জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি ১ বছরেও!

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৫৪

ছবি : সংগৃহীত
গত বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে উদ্ভূত ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। সরকার বলছে, আন্দোলনে নিহত হয়েছেন ৮৪৪ জন। অন্যদিকে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের হিসাব অনুযায়ী, এই সংখ্যা প্রায় ১৪০০ জনের মতো।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিবিসি বাংলা প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে, জাতিসংঘের বরাতে বলা হয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগই গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এবং নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু।
সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নিহতদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রথমে প্রকাশিত গেজেটে ৮৩৪ জনের নাম থাকলেও পরে তা সংশোধন করে ৮৪৪ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়। নিহতদের ‘শহীদ’ হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার।
তবে সরকারি গেজেটে থাকা নাম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী বলেন, ‘কয়েকটি নাম দুইবার এসেছে, কেউ কেউ অন্য কারণে নিহত হলেও গেজেটে ঢুকে পড়েছে। যাচাই–বাছাইয়ের পর ১৫ থেকে ১৬ জনের নাম বাতিল হতে পারে।’ অর্থাৎ, সরকারি হিসাবে সংখ্যা আরও কমতে পারে।
জাতিসংঘের সঙ্গে সরকারি তালিকায় এত বড় পার্থক্যের কারণ হিসেবে সরকার বলছে, জাতিসংঘ হয়তো পুলিশ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, এমনকি রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত সাধারণ নাগরিকদেরও যুক্ত করেছে। অপর দিকে সরকারি গেজেটে উঠেছে শুধুমাত্র পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে নিহতদের নাম।
এদিকে, ঢাকার রায়েরবাজারে ১১৪টি বেওয়ারিশ মরদেহ দাফন করার তথ্যও সামনে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের কেউ কেউ আন্দোলনে নিহত হলেও পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় সরকারি তালিকায় আসেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তালিকা তৈরিতে শৃঙ্খলার অভাব, সময়ক্ষেপণ ও রাজনৈতিক চাপের কারণে নির্ভুল সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না।
গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এটা এলাকাভিত্তিক সুষ্ঠু তদন্তে করলে সাত দিনের বেশি সময় লাগার কথা না। ক্ষতিপূরণ ও চাকরির সুযোগ থাকায় তালিকায় ভুয়া নাম ঢুকে যাওয়ার শঙ্কাও আছে।’
সরকারি গেজেটে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের হাতে নিহত আন্দোলনকারীদের নাম রাখা হয়েছে বলে জানায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তবে এখনও জাতিসংঘের তালিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা নেই। জাতিসংঘের দাবি অনুযায়ী, ১৪০০ জন নিহত, ১১ হাজার ৭০০ জন আটক এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছিলেন।
এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তালিকা এখনো জাতির সামনে আসেনি।
এমএইচএস