Logo

জাতীয়

সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ : কোথাও উল্লাস কোথাও ক্ষোভ

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১২:১৫

সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ : কোথাও উল্লাস কোথাও ক্ষোভ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাব করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী ‘ছোটখাটো পরিবর্তন’ করা হয়েছে, তবে খসড়া প্রকাশের পরই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কোথাও বিক্ষোভ-মিছিল, আবার কোথাও দেখা গেছে আনন্দ উদযাপন।

ইসির খসড়া অনুযায়ী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, সিলেট, সিরাজগঞ্জসহ ১৪টি জেলার মোট ৪০টি আসনে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও খসড়ায় কুমিল্লা-৯ আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হলেও তা তালিকায় উল্লেখ নেই। পরিবর্তনের আওতায় গাজীপুরে একটি আসন বেড়ে মোট ছয়টি হয়েছে, আর বাগেরহাটে একটি আসন কমিয়ে তিনটি করা হয়েছে।

সীমানা পরিবর্তনের খসড়ায় যে আসনগুলো রয়েছে 
পঞ্চগড়-১ ও ২, রংপুর-৩, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, বাগেরহাট-২ ও ৩, সাতক্ষীরা-৩ ও ৪, শরীয়তপুর-২ ও ৩, ঢাকা-২, ৩, ৭, ১০, ১৪ ও ১৯, গাজীপুর- ১, ২, ৩, ৫ ও ৬, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫, সিলেট-১ ও ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩, কুমিল্লা-১, ২, ৯, ১০, ১১, নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫ এবং চট্টগ্রাম-৭ ও ৮।

প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান 
বাগেরহাট : চারটি আসন থেকে একটিকে বাদ দিয়ে তিনটি করার প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ স্থানীয় রাজনীতিকরা। বাগেরহাট-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী কাজী মনিরুজ্জামান মনির প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে আপত্তি জানান। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, কেউ আইনি পদক্ষেপ নিলে নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

কুমিল্লা : ১১টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে সীমানা পরিবর্তনের প্রতিবাদে শুরু হয়েছে সমালোচনা। বিএনপি নেতারা একে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। কুমিল্লা-১০ আসনের সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, সদর দক্ষিণ উপজেলার বিভাজন ‘জনগণের সঙ্গে জুলুম’। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ৮ আগস্ট কমিশনের সামনে মানববন্ধন ও প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গাজীপুর : নতুন আসন যুক্ত হওয়ায় উল্লাস বিরাজ করছে। গাজীপুর-৬ আসন তৈরির খবরে স্থানীয় রাজনীতিকরা আনন্দ মিছিল করেছেন। তারা বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত গাজীপুরবাসীর জন্য সুবিচার’।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ-১ ও ২ আসনের কিছু অংশ পুনর্বিন্যাস করে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করায় অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় নেতারা একে ‘বাস্তবতা বিবেচনায় সঠিক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।

বিশেষজ্ঞ মত
স্থানীয় সরকার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মোতাহার হোসেন জানান,  ‘সংসদীয় আসন পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট একটা কাঠামো রয়েছে। সে কাঠামো অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রস্তাব গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন আসন সীমানা নির্ধারণ করে। 

সংসদীয় আসনের এমন বড় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন একই আসনে থাকা একটি উপজেলা বা ইউনিয়ন অন্য আরেকটি সংসদীয় আসনে ভাগ হয়ে পড়লে নাগরিক সেবা বিঘ্নিত হতে পারে এবং রাজনৈতিক বিভাজনের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই সবদিক বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।’

নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা 
নির্বাচন কমিশনার ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিটির প্রধান মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, ৬৪ জেলার আসনপ্রতি গড় ভোটার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০। গাজীপুরে জনসংখ্যা ও ভোটার বাড়ায় একটি আসন যুক্ত করা হয়েছে, আর বাগেরহাটে হ্রাস পেয়েছে। বাকি জেলাগুলোর আসনের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। ৩৯টি আসনে অ্যাডজাস্টমেন্ট রয়েছে।

সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি জানান, সংবিধান অনুযায়ী সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের এখতিয়ার ইসির। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের সীমানা নির্ধারণে ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ জুলাই সীমানা নির্ধারণে ভূগোলবিদ, নগরবিদ, পরিসংখ্যানবিদসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ৯ সদস্যের বিশেষায়িত কারিগরি কমিটি করা হয়। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ৬৪ জেলার ৩০০ আসনের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করে ৪২টি আসনের সীমানায় পরিবর্তনের প্রস্তাব করে কমিটি। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে ইসি ৩৯টি আসনের সীমানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করে। 

আপত্তির সুযোগ
এই খসড়া তালিকার বিরুদ্ধে ১০ আগস্ট পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ, দাবি ও আপত্তি জানানো যাবে। পরে শুনানি শেষে কমিশন চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে।

এসআইবি/এমএইচএস



Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর