Logo

জাতীয়

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে ব্যর্থতা ও সফলতা কোথায়?

Icon

বিবিসি বাংলা

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১৫:২৬

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে ব্যর্থতা ও সফলতা কোথায়?

বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছরের মূল্যায়নে প্রশংসার তুলনায় সমালোচনার দিকগুলোই বেশি সামনে এসেছে।

সরকারের এক বছরের সফলতা-ব্যর্থতার আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে অর্থনীতি, বিচার সংস্কার এবং মব ভায়োলেন্সের মতো ইস্যুগুলো।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা কী এই প্রশ্নে অর্থনীতিতে ব্যাংক, বাজার, রিজার্ভসহ সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সরকার কৃতিত্ব পাচ্ছে।

তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির, মব ভায়োলেন্স, মৌলিক সংস্কার এমনকি বিচার প্রক্রিয়ার কিছু বিষয়ে সরকারের ভূমিকার নানা সমালোচনা করছেন পর্যবেক্ষক এবং বিশ্লেষকরা।

পাঁচই আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর আন্দোলনকারী সকল পক্ষের সমর্থনে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।

অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের সামনে সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন অনুষ্ঠান এই তিনটি বড় দায়িত্ব ছিল।

এছাড়া ভঙ্গুর অবস্থা থেকে দেশের অর্থনীতিকে সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল সরকারের সামনে।

অর্থনীতির স্থিতিশীলতা
অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনা এবং বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রশংসা রয়েছে। তবে বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়ন না হওয়ায় দুর্বলতার কথাও সামনে আনছেন অর্থনীতিবিদরা।

সরকারের এক বছরের মূল্যায়ন করে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বিবিসিকে বলেন, যে অর্থনীতি এ সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিল সেটা তো খুবই জটিল অবস্থার ভেতরে ছিল।

‘অর্থনীতিতে সামষ্টিক স্থিতিশীলতার একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে ছিল সরকারের পক্ষ থেকে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা, টাকার পতন আটকানো, সুদের হার একটা অবস্থায় রাখা, বাজেট ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদি। কাজের ভেতরে সাফল্য এসেছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই।’

তবে অর্থনীতির এই সাফল্যটা মূলত হয়েছে বাইরের খাতে বা এক্সটার্নাল সেক্টরে। অর্থাৎ রেমিটেন্স বেড়েছে, রপ্তানি চালু আছে, আমদানি কম হওয়ার ফলে বৈদেশিক লেনদেনে একটা ভারসাম্য এসেছে এবং সরকার অনেক পুরোনো বিদেশি ঋণ শোধ করেছে। এই সময়কালে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সে অর্থে কমেনি বলেও মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তবে তার দৃষ্টিতে কর আহরণ বা আরও কার্যকরভাবে সরকারের বিনিয়োগ বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অনেক বড় দুর্বলতা রয়ে গেছে

‘সবচেয়ে বড় দুর্বলতা রয়ে গেছে আমরা ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ চালু করতে পারি নাই। যে কর্মসংস্থানের আকাঙ্ক্ষা থেকে ছাত্র গণঅভ্যুত্থান হলো সেই কর্মসংস্থানের জায়গাটা দুর্বল রয়ে গেল।’

অর্থনীতিতে সরকারের সমস্যার জায়গা তুলে ধরে তিনি বলছেন, সরকার অনেক সংস্কারের কথা বলে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মধ্যমেয়াদী নীতিকাঠামো দেওয়া হয়নি অর্থনীতির।

‘সফল হয়েছে কি ব্যর্থ হয়েছে এটা কোনো লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমি মূল্যায়ন করবো, এটা পারছি না। আমি যেটা পারি সেটা হলো যে আগে কী ছিল, এখন কী হয়েছে। সেহেতু আগের সাথে পরের তুলনা করে আমরা দেখি যে একটা মিশ্র পরিস্থিতি এখানে আছে।’

বিচার ও সংস্কার
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে বড় দায়িত্ব ছিল 'জুলাই হত্যা'র বিচার এবং প্রশাসন থেকে শুরু করে নির্বাচন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ বাহিনীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু সংস্কার করা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন তিনটি ক্ষেত্রেই কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।

জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে সরকার একটি রূপরেখা দিয়েছে। তবে বিচার ও সংস্কার ইস্যুতে অগ্রগতির বেলায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

গত এক বছরে বিচারব্যবস্থা প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ, এ নিয়ে বিতর্কের কোনও সুযোগ নাই।’

কারণ হিসেবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ঢালাও মামলার ব্যাপারে শুরু থেকেই তাদের উদ্বেগ রয়েছে। এটি কোনো দেশেই বিচার প্রক্রিয়ার জন্য সুষ্ঠু না বলে তারা মনে করেন।

এ বিষয়ে সরকারের একটা অবস্থান আছে যে মামলাগুলো সরকার করে না, সে কথা উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "এটা ঠিক। কিন্তু এটাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিকারের উপায় তো সরকারকেই বের করতে হবে। সেদিকে আমরা তেমন কিছু দেখি না।"

‘কতটুকু বিচার, কতটুকু প্রতিশোধ এই প্রশ্নটা ওঠা খুবই যৌক্তিক, যেভাবে চলছে। অন্যদিক থেকে আবার বিচারকেন্দ্রিক অনিয়ম-দুর্নীতি–– যেমন মামলা বাণিজ্য, গ্রেফতার বাণিজ্য, জামিন বাণিজ্য এই বিষয়গুলো মোটামুটি এক ধরনের স্বাভাবিকতায় রূপান্তর করা হয়েছে।’

অভ্যুত্থানপরবর্তী বর্তমান প্রশাসনেও দলীয়করণ চলছে বলে সমালোচনা আছে। বলা হচ্ছে, এক দলের জায়গায় অন্য দল এসে বসেছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, এই দলীকরণ হয়েছে সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত।

‘যার ফলে একটি সুশাসিত, জবাবদিহিমূলক প্রশাসন বা আমলাতন্ত্র বা সরকার পরিচালনা ব্যবস্থা সেইটির পথে যে অগ্রগতির সম্ভাবনা ছিল সেটি আমরা অর্জন করতে পারিনি বা রাষ্ট্র সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

ইফতেখারুজ্জামান সরকার গঠিত দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ছিলেন এছাড়া জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনেরও সদস্য।

তিনি বলছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে যে পাঁচটি সংস্কার কমিশন, সে কমিশনগুলো যথাযথ সময়ে রিপোর্ট দিয়েছে। রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আশু করণীয় প্রস্তাবনাগুলো জমা দিয়েছে সরকারের কাছে। কিন্তু সেগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা নাই, কোনো অগ্রগতি নাই।

তার ভাষায়, দুদক সংস্কার কমিশনসহ প্রথম দফার ছয়টি কমিশনের মধ্যে যে পাঁচটি কমিশনের আশু করণীয় প্রস্তাবগুলো এসেছে সেগুলোর ভাগ্যে কী হয়েছে এ প্রশ্নের জবাব কিন্তু সরকারের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। যদিও সরকার বলছে 'পদক্ষেপ নিচ্ছি', কিন্তু বাস্তবে বলার মতো কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে পিক অ্যান্ড চুজ। যেমন প্রশাসনিক সংস্কারের ক্ষেত্রে কমিশনের শতাধিক সুপারিশ ছিল, তার মধ্যে থেকে দেড় ডজনের মতো সুপারিশ পিক করা হয়েছে; যেখানে প্রাধান্যটা যদি দেখি, একটা দৃষ্টান্ত হচ্ছে- টয়লেট পরিষ্কার রাখতে হবে। বাংলাদেশে প্রশাসন সংস্কারের যে মৌলিক যায়গাগুলো সেগুলো কোথায়?’ প্রশ্ন রাখেন ইফতেখারুজ্জামান।

আইন শৃঙ্খলার অবনতি ও ‘মব ভায়োলেন্স’
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গত এক বছরে সারাদেশে 'মব ভায়োলেন্স' নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে।

ঢাকার ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিহাসের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি মব সৃষ্টি করে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট হয়েছে।

‘মব’ সৃষ্টি করে বা লোকজন জড়ো হয়ে মানুষ পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বাংলাদেশে গত এক বছরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মব সৃষ্টি করে দুই হাজারের মতো শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে।

গত এক বছরে বাংলাদেশে মব সংস্কৃতি এবং এক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন।

তিনি বলেন, ‘সরকার বা সেনাবাহিনী বলছে যে মব ভায়োলেন্স টলারেট করবে না। কিন্তু কার্যত আমরা দেখতে পাচ্ছি যে মবের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এবং আমরা দেখেছি যে সরকার বিভিন্ন সময় একে বৈধতা দিয়েছে বলে মনে হয়েছে।’

‘যেমন অপারেশন ডেভিল, তার মাধ্যমে মব বৈধতা পেয়েছে। তারপরে তৌহিদি জনতা। তারপর আমরা দেখেছে প্রেসসচিব বলেছেন যে এটা একটা প্রেসার গ্রুপ। এই যে বিভিন্নভাবে মবকে বৈধতা দেওয়া, এইটাকে আমি মনে করি সরকারের জন্য একটা নেগেটিভ পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেছে। মব একটা আতঙ্কের জায়গা তৈরির ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে আমি মনে করি।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে গত এক বছরের পর্যবেক্ষণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে বলে উল্লেখ করে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি, ধর্ষণ, লুটপাট অরাজকতার এবং আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতাসহ গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা আশঙ্কাজনক বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

মব নিয়ে সমালোচনার মুখে বিভিন্ন সময় সরকারের উপদেষ্টারা বলেছেন, মব ভায়োলেন্সকে সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করে না, এমনকি এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জোবাইদা নাসরীন বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত এক বছরে দলীয় সমর্থন-সহযোগিতা সবকিছু পাওয়ার পরেও বিভিন্ন বিষয়ে সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে এবং জনগণের মতো করে হ্যান্ডেল করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

‘আমি বলব যে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে ব্যর্থ হয়েছে। আমি মনে করি যে মানুষের ভয়ের যে সংস্কৃতি সেটা থেকে মানুষকে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এছাড়া শেখ হাসিনার শাসনের যে কর্তৃত্ববাদী শাসনের ছায়া সেটা থেকে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উন্নতির জন্য সরকার সেনাবাহিনীকে মেজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মাঠে রেখেছে। সরকারের দাবি, পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সরকারের চেষ্টার ঘাটতি নেই।

যে কোনো একটা অভ্যুত্থানের পরে নানারকম পটপরিবর্তন হয়। সেক্ষেত্রে নানারকম চ্যালেঞ্জ থাকে। এক বছর কিন্তু সেই পট পরিবর্তন এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট সময় বলে মনে করেন জোবাইদা নাসরীন।

তার কথায়, ‘অনেকে বলছেন যে এক বছরে অনেককিছু বোঝা যাবে না, কিন্তু কিছু জায়গায় কিন্তু স্পষ্টই বোঝা যাবে। সেটা হলো সরকার কোন মতাদর্শকে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গ্রহণ করছে।’

জোবাইদা নাসরীন বলছেন, সরকার জনগণের মতামতকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, সরকার তার ইতিহাসের দিকে কতটা তাকাচ্ছে, সরকার মানুষের সমালোচনাকে কতটা আমলে নিচ্ছে এটা গুরুত্বপূর্ণ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতেও একটা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

‘অনেকের কাছে গুরুত্বহীন, কিন্তু আমি বলবো এই সরকারের একটা বড় ব্যর্থতা হলো বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ, সেটাকে এ সরকারের বিভিন্ন ফোরাম থেকে আঘাত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধকে নাই করে দেওয়া, তার বিরুদ্ধে অবস্থান এবং মুক্তিযুদ্ধকে হেনস্থা করা, মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের সঙ্গে তুলনা করার যে একটা মানসিকতা তৈরি হচ্ছে, সেটা আমি মনে করি যে ঐতিহাসিকভাবে একটা হুমকির জায়গা,’ বলেন জোবাইদা নাসরীন

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
বাংলাদেশে অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের একটা বড় সমালোচনার জায়গা ছিল মানুষের মত প্রকাশে স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের জোরালো অভিযোগ।

অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এসেও দেখা যাচ্ছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে বড় অস্বস্তি।

গত এক বছরে দুই শতাধিক গণমাধ্যমকর্মীকে ঢালাওভাবে হত্যা মামলায় জড়ানো বা আসামি করা হয়েছে। জোরপূর্বক চাকরিচ্যুত করার ঘটনা ঘটেছে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান দখলের মতো অভিযোগও সামনে এসেছে।

এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল থেকে শুরু করে অনেককে চাকরিচ্যুত করা বা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেওয়া বা নেতৃত্বের পরিবর্তন করা, এডিটোরিয়াল চেঞ্জ করা এ ধরনের কাজগুলো কিন্তু সরকারের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অংশগ্রহণে হয়েছে, যেটি একটা বিতর্কিত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।’

গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকারের এক বছরের মূল্যায়নে সুশাসন, দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

দলীয়করণের নতুন রূপ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বজনপ্রীতি, সুবিধা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ এড়াতে পারেনি অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সার্বিকভাবে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের এক বছরে ব্যর্থতার দায় প্রসঙ্গে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটি সরকারের যেমন ব্যর্থতা, রাজনৈতিক অঙ্গনের ব্যর্থতা, রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ব্যর্থতা, আমলাতান্ত্রিক শক্তির ব্যর্থতা।’

‘সার্বিকভাবে সরকারকে তো দায় নিতেই হবে। সরকারের নিজের অনেক সিদ্ধান্ত কিন্তু বিতর্কিত হয়েছে। সেটার মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বার্থের দ্বন্দ্ব-প্রসূত সিদ্ধান্ত বেশ কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং আমাদের পর্যবেক্ষণে আমরা দেখতে পেয়েছি।’

‘অর্থাৎ সেখানে দায়টা, দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার যে দায়িত্বটা, যে ধরনের মানসিকতা বা চর্চাটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেয়েছিল, সেখানে তাদের নিজেদের ব্যর্থতাটা আমরা দেখতে পেলাম।’

  • এমআই 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থান

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর