-689b53c72a311.jpg)
জুলাই অভ্যুত্থানে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুর্নীতির অভিযোগে বিপুল সম্পদ ক্রোক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত দেশে ও বিদেশে শত শত কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দ করেছে সংস্থাটি। তবে জনবল সংকট, প্রশাসনিক জটিলতা এবং রিসিভার নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে জব্দ করা বিপুল সম্পদের ব্যবস্থাপনায় সংস্থাটিতে দেখা দিয়েছে চরম অচলাবস্থা।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, গত নয় মাসে দেশে ১ হাজার ৪৫৩ একর জমি, ৭২টি বাড়ি, ১৪০টি ফ্ল্যাট, সাতটি বহুতল ভবন, ৪০টি প্লট, ১০টি দোকান, ২৩৩টি গাড়ি, একটি ট্রাক, তিনটি জাহাজ, একটি অফিস স্পেস ও একটি পার্ক ক্রোক করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশে ৫৮২টি বাণিজ্যিক স্পেস জব্দ করা হয়েছে। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৪ হাজার ৯৬০টি ব্যাংক হিসাব, ১৭টি সঞ্চয়পত্র, বিপুল পরিমাণ শেয়ার, ১৯টি বিও হিসাব, তিনটি বীমা পলিসি, নগদ অর্থ, সোনা ও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এসব সম্পদের আর্থিক মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকার সমান হলেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাষ্ট্র এখন এসব থেকে কাঙ্ক্ষিত আয় পাচ্ছে না।
দুদক সূত্র জানায়, দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটে বর্তমানে কর্মী আছে মাত্র ১০ জনের মতো— একজন পরিচালক, দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক, একজন উপসহকারী পরিচালক, একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, একজন অফিস সহায়ক, দুজন এএসআই এবং একজন পিএ। এত অল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে এ বিপুল সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে জব্দকৃত ২৩৩টি গাড়ির মধ্যে অধিকাংশেরই এখনো রিসিভার নিয়োগ হয়নি। আবার যেসব গাড়িতে রিসিভার নিয়োগ হয়েছে, সেগুলোর অবস্থানও দুদকের কাছে স্পষ্ট নয়। উদাহরণস্বরূপ, গত ১৩ জানুয়ারি রিসিভার নিয়োগ পাওয়া একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-৩৫-৩৭০৭) এখনো উদ্ধারই করতে পারেনি দুদক।
গত এক বছরে সাবেক এক সংসদ সদস্যের জমি, ফ্ল্যাটসহ মোট ৪৫টি স্থাবর সম্পত্তি ও ১৬টি গাড়ি ক্রোক করা হয়েছিল। একইসঙ্গে ১৯টি ব্যাংক হিসাবে থাকা প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ও যৌথ মালিকানাধীন চারটি কোম্পানির ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়। কিন্তু ক্রোক করা গাড়িগুলোর অবস্থান নির্ধারণ ও আয় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়াও এখনও শুরু হয়নি বলে জানা গেছে।
দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রিসিভার নিয়োগ, আদালতের আদেশ গ্রহণ এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া এতটাই দীর্ঘ যে অনেক সময় ব্যাংকের অর্থ ও অন্যান্য অস্থাবর সম্পদ অপরাধীরা সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়। অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার আদেশের মেয়াদ সাধারণত ছয় থেকে সাত মাস, ফলে সময়মতো নবায়ন না হলে অপরাধীদের জন্য তা বড় সুবিধায় পরিণত হয়।
দুদকের বিধিমালায় (সংশোধিত, ২০১৯) স্পষ্টভাবে বলা আছে— স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক হলে সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সাব-রেজিস্ট্রারকে, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ম্যানেজারকে এবং শেয়ার বা স্টক ক্রোক হলে স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিকিউরিটিজ কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে। যানবাহনের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা পাঠিয়ে ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনুসরণ করা হয় না।
দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ক্রোক করা সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বাড়াতে দুদক বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়ার জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দ্রুত আদেশ কার্যকর করার ক্ষমতা না থাকলে এই উদ্যোগও কার্যকরভাবে ফল দেবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।