Logo

জাতীয়

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের’ মাধ্যমে সরকার পতনের বর্ষপূর্তি আজ

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ০০:১৫

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের’ মাধ্যমে সরকার পতনের বর্ষপূর্তি আজ

ছবি : সংগৃহীত

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট— বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন দীর্ঘসময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় সূচিত হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত গণআন্দোলন গতি পায় দেশের সর্বস্তরের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে। ‘দমন-পীড়ন’ সত্ত্বেও বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে, যার পরিণতিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে ও একটি অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়।

কোটা সংস্কার থেকে রাজনৈতিক রূপান্তর
২০২৪ সালের জুনে হাইকোর্টের একটি রায়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন এবং দাবি জানান মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও সমান সুযোগের। আন্দোলনের প্রাথমিক ধাপেই সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘আন্দোলনকারীদের’ সংঘর্ষে বহু শিক্ষার্থী হতাহত হন। দ্রুতই এই আন্দোলন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। 

জুলাই আন্দোলন এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা
১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ আন্দোলন ক্রমশ গণআন্দোলনের রূপ নেয়। মাসজুড়ে উত্তপ্ত থাকে রাজপথ। ২২ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেন, ‘শেখ হাসিনা পালায় না।’ কিন্তু কথার মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায়, ৫ আগস্টে তাকে দেশ ছাড়তে হয়। ৩ ও ৪ আগস্ট রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। সরকারের ‘শক্তি প্রদর্শনে’ চালানো ‘দমন-পীড়নে’ শতাধিক মানুষ নিহত হন। এ সময় ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব ‘৩৬ জুলাই’ ঘোষণার মাধ্যমে জানিয়ে দেন, ‘জুলাই শেষ হবে না, শেখ হাসিনার পতন ছাড়া।’ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা ব্যর্থ হলে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের সংবাদ সামনে আসে। সেদিন বিকেল ৪টায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর নিশ্চিত করেন।

৫ আগস্ট : এক বাঁকবদলের দিন
সকাল থেকেই রাজধানীর প্রবেশপথে মানুষ জড়ো হতে শুরু করে। কারফিউ, বাধা ও নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেও ঢাকায় প্রবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ, ফার্মগেট, আগারগাঁও, যাত্রাবাড়ীসহ নানা মোড়ে জমে ওঠে বিক্ষোভ মিছিল। দুপুরের দিকে সরকারের পদত্যাগের ঘোষণার পর রাজপথজুড়ে বিরাজ করে এক ভিন্ন আবহ। অনেকেই প্রবেশ করেন গণভবন ও সরকারি বিভিন্ন ভবনে— কেউ চেয়ারে বসে ছবি তুলেছেন, কেউ পতাকা উড়িয়েছেন।

বিক্ষুব্ধ জনতা গণভবনে প্রবেশ করে। কেউ চেয়ারে বসে ছবি তোলে, কেউ পতাকা ওড়ায়। সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারি ভবনগুলো যেন হয়ে ওঠে ‘গণউদ্বোধনের’ প্রতীক। এই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই গণজাগরণকে স্বাগত জানায়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন
৫ আগস্টের ঘটনা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমে। এর পরপরই জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন সংস্থা স্বতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক পরিসরে সমস্যার সমাধান খোঁজার আহ্বান জানায়। ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনমুখী প্রস্তুতির ঘোষণা দেয়।

আত্মত্যাগ ও শোকের স্মারক
জাতিসংঘের তথ্যমতে, আগস্টের ওই সময়কালীন সংঘর্ষে প্রাণ হারান প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন, আহত হন ২০ হাজারের বেশি। আন্দোলনের পথযাত্রায় অনেকেই হারিয়েছেন পরিবার-পরিজন। এদের স্মরণে বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ, আয়োজিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধানুষ্ঠান।

বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা ও প্রত্যয়ের প্রকাশ
আজ ৫ আগস্ট— ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পূর্তি। এই দিনটি স্মরণে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে শোক ও শ্রদ্ধার নানা কর্মসূচি। শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা, নাগরিক সমাবেশ, সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং নানা ভাবগম্ভীরতা ঘিরে উদযাপিত হচ্ছে দিনটি। অনেকের কাছে এই দিনটি শুধুই একটি ইতিহাস নয়, বরং এক নতুন পথচলার প্রেরণা। এই দিনেই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এ দিন জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।

এনএমএম/এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জুলাই অভ্যুত্থান

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর