Logo

জাতীয়

নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে চলছে ভোটের প্রস্তুতি

নুর মোহাম্মদ মিঠু

নুর মোহাম্মদ মিঠু

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৫, ২০:৪১

নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে চলছে ভোটের প্রস্তুতি

গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর (এআই দিয়ে তৈরি)

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নজিরবিহীন প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। সেনা, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার— সব মিলিয়ে মাঠে থাকবে প্রায় ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এর মধ্যে ৮০ হাজার সেনা সদস্য, তিন লাখ পুলিশ, ৫০ হাজার বিজিবি, ২০ হাজার র‌্যাব ও ৩ লাখেরও বেশি আনসার সদস্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে কাজ করবেন। তবে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে কৌশলগত পয়েন্টে, প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে থাকবেন সশস্ত্র আনসার। শুধু পুলিশের জন্যই থাকবে ৪০ হাজার বডিওয়্যার ক্যামেরা, যা থেকে ভোটকেন্দ্রের রিয়েল-টাইম পরিস্থিতি মনিটর করা হবে। তবুও নির্বাচনী সহিংসতার আশঙ্কা কাটছে না। বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীদের মতে, সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে ভোট আয়োজনের জন্য মাঠের বাস্তবতা এখনো অনুকূল নয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ১১টি খুন হচ্ছে। ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির ঘটনাও থেমে নেই। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমও সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর বাহিনীকে শতভাগ কার্যকর করতে এখনো লড়াই চালাতে হচ্ছে। তিনি বলেছেন, ট্রমাটিক অভিজ্ঞতার পর ফোর্সটাকে গুছিয়ে আনাটাও কঠিন। তবুও পুরোদমেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য বডিওয়্যার ক্যামেরা ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার মাধ্যমে সরাসরি আপডেট পাওয়া যাবে। সেনাবাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি প্রিজাইডিং অফিসারের সুরক্ষায় আনসার সদস্যও দায়িত্ব পালন করবেন।

তবে মাঠের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের তথ্যমতে, গত ১১ মাসে দেশে ৪৭১টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২১ জন এবং আহত ৫ হাজারের বেশি মানুষ। সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী এমনকি সাধারণ মানুষও হামলার শিকার হয়েছেন।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নির্বাচনী পরিস্থিতি এখনো অনুকূলে নেই। মিডফোর্টের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগ, গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ড এবং ছিনতাই-চাঁদাবাজির প্রবণতা প্রমাণ করছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক।

তিনি বলেন, দুর্বল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। ফলে নির্বাচনী পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

এদিকে গত এক বছরে আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার পরিস্থিতির যেখানে উন্নতি হয়নি, সেখানে নির্বাচনের সময় সহিংসতা আরও বাড়তে পারে বলে বাংলাদেশের খবরকে বলছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর সব রাজনৈতিক দলই মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে, এতে সংঘাতের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যাবে।

এদিকে কেরাণীগঞ্জের তেঘরিয়ায় একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই সেনাসহ সব বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে, যাতে এসব অস্ত্র দিয়ে অপরাধ ঘটানো না যায়।

সব মিলিয়ে, নির্বাচনী নিরাপত্তা পরিকল্পনা যতই বড় হোক, মাঠের বাস্তবতায় রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এ নিয়ে জনমনেও উদ্বেগ কাজ করছে। মাঠ পর্যায়ের এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, যদি একই সময়ে একাধিক এলাকায় সংঘাত শুরু হয়, সব নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবায়ন করাটাই আসল চ্যালেঞ্জ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কেবল বাহিনী মোতায়েন নয়, কার্যকর ও নিরপেক্ষ আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রমাণ দিতে হবে সরকারকে। তা না হলে ফেব্রুয়ারির ভোটযুদ্ধ আরও উত্তপ্ত হতে পারে।

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

সংসদ নির্বাচন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর