
ছবি : সংগৃহীত
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের এক বছর আজ। মাঝের পুরো সময়টা জুড়েই ছিল আশা ও হতাশার মিশ্র যাত্রা। গত বছরের এই দিনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে জাতি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছিল।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার (৪ আগস্ট) রাতে বলেছেন, জুলাই আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখার সাহস দিয়েছে—দিয়েছে একটি ন্যায় ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন।
তবে এই স্বপ্ন বাস্তবে কতটা রূপ নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা। চিন্তক, গবেষক ও গণবুদ্ধিজীবী ড. সলিমুল্লাহ খাঁন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিপ্লব আপস করেছে।
তার মতে, কাঠামোগত পরিবর্তনের কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও জুলাই গণহত্যার বিচার, অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসন, কিংবা শিক্ষানীতির সংস্কারের মতো মৌলিক দাবি এখনও বাস্তবায়নের বাইরে। জাতিগতভাবে জুলাই বিপ্লবের ফলে প্রাপ্তির খাতায় এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, ১৬ বছরের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অবসান, নতুন সরকার ও সংস্কার কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে কাঠামোগত পরিবর্তনের সূচনা, নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে আলোচনা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের ধারণা, মুক্ত চিন্তা ও বাক-স্বাধীনতার স্বস্তি, সীমিত পরিসরে হলেও নাগরিক কণ্ঠ উন্মুক্ত।
তবে এখনো অপ্রাপ্তির খাতায় রয়ে গেছে, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া। নিহতদের সংখ্যা ১৪০০ ছাড়ালেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি বিচার। মূল দাবির বাস্তবায়নে স্থবিরতা, শিক্ষানীতি, স্থানীয় শাসন, অর্থনৈতিক সাম্য এখনো আলাপ পর্যায়ে। নেতৃত্ব ও সংগঠনের দুর্বলতা, ছাত্রনেতারা সরকারের অংশ হলেও বাস্তব ক্ষমতা সীমিত। প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ঘাটতি, সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো অনুপস্থিত।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, জাতির হাজারো শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
আর ড. সলিমুল্লাহ খাঁনের মতে, জুলাই বিপ্লব এখনও অসম্পূর্ণ। বিচার ও কাঠামোগত রূপান্তর ছাড়া এটি টিকবে না।
তিনি বলেন, এক বছর পর জাতি একটি মোড় ঘুরেছে ঠিকই, কিন্তু সামনে যে গন্তব্য ছিল, তা এখনো বহু দূর। অন্তর্নিহিত সংকট ও নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতার সামনে কেবল পরীক্ষা দিতে শুরু করেছে বিপ্লবের চেতনা।
এনএমএম/এএ