ন উঠেছে— এসব অস্ত্র কোথা থেকে আসছে?

ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। রাজধানীর অপরাধের হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল।’

তবে বাস্তব চিত্র তা বলছে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশ্লেষক ও সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘যদি নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা ছড়ায়, তবে তা নির্বাচনে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে এই অস্থিরতা পরিকল্পিতভাবেই তৈরি করা হতে পারে।’

বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এখনই নিরপেক্ষ ও কঠোর অভিযানে নামতে হবে। বেহাত অস্ত্র উদ্ধার, চাঁদাবাজ চক্র দমন ও রাজনৈতিক পরিচয়ে অপরাধ করে যেন কেউ ছাড় না পায়— এই নীতিতে অটল থাকতে হবে প্রশাসনকে।

তবে পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দিকেই যাচ্ছে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরি করে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করছে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ড. আব্দুল্লাহ মো. তাহের সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐক্যমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে একটি ষড়যন্ত্র চলছে।’ যদিও জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আপত্তি নেই বলেই জানায়।

বিএনপির পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ উঠে এসেছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘যদি আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো যায়, তবে কেউ না কেউ এর রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে পারে।’

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের মাধ্যমে লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। উদ্ধার করা হয়েছে বেশিরভাগ অস্ত্র। বাকি অস্ত্র উদ্ধারেও নিয়মিত যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’

তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— অপরাধ বাড়ার এই ধারায় কে লাভবান হচ্ছে? কোন পক্ষ কি চাইছে পরিকল্পিত অস্থিরতায় নির্বাচন পেছাতে?

এনএমএম/এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সংসদ নির্বাচন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর